২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে কিষাণ কার্ডে সুদ ভর্তুকি চালু রাখার ঘোষণা কেন্দ্রের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে পরিবর্তিত সুদ ভর্তুকি প্রকল্প (Modified Interest Subvention Scheme – MISS)-এর আওতায় সুদ ভর্তুকি…

Govt Extends Interest Subsidy on Kisan Credit Cards

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে পরিবর্তিত সুদ ভর্তুকি প্রকল্প (Modified Interest Subvention Scheme – MISS)-এর আওতায় সুদ ভর্তুকি উপাদান চালু রাখার। এই প্রকল্প ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এতে দেশের ৭.৭৫ কোটি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (Kisan Credit Cards) ধারক উপকৃত হবেন বলে সরকার জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটি অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও অনুমোদিত হয়েছে। সুদের হার কমিয়ে কৃষকদের ঋণ গ্রহণে স্বস্তি দিতেই এই প্রকল্পের রূপায়ণ করা হয়েছে।

   

পরিবর্তিত সুদ ভর্তুকি প্রকল্প (MISS) কী?
সুদ ভর্তুকি প্রকল্প হলো সরকার প্রদত্ত একটি আর্থিক সহায়তা, যার মাধ্যমে কৃষকদের ঋণের উপরে প্রযোজ্য সুদের হার কমিয়ে আনা হয়। এর ফলে কৃষকরা সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণ নিতে পারেন।

পরিবর্তিত সুদ ভর্তুকি প্রকল্প (MISS) অনুসারে, কৃষকরা ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ নিতে পারেন, যেখানে বার্ষিক সুদের হার নির্ধারিত হয়েছে ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১.৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে।

যেসব কৃষক নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করেন, তারা ৩ শতাংশ ‘প্রম্পট রিপেমেন্ট ইনসেনটিভ (PRI)’ পান, ফলে তাদের প্রকৃত সুদের হার দাঁড়ায় মাত্র ৪ শতাংশ। এই ব্যবস্থা কৃষকদের সময়মতো ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত করে।

পশুপালন ও মৎস্যচাষীদের জন্যও সুবিধা
এছাড়াও, পশুপালন ও মৎস্যচাষ সংক্রান্ত কাজের জন্য নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রেও সুদ ভর্তুকি প্রযোজ্য থাকবে, তবে সেটি সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এর ফলে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে আর্থিক প্রবাহ আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) কী?
কৃষকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা ফসল উৎপাদন, পশুপালন এবং অন্যান্য কৃষি-সহায়ক কাজে স্বল্প সুদে ঋণ পেতে পারেন। এটি বাণিজ্যিক ব্যাংক, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক এবং সমবায় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়।

Advertisements

বর্তমানে দেশে ৭.৭৫ কোটির বেশি সক্রিয় KCC অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই কার্ড কৃষকদের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সাশ্রয়ী সুবিধা নিশ্চিত করে, এবং তাদের অসংগঠিত ঋণদাতাদের থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া থেকে রক্ষা করে।

কৃষি খাতে ঋণের বৃদ্ধি
সরকারি বিবৃতি অনুসারে, ২০১৪ সালে যেখানে KCC-এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ছিল ₹৪.২৬ লক্ষ কোটি, তা বেড়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ₹১০.০৫ লক্ষ কোটি-তে পৌঁছেছে। সামগ্রিকভাবে, কৃষিক্ষেত্রে ঋণ প্রবাহ ২০১৩-১৪ সালের ₹৭.৩ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ₹২৫.৪৯ লক্ষ কোটি হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলি প্রমাণ করে যে কৃষিক্ষেত্রে ঋণপ্রবাহে এক বিপুল বৃদ্ধি ঘটেছে, যার ফলে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা অনেকাংশে বেড়েছে।

কিষাণ ঋণ পোর্টাল চালু
ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৩ সালের আগস্টে ‘কিষাণ ঋণ পোর্টাল (Kisan Rin Portal – KRP)’ চালু করেছে। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকরা নিজেদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং ঋণের অনুমোদন, বিতরণ ও পরিশোধ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়েছে।

ভবিষ্যতের দিশা
সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের কোটি কোটি কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সুদ ভর্তুকির সুবিধা ও কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সহজলভ্যতার মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক চাপ অনেকটাই কমবে। বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এটি একটি আশার আলো।
কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, প্রকল্পের কাঠামো বা অন্য কোনও উপাদানে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে আগের নিয়ম মেনেই কৃষকরা আগামীতেও এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

এই প্রকল্পের ধারাবাহিকতা ও বাস্তবায়নের কার্যকারিতা ভবিষ্যতে দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।