হোম লোনে স্বস্তি! ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে মুম্বই থেকে কলকাতা জুড়ে

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ভারতীয় গৃহঋণগ্রহীতাদের (Home Loan) জন্য বাড়ি কেনার সামর্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এই সময়ে রেপো রেট ১০০ বেসিস…

Home Loan Affordability Soars in Mumbai and Kolkata in 2025 After RBI Repo Rate Cut

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ভারতীয় গৃহঋণগ্রহীতাদের (Home Loan) জন্য বাড়ি কেনার সামর্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এই সময়ে রেপো রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর ফলে গৃহঋণের উপর সুদের হার হ্রাস পেয়েছে এবং এরই ফলশ্রুতিতে এই ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে বলে জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট পরামর্শদাতা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়া।

নাইট ফ্র্যাঙ্কের প্রকাশিত ‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি ইনডেক্স’ অনুযায়ী, ভারতের শীর্ষ আটটি শহরের মধ্যে আহমেদাবাদ সবচেয়ে সাশ্রয়ী হাউজিং বাজার হিসাবে উঠে এসেছে, যেখানে গড় আয়ের মাত্র ১৮ শতাংশ ব্যয় করলেই একজন গৃহক্রেতা একটি বাড়ির জন্য ঋণের EMI মেটাতে পারেন। এরপরেই রয়েছে পুনে (২২ শতাংশ) এবং কলকাতা (২৩ শতাংশ)।

   

অন্যদিকে, মুম্বই এখনও দেশের সবচেয়ে কম সাশ্রয়ী শহর হিসেবেই রয়ে গেলেও, সেখানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। ২০২৪ সালে যেখানে অ্যাফোর্ডেবিলিটি ইনডেক্স ছিল ৫০ শতাংশ, সেখানে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮ শতাংশে। এই প্রথমবারের মতো মুম্বই শহর ৫০ শতাংশের ‘আউটার থ্রেশহোল্ড’-এর নিচে নামলো, যা অ্যাফোর্ডেবিলিটির গুরুত্বপূর্ণ একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

ঐতিহাসিক পরিবর্তন মুম্বইতে:
নাইট ফ্র্যাঙ্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই ইনডেক্স চালু হওয়ার পর এই প্রথম মুম্বই শহর ৫০ শতাংশের নিচে নামলো, যা একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন। এতদিন মুম্বই সর্বদা এই সীমার উপরে ছিল। তবে হ্রাসপ্রাপ্ত গৃহঋণের সুদের হার শহরের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়েছে।” এই উন্নতি গৃহঋণগ্রহীতাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দিল্লিতে সামান্য অবনতি:
তবে, দিল্লি তথা এনসিআর (ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন)-এ সামান্য অবনতির ইঙ্গিত দিয়েছে রিপোর্টটি। ২০২৩ সালে যেখানে গড় পরিবারের আয়ের ২৭ শতাংশ ব্যয় করে একটি বাড়ি কেনা সম্ভব ছিল, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হল দিল্লিতে আবাসনের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়া, যা সুদের হারে ছাড়ের প্রভাবকে ম্লান করেছে।

ইএমআই-টু-ইনকাম অনুপাতই মূল সূচক:
নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার অ্যাফোর্ডেবিলিটি ইনডেক্স মূলত একটি পরিবারের গড় মাসিক আয়ের ভিত্তিতে গৃহঋণের মাসিক কিস্তির (EMI) অনুপাত হিসেব করে। এই ইনডেক্সের মাধ্যমে বোঝা যায়, একটি পরিবার তাদের মাসিক আয়ের কত শতাংশ একটি গড় মূল্যের বাড়ির EMI মেটাতে ব্যয় করছে।

Advertisements

শিশির বাজাজের বিশ্লেষণ:
নাইট ফ্র্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিশির বাজাজ বলেছেন, “যখন আয় বাড়ে এবং অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, তখন মানুষের আর্থিক আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এর ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, যেমন বাড়ি কেনার দিকে এগিয়ে আসে। RBI যে FY ২০২৬-এ ৬.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে এবং বর্তমান সুদের হার অনুকূল রয়েছে, তা গৃহঋণগ্রহীতাদের পক্ষে ইতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও বলেন, “এই পরিবেশে ২০২৫ সালে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহ ও সক্ষমতা উভয়ই বাড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

ভারতের স্থিতিশীল অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে:
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ভারত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির সুবিধা উপভোগ করছে। এর ফলে দেশের গৃহঋণগ্রহীতাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সুদের হার কম থাকার সুযোগে তারা আবাসনের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে, সামগ্রিকভাবে ভারতের আবাসন বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।

মহামারির পর সেরা সময়:
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মহামারি-পরবর্তী সময়ে এই মুহূর্তটিই সবচেয়ে ভালো অ্যাফোর্ডেবিলিটি পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষে, যখন RBI প্রথম রেপো রেট কাটের ঘোষণা দেয়নি, তখনকার তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি অনেক উন্নত। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ রেপো রেট কমানোর ঘোষণার পর থেকেই আবাসন বাজারে আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

সার্বিকভাবে বিচার করলে দেখা যায়, রেপো রেট কমানো এবং দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতির কারণে ভারতের আবাসন বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে মুম্বইয়ের মতো শহরে যেখানে অ্যাফোর্ডেবিলিটির উন্নতি দীর্ঘদিন পর প্রথমবার দেখা গেল, তা ভবিষ্যতে গৃহঋণ ও হাউজিং মার্কেটের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নাইট ফ্র্যাঙ্কের এই রিপোর্ট গৃহঋণগ্রহীতাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে এবং ২০২৫ সালকে আবাসন কেনার ক্ষেত্রে একটি সুবর্ণ সময় হিসেবে তুলে ধরেছে।