সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তা-ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড (Consumption-based Mutual Funds) বাজারে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করেছে। গত কয়েক মাসে এই ফান্ডগুলো গড়ে ১২ শতাংশের বেশি রিটার্ন দিয়েছে, যা নিফটি ইন্ডিয়া কনজাম্পশন–টিআরআই (Nifty India Consumption – TRI) সূচককেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ঘোষিত জিএসটি (GST) সংস্কার ও আয়কর ছাড়ের প্রস্তাব বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ভ্যালু রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ভোক্তা-ভিত্তিক ফান্ডগুলো গড়ে ১২.২৮% রিটার্ন দিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া কনজাম্পশন ফান্ড সর্বোচ্চ ১৮.০৫% রিটার্ন দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। মিরায় অ্যাসেট গ্রেট কনজিউমার ফান্ড (15.92%) ও কোটাক কনজাম্পশন ফান্ড (15.59%) যথেষ্ট ভালো ফল করেছে। তবে কুয়ান্ট কনজাম্পশন ফান্ড মাত্র ৩.৩৭% রিটার্ন দিয়ে সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। এদিকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়া আইটিআই ভারত কনজাম্পশন ফান্ড এই ক্যাটেগরির নতুন খেলোয়াড়।
যদিও গত এক বছরে গোটা ক্যাটেগরি গড়ে সামান্য ক্ষতিতে ছিল (–০.৫২%), তিন বছরের হিসেবে ফান্ডগুলো গড়ে ১৬% এর বেশি বার্ষিক কম্পাউন্ড রিটার্ন (CAGR) দিয়েছে। টাটা ইন্ডিয়া কনজিউমার ফান্ড গত তিন বছরে ১৮.৬৫% রিটার্ন দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। একই সময়ে মিরায় অ্যাসেট ফান্ড ১৮.২০% এবং আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল এফএমসিজি ফান্ড ৯.৩০% রিটার্ন দিয়েছে।
সরকার বর্তমানে জিএসটি কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। বিদ্যমান চার স্তরের পরিবর্তে মূলত দুটি স্তরে (৫% ও ১৮%) বিভক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। বিলাসপণ্য ও ক্ষতিকর পণ্যের জন্য ৪০% হারে কর বজায় থাকবে। বেশিরভাগ ১২% করযুক্ত পণ্য ৫% হারে নেমে আসতে পারে, আর ২৮% হারে থাকা অনেক পণ্য নামবে ১৮%-এ।
বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে এফএমসিজি, অটো, কনজিউমার ডিউরেবলস ও টেলিকম খাতে চাহিদা বাড়বে। কারণ কর কমলে সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, আর সরাসরি এর সুবিধা পাবে ভোক্তা-ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডগুলো।
ট্রেডজিনি-র সিওও ত্রিবেশ ডি বলেন, “ভোক্তা ফান্ডের প্রকৃত সুবিধা হয় তখনই, যখন পরিবারগুলো বেশি খরচ করে। অবকাঠামো বা ক্যাপিটাল গুডস ফান্ডের তুলনায় এই খাত সরাসরি ভোক্তার ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত। তবে চাহিদা কমলে বা বাজারের মনোভাব দুর্বল হলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”
গত পাঁচ বছরে এই ক্যাটেগরির গড় রিটার্ন ছিল ২২.০৯% যা নিফটি ইন্ডিয়া কনজাম্পশন সূচক (18.56%) ও নিফটি ৫০ সূচক (18.78%) – উভয়কেই ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদের হার কমা, গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও ভালো বর্ষার মতো উপাদানগুলো আগামী দিনে ভোক্তা খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।
তবে তারা সতর্ক করছেন, খাতভিত্তিক ফান্ড হওয়ায় ঝুঁকিও তুলনামূলক বেশি। তাই বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের ইক্যুইটি পোর্টফোলিওর ১০–২০% এর বেশি এই ধরনের ফান্ডে না রাখাই ভালো।
এসবিআই কনজাম্পশন অপরচুনিটিজ ফান্ড: ১৯৯৯ সালে চালু হওয়া এই ফান্ড বর্তমানে ₹31.23 বিলিয়ন সম্পদ পরিচালনা করছে। বড়ক্যাপ স্টকে ঝোঁক থাকলেও বহুমুখী বিনিয়োগ কৌশল অনুসরণ করে। শীর্ষ হোল্ডিংস: ভারতী এয়ারটেল, আইটিসি, ব্রিটানিয়া।
নিপ্পন ইন্ডিয়া কনজাম্পশন ফান্ড: 26.64 বিলিয়ন এএমইউএম সহ ৩৬টি স্টকে বিনিয়োগ করে। শীর্ষ হোল্ডিংস: মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা, ভারতী এয়ারটেল, আইটিসি। ৩ ও ৫ বছরের সময়কালে ২১% এর বেশি রোলিং রিটার্ন দিয়েছে।
টাটা ইন্ডিয়া কনজিউমার ফান্ড: ২০১৫ সালে চালু, বর্তমানে 24.82 বিলিয়ন সম্পদ। ‘গ্রোথ অ্যাট রিজনেবল প্রাইস’ (GARP) কৌশল অনুসরণ করে। শীর্ষ হোল্ডিংস: আইটিসি, ইটারনাল, রাডিকো খৈতান।
মিরায় অ্যাসেট গ্রেট কনজিউমার ফান্ড: 44.03 বিলিয়ন সম্পদসহ এই ক্যাটেগরির দ্বিতীয় বৃহত্তম ফান্ড। উচ্চ ROE ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাযুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে। নিয়মিতভাবে ২০% এর বেশি রিটার্ন দিচ্ছে।
ভোক্তা খাতভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড আবারও বিনিয়োগকারীদের নজরে এসেছে। জিএসটি সংস্কার, আয়কর ছাড়, সুদের হার হ্রাস এবং গ্রামীণ অর্থনীতির জোরদার প্রত্যাবর্তন এই খাতকে দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাতভিত্তিক ফান্ডের অস্থিরতা ও ঝুঁকি মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে সীমিত পরিমাণে বিনিয়োগ করলেই এই সুযোগকে কাজে লাগানো সম্ভব।