দুই-স্তরের জিএসটি কাঠামো প্রস্তাব, রাজ্য মন্ত্রীদের বৈঠকে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী

দেশের কর ব্যবস্থায় আবারও এক বড় পরিবর্তনের (GST Reforms) ইঙ্গিত দিল কেন্দ্র। আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নির্ধারিত জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের আগে কেন্দ্র প্রস্তাব রাখল একটি সরলীকৃত…

GST Council insurance premium tax

দেশের কর ব্যবস্থায় আবারও এক বড় পরিবর্তনের (GST Reforms) ইঙ্গিত দিল কেন্দ্র। আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নির্ধারিত জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের আগে কেন্দ্র প্রস্তাব রাখল একটি সরলীকৃত দুই-স্তরের জিএসটি কাঠামোর। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বুধবার এখানে অনুষ্ঠিত দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীরা নিয়ে গঠিত গ্রুপ অব মিনিস্টারস (GoM)–কে এই প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেন।
কেন্দ্রের প্রস্তাব অনুযায়ী বর্তমান চারটি প্রধান স্ল্যাব (৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮%) সরলীকরণ করে আনা হবে দুইটি সাধারণ হার—‘Merit’ বা সুবিধাজনক পণ্য ও পরিষেবা: ৫ শতাংশ

‘Standard’ বা সাধারণ পণ্য ও পরিষেবা: ১৮ শতাংশ
তবে নির্দিষ্ট কিছু অপ্রীতিকর বা ক্ষতিকর পণ্যের জন্য রাখা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশের বিশেষ হার। এর আওতায় আসবে প্রায় ৫-৭টি পণ্য যেমন— পান মশলা, তামাকজাত দ্রব্য এবং অনলাইন গেমিং।

   

প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যমান ১২% ও ২৮% কর স্ল্যাব সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হবে। সরকার সূত্রে খবর, প্রায় ৯৯ শতাংশ ১২% স্ল্যাবে থাকা পণ্যকে ৫% হারে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। এর ফলে বাজারে একাধিক প্রয়োজনীয় জিনিস সস্তা হয়ে পৌঁছতে পারে সাধারণ ভোক্তার হাতে। অন্যদিকে, ২৮% স্ল্যাবে থাকা অধিকাংশ পণ্যকেও ১৮% স্ল্যাবে নামিয়ে আনা হবে।

সরকারি যুক্তি, বর্তমানের জটিল বহু-স্তরের জিএসটি হার ব্যবসায়ীদের জন্য বিভ্রান্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) ও কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে কর কাঠামোর সরলীকরণ একদিকে ব্যবসা করা সহজ করবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের উপর চাপও কমাবে।

অর্থমন্ত্রকের মতে, ‘Merit’ শ্রেণির পণ্যগুলিতে যেমন কৃষিজাত সামগ্রী, ছোট ব্যবসার জন্য জরুরি উপকরণ ও মধ্যবিত্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে, সেগুলির ওপর কম কর আরোপ করলে চাহিদা বাড়বে এবং অর্থনীতির জোর বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসে ঘোষণাই করেছিলেন, “দীপাবলির আগে আসবে নেক্সট-জেন জিএসটি সংস্কার”। সেই প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্র তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রস্তাব রেখেছে—
1. কাঠামোগত সংস্কার (Structural Reforms): জিএসটি ব্যবস্থাকে সহজ, স্বচ্ছ ও সবার জন্য ব্যবহারবান্ধব করা।
2. হার যুক্তিসঙ্গতকরণ (Rate Rationalisation): একাধিক স্ল্যাব সরিয়ে সীমিত হারে কর আরোপ করা।
3. Ease of Living: ভোক্তা ও ব্যবসায়ীর জন্য জীবন ও ব্যবসা সহজ করা।

যদিও কেন্দ্র সরাসরি গোএম-এর সদস্য নয়, তবু অর্থমন্ত্রীর এই বৈঠকে উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে রাজ্য অর্থমন্ত্রীদের কাছে কেন্দ্রের পরিকল্পনার যুক্তি ও দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হবে।

Advertisements

বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী এই ছয় সদস্যের প্যানেলের আহ্বায়ক। তিনি জানান, দুই দিনের বৈঠকে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সেপ্টেম্বরের ১৮-১৯ তারিখে নির্ধারিত জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

রাজ্যগুলির জন্য জিএসটি আয় একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস। তাই কর হারের এই পরিবর্তনে রাজ্যের অংশীদারিত্ব ও আয় কতটা প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক রাজ্য কম কর হারে সম্মত হলেও তারা চাইবে, রাজস্ব ক্ষতির পূরণে কেন্দ্র নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা রাখুক।

প্রস্তাবে সবচেয়ে আলোচিত অংশ হল ৪০ শতাংশ বিশেষ কর। তামাক, পান মশলা কিংবা অনলাইন গেমিং—এমন পণ্যগুলিকে ‘ডিমেরিট গুডস’ হিসেবে দেখছে সরকার। এর মাধ্যমে একদিকে রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ক্ষতিকর পণ্যের উপর উচ্চ কর আরোপের মাধ্যমে ভোগ কমাতে উৎসাহিত করা হবে।

  • ভোক্তা পর্যায়ে: প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন কাপড়, জুতো, গৃহস্থালির কিছু সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি সস্তা হতে পারে।
  • ব্যবসায়ী পর্যায়ে: জটিল বহু-স্তরের হার বাতিল হওয়ায় জিএসটি ফাইলিং সহজ হবে।
  • সরকারি রাজস্ব: প্রাথমিকভাবে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হলেও, চাহিদা বাড়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে আয় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে একদিকে বাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে, অন্যদিকে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেটাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।

সব মিলিয়ে, দেশের জিএসটি ব্যবস্থায় এই প্রস্তাবিত পরিবর্তন এক বড় মাইলফলক হতে চলেছে। কেন্দ্রের আশা, এই সংস্কারের মাধ্যমে কর কাঠামো আরও স্বচ্ছ, কার্যকর ও ভোক্তাবান্ধব হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা হবে বলে প্রত্যাশা। আর সেই সিদ্ধান্তই ঠিক করবে—দীপাবলির আগে দেশের কর ব্যবস্থায় কী বড় বদল আসছে।