নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ-এর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার শুরু হলো ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠক। দুই দিনব্যাপী এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন সকল রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জিএসটি রেট র্যাশনালাইজেশন, করের স্ল্যাব পুনর্গঠন এবং ক্ষতিপূরণ সেসের ভবিষ্যৎ।
বর্তমানে দেশে পণ্য ও পরিষেবার উপর মোট পাঁচটি জিএসটি স্ল্যাব বিদ্যমান, ৫%, ১২%, ১৮%, ২৮% এবং আলাদা ভাবে ৩% (মূলত স্বর্ণালঙ্কারের জন্য)। এবার প্রস্তাব করা হয়েছে কর কাঠামোকে সরলীকরণ করে মাত্র দুটি প্রধান স্ল্যাব রাখা— ৫% এবং ১৮%। পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট বিলাসী ও ক্ষতিকর পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ ৪০% করহার চালুর প্রস্তাবও রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানাবেন।
কী কী সস্তা হতে পারে?
বৈঠকে আলোচ্য প্রস্তাব অনুযায়ী, বহু পণ্যের উপর জিএসটি হ্রাস পেতে পারে। বিশেষত সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে পারে। অটোমোবাইল ও অটো পার্টস: বর্তমানে ২৮% কর ধার্য হলেও তা কমে ১৮% হতে পারে। এতে গাড়ি শিল্পে চাঙ্গাভাব ফেরার সম্ভাবনা।
কৃষি খাত: সার উৎপাদনে ব্যবহৃত বিভিন্ন এসিড ও বায়ো-পেস্টিসাইডে করহার ১৮% ও ১২% থেকে কমে একেবারে ৫% হতে পারে। ফলে কৃষকদের খরচ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে। খাদ্যপণ্য ও পানীয়: ঘি, বাদাম, পানীয় জল (২০ লিটারের বোতল), নন-এয়ারেটেড ড্রিঙ্কস, নোনতা খাবার (নমকিন), কিছু ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী— সবকিছুই ১২% থেকে সরে গিয়ে ৫% করের আওতায় আসতে পারে।
সাধারণ ব্যবহার্য পণ্য: পেন্সিল, সাইকেল, ছাতা, হেয়ারপিন ইত্যাদি দৈনন্দিন সামগ্রীর দামও কমবে বলে আশা। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী: টিভি, ওয়াশিং মেশিন ও ফ্রিজের মতো নির্দিষ্ট পণ্যে জিএসটি ২৮% থেকে কমে ১৮% হতে পারে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি: সৌর কুকার, সৌর ওয়াটার হিটার এবং অন্যান্য গ্রিন এনার্জি ডিভাইসের উপর করহার ১২% থেকে কমে ৫% হতে পারে, যা পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।
টেক্সটাইল খাত: সিনথেটিক ফিলামেন্ট ইয়ার্ন, স্ট্যাপল ফাইবার ইয়ার্ন, সেলাইয়ের সুতো, কার্পেট, গজ, রাবার থ্রেড— এসব পণ্যে করহার ১২% থেকে নেমে আসতে পারে ৫%-এ। এতে শিল্পে গতি ফেরার সম্ভাবনা।
পাদুকা: ২,৫০০ টাকার নিচের জুতো-চপ্পলে করহার ১২% থেকে কমে ৫% হতে পারে। তবে এর ওপরে মূল্যের জুতোতে করহার বেড়ে যেতে পারে ১৮%-এ।
পোশাক: ৫% করহারের আওতায় আসতে পারে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত দামের পোশাক। পূর্বে সীমা ছিল ১,০০০ টাকা।
বীমা: বয়স্ক নাগরিকদের জন্য জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি পুরোপুরি মওকুফের প্রস্তাবও আলোচিত হচ্ছে।
কী কী পণ্যের দাম বাড়তে পারে? gst council meeting
তবে সব ক্ষেত্রে স্বস্তির খবর নেই। সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে কয়েকটি খাতে করহার বৃদ্ধি করা হতে পারে।
তামাকজাত পণ্য: সিগারেট, গুটখা, পানমশলা, তামাকজাত দ্রব্যের উপর করহার ২৮% থেকে বেড়ে হতে পারে ৪০%।
কয়লাজাত জ্বালানি: কয়লা, ব্রিকেট, লিগনাইট ও পিটজাত জ্বালানির উপর জিএসটি ৫% থেকে বাড়িয়ে ১৮% করা হতে পারে।
প্রস্তুত পোশাক: ২,৫০০ টাকার বেশি দামের রেডিমেড পোশাকের উপর করহার ১২% থেকে বেড়ে হতে পারে ১৮%।
বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ক্ষতিপূরণ সেস। ২০১৭ সালে জিএসটি চালুর সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি পূরণে ৫ বছরের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছিল ৩০ জুন, ২০২২-এ। পরে কোভিডকালে কেন্দ্র যে ঋণ নেয়, তা শোধ করার জন্য ক্ষতিপূরণ সেসের মেয়াদ ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
অর্থমন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতিপূরণ সেস পুরোপুরি উঠে যেতে পারে। কিন্তু তাতে রাজ্যগুলির উদ্বেগ বেড়েছে।
গত সপ্তাহে হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরল, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, রাজস্ব ক্ষতি পূরণে বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি। পশ্চিমবঙ্গের মতো কয়েকটি রাজ্য দাবি জানিয়েছে— নতুন প্রস্তাবিত ৪০% করহার থেকে যে অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে, তা যেন সরাসরি রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করা হয়।
৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠককে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও কৃষিজাত পণ্যের উপর করহার কমলে স্বস্তি মিলবে সাধারণ মানুষের, অন্যদিকে বিলাসী ও ক্ষতিকর দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি রাজস্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। তবে রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণ সেস নিয়ে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, তা সমাধান না হলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নতুন করে টানাপোড়েনে পড়তে পারে।
আগামীকাল, ৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন, তার উপর নির্ভর করবে আগামী কয়েক বছরের জন্য দেশের কর কাঠামো কোন পথে এগোবে।
Business: India’s 56th GST Council meeting, led by FM Nirmala Sitharaman, is discussing major reforms. Proposals include restructuring tax slabs to two main rates (5% and 18%) and a new 40% rate, potentially making essentials like auto parts, fertilizers, and food items cheaper.