GST Tobacco Tax Hike India
নয়াদিল্লি: ভারতের তামাক সেবীরা এবার আরও বড় ধাক্কার মুখে। কারণ, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) কাউন্সিলের ৫৬তম বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সভাপতিত্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে, তামাকজাত পণ্যে করের বোঝা বেড়ে গেল ২৮ শতাংশ থেকে সরাসরি ৪০ শতাংশে। যদিও সিগারেটের ক্ষেত্রে এই বাড়তি কর কার্যকর হওয়ার চূড়ান্ত তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি, বাকি তামাকজাত দ্রব্যে এটি কার্যকর হবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে।
বর্তমানে একটি সাধারণ সিগারেটের দাম ধরা হয় প্রায় ১৯ টাকা, যেখানে ২৮ শতাংশ জিএসটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন হারে কর ৪০ শতাংশে পৌঁছনোর ফলে সেই একই সিগারেটের দাম দাঁড়াবে প্রায় ২১.৭০ টাকা। অর্থাৎ, একেকটি সিগারেটে গড়ে প্রায় ২ টাকা বেশি খরচ করতে হবে ধূমপায়ীদের।
দাম বাড়ছে সিগারেটের
ছোট সিগারেট বা বিড়ির মতো কম দামের পণ্যেও বাড়তি চাপ আসবে। যে সিগারেট এখন ১০ টাকায় পাওয়া যায়, তা নতুন হারে দাঁড়াবে প্রায় ১০.৯৪ টাকা, অর্থাৎ প্রায় ১ টাকা বাড়তি।
এর ফলে প্রতিদিন সিগারেট খাওয়া অভ্যাসে থাকা মানুষদের মাসিক বা বাৎসরিক খরচে বড় বৃদ্ধি দেখা দেবে। যেমন, একজন ব্যক্তি যদি দিনে ১০টি সিগারেট খান, তবে তার মাসিক বাড়তি খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ টাকা, আর বছরে বাড়তি প্রায় ৭,২০০ টাকা।
এই বাড়তি কর শুধু সিগারেটের উপর নয়, বরং পুরো তামাক শিল্পকেই আঘাত করছে। প্যান মশলা, সিগার, চেরুট, সিগারিলো, প্রক্রিয়াজাত ও পুনর্গঠিত তামাকজাত দ্রব্য, এমনকি ধূমপানের পাইপ, সিগারেট হোল্ডার এবং সেগুলির যন্ত্রাংশের উপরও ৪০ শতাংশ হারে কর বসানো হয়েছে।
এর ফলে, শুধু ধূমপানকারী নন, বরং গুটখা, পান মশলা বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য সেবনকারীরাও সমানভাবে প্রভাবিত হবেন।
তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর GST Tobacco Tax Hike India
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও রাজস্ব বাড়ানো। যেহেতু তামাকজাত দ্রব্যকে ‘সিন গুডস’ হিসেবে ধরা হয়, তাই এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত জিএসটি ব্যবস্থার দ্বৈত কাঠামোর অংশ। যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলি ৫ শতাংশ বা ১৮ শতাংশ হারে করের আওতায় থাকবে, সেখানে বিলাসবহুল ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্যগুলি সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ করের আওতায় আনা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লে এর ব্যবহার কিছুটা হলেও কমতে পারে। যদিও অভ্যাসগত সেবনকারীরা সহজে ছাড়তে পারবেন না, তবে নতুন প্রজন্মকে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে পারে।
এই নতুন কর কাঠামোর আওতায় শুধু তামাকজাত দ্রব্য নয়, আরও বেশ কিছু বিলাস দ্রব্য ও স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য এসেছে।
চিনি-সমৃদ্ধ ও কার্বনেটেড পানীয়, ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিঙ্ক, বিলাসবহুল গাড়ি, ৩৫০ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল, আগ্নেয়াস্ত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ছোট বিমান, এমনকি বেটিং, ক্যাসিনো ও অনলাইন গেমিংয়ের মতো ‘অ্যাকশনেবল ক্লেইম’কেও ৪০ শতাংশ জিএসটির আওতায় আনা হয়েছে।
অর্থাৎ, যেসব পণ্য ও পরিষেবা সমাজের জন্য ক্ষতিকর বা কেবলমাত্র বিলাসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত, সেগুলিকে এবার থেকে সর্বোচ্চ করের আওতায় আনা হবে।
ধূমপানকারীদের জন্য স্পষ্ট বার্তা
সিগারেটের দাম বাড়ার ফলে ধূমপানকারীদের জন্য স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে গেছে—এই অভ্যাস এখন আরও ব্যয়বহুল হতে চলেছে। ১৯ টাকার সিগারেট শিগগিরই ইতিহাস হতে চলেছে, কারণ সেটি এখন ২২ টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ধূমপানবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়ক হতে পারে। কারণ, যখন কোনো ক্ষতিকর অভ্যাস বজায় রাখতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়, তখন অনেকেই বিকল্প খোঁজেন বা ছাড়ার চেষ্টা করেন।
জিএসটি কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তামাক শিল্পে বড় প্রভাব ফেলবে। একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের প্রবণতা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে অভ্যাসগত ভোক্তাদের জন্য এই বৃদ্ধি বড় ধাক্কা হতে চলেছে। প্রতিদিনের বাড়তি খরচ শেষমেশ মাসিক ও বাৎসরিক বাজেটে স্পষ্ট প্রভাব ফেলবে।
সরকারের বার্তাটি একটাই—ধূমপান ও তামাক সেবন শুধু স্বাস্থ্যহানিকর নয়, এখন থেকে পকেটের জন্যও আরও ভারী।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
