অনলাইন গেমিং আইন (Online Gaming Ban) ২০২৫ পাস হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বাস্তব অর্থভিত্তিক গেমিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে আজ, বৃহস্পতিবার, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছেন আর্থিক পরিষেবা দফতর (Department of Financial Services) ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক (MeitY)-এর শীর্ষ আমলারা। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দেশের বড় ব্যাংক ও ফিনটেক কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হবে নতুন আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা। আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে কীভাবে অবৈধ মানি গেমে অর্থ প্রবাহ বন্ধ করা যায়, কীভাবে মানি লন্ডারিং রোধ করা যায় এবং গ্রাহকদের গেমিং ওয়ালেটে জমে থাকা টাকার ফেরত নিশ্চিত করা যায়।
সংসদে পাশ হওয়া Promotion and Regulation of Online Gaming Bill, 2025 রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর কার্যকর হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, বাস্তব অর্থের বিনিময়ে খেলা হয় এমন সমস্ত অনলাইন গেম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আইন অনুযায়ী, কেবল গেমিং প্ল্যাটফর্ম চালানোই নয়, তাতে অংশগ্রহণ, প্রচার, এমনকি বিজ্ঞাপন দেওয়াও বেআইনি।
তবে আইনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, ই-স্পোর্টস বা সামাজিক গেমের মতো অ-আর্থিক খেলা এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, স্কিল-ভিত্তিক মাল্টিপ্লেয়ার ভিডিও গেম যেগুলোতে অর্থ লেনদেন নেই, সেগুলোকে উৎসাহিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হবে। সরকার এ ধরনের গেমকে একটি স্বাস্থ্যকর গেমিং ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে।
আজকের বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় হবে ব্যাংক ও ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা। সূত্র অনুযায়ী, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়—
ট্রানজ্যাকশন বন্ধ করা: যেকোনও ধরনের অনলাইন মানি গেমের সঙ্গে যুক্ত আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়েগুলিকে বাধ্যতামূলক করা হবে।
ওয়ালেট রিফান্ড: ইতিমধ্যেই ব্যবহারকারীরা যে টাকা বিভিন্ন গেমিং অ্যাপে জমা রেখেছেন, সেই অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে সহজ করা যায় তা নিয়ে ভাবনা হবে।
AML ও CFT কমপ্লায়েন্স: মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ (Anti-Money Laundering) ও সন্ত্রাসবাদী অর্থায়ন রোধে (Counter-Terror Financing) আর্থিক সংস্থাগুলিকে আরও কার্যকরভাবে নজরদারি করতে হবে। সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করার জন্য উন্নত অ্যালগরিদম ও রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
আইন অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই একটি জাতীয় পর্যায়ের অনলাইন গেমিং কর্তৃপক্ষ (Online Gaming Authority) গঠিত হবে। এই সংস্থা বা সরকারের মনোনীত কোনও বিদ্যমান দফতর অনলাইন গেম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেবে।
তাদের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে—
অনলাইন গেম নিবন্ধন ও শ্রেণিবিভাগ করা, কোন গেম মানি গেম হিসেবে গণ্য হবে তা নির্ধারণ, অভিযোগ ও বিরোধ নিষ্পত্তি করা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গেমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য গাইডলাইন প্রকাশ করা, শৃঙ্খলাভঙ্গ বা আইনভঙ্গের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, বাস্তব অর্থভিত্তিক অনলাইন গেম সমাজে আসক্তি, আর্থিক ক্ষতি ও অপরাধমূলক কার্যকলাপকে উস্কে দেয়। অন্যদিকে, ই-স্পোর্টস ও স্কিল-ভিত্তিক গেমিংকে সরকার উদীয়মান প্রযুক্তি খাত ও তরুণদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে।
এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতীয় গেমারদের সাফল্যের কথা তুলে ধরে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সঠিক নিয়ন্ত্রণ থাকলে ভারত বৈশ্বিক ই-স্পোর্টস মার্কেটে বড় ভূমিকা নিতে পারবে। ফলে আইনটিকে একদিকে যেমন কঠোর মনে হচ্ছে, অন্যদিকে এটি বৈধ গেমিং ইকোসিস্টেমকে নতুন দিগন্ত দিচ্ছে।
অনলাইন গেমিং শিল্পের একটি বড় অংশ অবশ্য নতুন আইনে হতাশা প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, “মানি গেম” ও “স্কিল-ভিত্তিক গেম”—এই বিভাজন সবসময় স্পষ্ট নয়। অনেক কোম্পানি, বিশেষত রামি ও পোকার প্ল্যাটফর্ম, নিজেদের স্কিল-ভিত্তিক দাবি করে থাকে। আইন কার্যকর হলে রাতারাতি বহু প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, ফিনটেক খাত মনে করছে, নতুন আইনের ফলে তাদের প্রযুক্তি ও নজরদারির দায়িত্ব বাড়বে। একাধিক ব্যাংক ইতিমধ্যেই গ্রাহক অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক গেমিং লেনদেনের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।
নতুন অনলাইন গেমিং আইন কার্যকর হওয়ার পর আজকের বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এটি শুধু অর্থপ্রবাহ বন্ধ করার বিষয় নয়, বরং গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং দেশের গেমিং ইকোসিস্টেমকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের লক্ষ্য স্পষ্ট—অর্থভিত্তিক আসক্তিমূলক গেমের পরিবর্তে ই-স্পোর্টস ও সামাজিক গেমিংয়ের প্রসার ঘটানো। এখন দেখার বিষয়, ব্যাংক, ফিনটেক ও গেমিং কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে সরকার কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই আইনের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে।