বর্তমানে অর্থনৈতিক লেনদেন ও কর সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হল প্যান কার্ড (Permanent Account Number)। এটি ভারতের আয়কর দপ্তর দ্বারা প্রদত্ত একটি ১০-অঙ্কের অ্যালফানিউমেরিক পরিচয়পত্র, যা করদাতার আর্থিক কর্মকাণ্ডের পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। শুধুমাত্র আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, গ্যাস কানেকশন নেওয়া কিংবা বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও এটি অপরিহার্য নথি হিসেবে বিবেচিত।
যদিও প্যান কার্ড পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া আগে বেশ দীর্ঘ ছিল, তবে বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কয়েক মিনিটেই আপনি ই-প্যান কার্ড পেতে পারেন। একদিকে যেমন রয়েছে ই-প্যানের দ্রুত ব্যবস্থা, অন্যদিকে চাইলে আপনি অনলাইন কিংবা অফলাইন মাধ্যমেও আবেদন করতে পারেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক প্যান কার্ড পাওয়ার সবকটি উপায় ও প্রক্রিয়া—
ই-প্যান কার্ডের জন্য আধার কার্ড থাকলেই মিলবে সুবিধা
যাঁদের আধার নম্বরের সঙ্গে মোবাইল নম্বর সংযুক্ত, তাঁরা সহজেই ই-প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এর জন্য করদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://www.incometax.gov.in -এ গিয়ে আবেদন করতে হবে।
ই-প্যানের আবেদন পদ্ধতি ধাপে ধাপে:
1. প্রথমে উল্লিখিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান।
2. হোমপেজে থাকা ‘Instant e-PAN’ বিভাগে ক্লিক করুন।
3. এরপর ‘Quick Links’ সেকশনে গিয়ে ‘New e-PAN’ অপশনটি বেছে নিন।
4. এরপর আধার নম্বর দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করুন।
5. OTP দিয়ে আধারচাই করুন।
6. এরপর আপনার আধার কার্ড থেকে প্রাক-ভর্তি তথ্য দেখানো হবে, যা যাচাই করে সাবমিট করুন।
7. কর দপ্তর আবেদনটি যাচাই করে ই-মেল ও SMS-এর মাধ্যমে ই-প্যান ডিটেইলস পাঠিয়ে দেবে।
8. সেই লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে পারবেন আপনার প্যান কার্ড।
গুরুত্বপূর্ণ: কেবলমাত্র যাঁদের আধার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত, তাঁরাই এই প্রক্রিয়ায় ই-প্যান কার্ড পেতে পারেন।
অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন করতে চান?
যাঁদের ই-প্যানের যোগ্যতা নেই বা ফিজিকাল কার্ড পেতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া। আপনি NSDL (https://www.tin-nsdl.com) বা কর দপ্তরের ই-ফাইলিং পোর্টাল থেকে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইন প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ:
1. নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘Apply for New PAN’ অপশন নির্বাচন করুন।
2. আবেদনপত্রে নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা সহ সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
3. আপনার পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণ ও জন্মতারিখের প্রমাণপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন।
4. নির্দিষ্ট আবেদন ফি প্রদান করুন (ভারতের মধ্যে ₹৯৩+GST এবং বিদেশের ক্ষেত্রে ₹৮৬৪+GST)।
5. সাবমিট করার পরে একটি অ্যাকনলেজমেন্ট নম্বর পাবেন, যার মাধ্যমে আপনি আবেদন ট্র্যাক করতে পারবেন।
6. সফল যাচাইয়ের পরে, কার্ডটি পোস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠানো হবে।
অফলাইনে প্যান কার্ড পেতে চান?
ডিজিটাল ব্যবস্থার বাইরে গিয়েও আপনি প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এর জন্য নির্ধারিত ফর্ম (Form 49A) ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে।
অফলাইন পদ্ধতি অনুসরণ করুন
1. NSDL বা UTIITSL ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ৪৯এ ডাউনলোড করুন।
2. হাতে কলমে ফর্মটি পূরণ করে সই করুন।
3. সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্র (পরিচয়, ঠিকানা ও জন্মতারিখ প্রমাণ) যুক্ত করুন।
4. নিকটবর্তী প্যান পরিষেবা কেন্দ্রে ফর্ম ও কাগজপত্র জমা দিন।
5. আবেদন ফি প্রদান করুন।
6. যাচাইয়ের পর আপনার প্যান কার্ড পোস্টের মাধ্যমে আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
কেন জরুরি প্যান কার্ড?
প্যান কার্ডের প্রধান কাজ হল কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা। একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও প্যান নম্বরের মাধ্যমে একজন করদাতার সব ধরনের আর্থিক কার্যকলাপ ট্র্যাক করা সম্ভব। এটি কর ফাঁকি রোধে বড় ভূমিকা পালন করে।
পাশাপাশি, বড় আর্থিক লেনদেন যেমন ৫০ হাজার টাকার ওপরে ব্যাঙ্ক ডিপোজিট, গাড়ি বা সম্পত্তি কেনা, মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক। এমনকি সরকারি ভর্তুকির সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে প্যান কার্ডের প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র আয়কর দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি হয়ে উঠেছে একটি সার্বজনীন পরিচয়পত্র, যা একাধিক সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবার ভিত্তি। আপনি যদি এখনও প্যান কার্ড না করে থাকেন, তবে এখনই ই-প্যান বা অন্যান্য পদ্ধতিতে দ্রুত আবেদন করে নিন। কয়েক মিনিটেই আপনার মোবাইলে চলে আসবে ডিজিটাল প্যান কার্ড, আর চাহিদা অনুযায়ী কুরিয়ারে আসবে ফিজিকাল কার্ডও।