বিমায় জিএসটি হ্রাসের প্রস্তাব আলোচনা জিএসটি কাউন্সিলে

স্বাস্থ্য ও টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম কমতে পারে যদি জিএসটি কাউন্সিল তাদের চলমান বৈঠকে করহার কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন করে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের এই…

gst-challan-payment-problem-learn-how-to-make-online-gst-payment

স্বাস্থ্য ও টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম কমতে পারে যদি জিএসটি কাউন্সিল তাদের চলমান বৈঠকে করহার কমানোর প্রস্তাব অনুমোদন করে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের এই বৈঠককে ঘিরে ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বিমা খাতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও টার্ম ইন্স্যুরেন্সে ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি প্রযোজ্য হয়।

বিভিন্ন প্রস্তাব এই বৈঠকে আলোচনার জন্য উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
সম্পূর্ণ করমুক্তকরণ (কোনো ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বা আইটিসি ছাড়াই), ৫ শতাংশ হারে কর (আইটিসি থাক বা না থাক), ১২ শতাংশ হারে কর আরোপ (আইটিসি সহ)।

   

বিশ্লেষক সংস্থা এইচএসবিসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ক্যাপিটাল মার্কেটস (ইন্ডিয়া)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি পূর্ণ করমুক্তকরণ কার্যকর হয়, তবে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। অন্যদিকে, ১২ শতাংশ জিএসটি হার আইটিসি সহ প্রয়োগ করলে প্রিমিয়াম কিছুটা হলেও কমবে—গড়ে ৬ শতাংশ হারে। এতে সাধারণ গ্রাহকরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

তবে করছাড় বা করহার কমানোর ফলে সরকারকে আয়ের ঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ করছাড় কার্যকর হলে বিমা প্রিমিয়ামের উপর জিএসটি থেকে বার্ষিক প্রায় ১.২ থেকে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা) ঘাটতি হতে পারে। ফলে সরকারের সামনে রাজস্ব ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

এইচএসবিসি-র বিশ্লেষণ বলছে, করহার কমানোর ফলে যদিও গ্রাহকরা লাভবান হবেন, তবে বিমা সংস্থাগুলিকে স্বল্পমেয়াদে লাভজনকতায় চাপে পড়তে হবে। বিশেষ করে পুনর্নবীকরণ নীতি বা রিনিউয়াল পলিসির পুনর্মূল্যায়ন ধীর গতিতে চলবে, যা প্রায় ১২ থেকে ১৮ মাস সময় নিতে পারে। এর ফলে বিমা সংস্থার কম্বাইন্ড রেশিও বা সম্মিলিত ক্ষতির অনুপাত ৩ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাবিত হতে পারে।

এছাড়াও, বিমা সংস্থার এক্সপেন্স রেশিও বা ব্যয়ের হার আইটিসি পাওয়া যাবে কি না তার উপর নির্ভর করে আরও ওঠানামা করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিমা প্রদানকারী সংস্থাগুলি (স্ট্যান্ডঅ্যালোন হেলথ ইন্স্যুরার) বহুমুখী বিমা সংস্থার (মাল্টি-লাইন ইন্স্যুরার) তুলনায় বেশি প্রভাবিত হবে। কারণ তাদের আয়ের বড় অংশ খুচরো স্বাস্থ্য বিমার উপর নির্ভরশীল।

যদিও স্বল্পমেয়াদে বিমা সংস্থাগুলি চাপের মুখে পড়বে, দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই মনে করছে এইচএসবিসি। একদিকে প্রিমিয়াম সস্তা হলে গ্রাহকদের বিমা গ্রহণের আগ্রহ বাড়বে। অন্যদিকে বাজারের বিস্তার ঘটবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও গভীর হবে।

Advertisements

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের মূল প্রভাব ট্রানজিশনারি বা অস্থায়ী হবে। কারণ পিছিয়ে থাকা পলিসিগুলির ধীর পুনর্মূল্যায়ন ধাপে ধাপে সামঞ্জস্য তৈরি করবে। দীর্ঘমেয়াদে বিমা খাতের বৃদ্ধির সম্ভাবনা বরং বেড়ে যাবে।

সাধারণ পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম কমা একটি বড় স্বস্তির খবর। ভারতে এখনও জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বিমার আওতার বাইরে রয়েছে। উচ্চ প্রিমিয়ামের কারণে অনেক পরিবারই স্বাস্থ্য কভার নিতে দ্বিধা করে। যদি জিএসটি কমানো হয়, তবে সাশ্রয়ী প্রিমিয়ামে আরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আসতে পারবেন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এতে দুইটি বড় সুবিধা হবে—
১. স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত আর্থিক সুরক্ষা বাড়বে,
২. সরকারের আয়ুষ্মান ভারত কিংবা অন্যান্য জনকল্যাণমূলক বিমা প্রকল্পগুলির উপর চাপ কিছুটা হ্রাস পাবে।

বিমা খাতের সঙ্গে যুক্ত অনেক সংস্থা ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, বিমার প্রিমিয়াম সস্তা হলে বাজারে চাহিদা বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়িক লাভ আনবে। যদিও স্বল্পমেয়াদে মার্জিন কিছুটা কমে যাবে, কিন্তু বৃদ্ধি পাওয়া গ্রাহকসংখ্যা সেই ঘাটতি পূরণ করবে।

অন্যদিকে কিছু বিশেষজ্ঞের মত, সম্পূর্ণ করছাড়ের পরিবর্তে যদি ধাপে ধাপে করহারে ছাড় দেওয়া হয়, তবে সরকারী রাজস্বের ঘাটতিও সীমিত থাকবে এবং বিমা খাতও ইতিবাচকভাবে মানিয়ে নিতে পারবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, স্বাস্থ্য ও টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামে জিএসটি হ্রাস গ্রাহক এবং বিমা খাত উভয়ের জন্যই বড় পরিবর্তন আনতে পারে। স্বল্পমেয়াদে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল নিশ্চিত। বিমা প্রিমিয়াম সস্তা হলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে আরও মনোযোগী হবেন। ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের সামগ্রিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাও শক্তিশালী হবে।