নয়াদিল্লি, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা পুরনো পেনশন স্কিম (Old Pension Scheme) পুনর্বহালের দাবিতে আবারও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। ইউনিফাইড পেনশন স্কিম (ইউপিএস) চালু হওয়ার পরও, যা ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে, কর্মচারী ইউনিয়নগুলো এই নতুন ব্যবস্থাকে অপর্যাপ্ত বলে প্রত্যাখ্যান করছে। জয়েন্ট ফোরাম ফর রিস্টোরেশন অফ ওল্ড পেনশন স্কিম (জেএফআরওপিএস)-এর মতো সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মেমোরেন্ডাম জমা দিয়ে দাবি করেছে যে, ওপিএস ছাড়া কর্মচারীদের পেনশন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এই দাবি ২০২৫ সালে আরও জোরালো হয়েছে, কারণ ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস)-এর অধীনে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা কম পেনশন পাচ্ছেন এবং ইউপিএস-এও কর্মচারীদের ১০% বেতন কাটা হয়, যা ওপিএস-এ ছিল না।
Also Read | থমকে ২ লক্ষ কোটির প্রকল্প! বিদেশি বিনিয়োগের অগ্রগতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ
ওপিএস-এর অধীনে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা তাঁদের শেষ বেতনের ৫০% পেনশন হিসেবে পেতেন, যা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে দিয়ারনেস অ্যালাউন্স (ডিএ) দিয়ে সামঞ্জস্য করা হতো। এতে কোনো অবদানের প্রয়োজন ছিল না—সরকারই সব দায়িত্ব নিত। কিন্তু ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এনপিএস চালু হওয়ার পর, কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০% কাটা হয় এবং সরকার ১৪% যোগায়, যা মার্কেটের ওঠানামার উপর নির্ভরশীল। ফলে, অনেক কর্মচারী অবসরের পর মাত্র ১৫% পেনশন পাচ্ছেন, যা ওপিএস-এর তুলনায় অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, একজন ডিফেন্স কর্মকর্তা, যার বেসিক পে ৩০,৫০০ টাকা, এনপিএস-এ মাত্র ২,৪১৭ টাকা পেনশন পেয়েছেন, যেখানে ওপিএস-এ ১৫,২৫০ টাকা পেতেন। এই অসমতুল্যতা কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়েছে।
ইউপিএস-এর ঘোষণা, যা ২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট ক্যাবিনেটে অনুমোদিত হয়েছে, ২৩ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারীকে কভার করবে। এতে ২৫ বছরের সার্ভিসের পর শেষ ১২ মাসের গড় বেসিক পে-এর ৫০% পেনশন দেওয়া হবে এবং লাম্পসাম পেমেন্টও থাকবে। কিন্তু ইন্ডিয়ান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সুপারভাইজার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইআরটিএসএ) এর মতো ইউনিয়নগুলো বলছে যে, এটি ওপিএস-এর মতো নন-কনট্রিবিউটরি নয় এবং তিনটি স্কিম (ওপিএস, এনপিএস, ইউপিএস) থাকায় অসমতা তৈরি হচ্ছে, যা সংবিধানের ১৪ ও ১৬ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে। ২০২৫ সালের লোকসভায় সুদামা প্রসাদের মতো এমপিরা প্রশ্ন করেছেন যে, ওপিএস পুনর্বহালের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ওপিএস অর্থনৈতিকভাবে অস্থায়ী, তাই কোনো প্রস্তাব নেই।
Also Read | যুদ্ধাস্ত্র রফতানি থেকে মোদী সরকারের রাজকোষে কোটি কোটি টাকা
কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর দাবি হলো, ওপিএস পুনর্বহাল করলে কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস ফোরামের মতো সংগঠন বলছে, “ওপিএস আমাদের অধিকার, নয় সুবিধা।” ২০২৫ সালে এই আন্দোলন আরও তীব্র হয়েছে, কারণ রাজ্য নির্বাচনগুলোতে এটি একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলো ইতিমধ্যে ওপিএস পুনর্বহাল করেছে। হিমাচল প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুকু প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়েই এটি ঘোষণা করেছেন, যাতে ১.৬ লক্ষ কর্মচারী এবং ১.৩ লক্ষ পেনশনার উপকৃত হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও অনিচ্ছুক, কারণ ওপিএস-এর কারণে পেনশনের বোঝা ২০২৩-২৪ সালে ২.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
এই দাবির ফলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। আসামে অল আসাম গভর্নমেন্ট এনপিএস এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এএজিএনপিএসইএ) ধর্মঘট করেছে এবং ওপিএস পুনর্বহালের দাবিতে কালো ব্যান্ড পরে কাজ করছে। গুরগাঁওতে কর্মচারীরা টিরঙ্গা মার্চ করে প্রতিবাদ করেছে। মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় হাজার হাজার কর্মচারী ধর্মঘট করেছে, যাতে শিক্ষক থেকে স্যানিটেশন ওয়ার্কার সবাই অংশ নিয়েছে। কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলো এই দাবিকে সমর্থন করছে এবং বলছে যে, ইউপিএস “কর্মচারী-বিরোধী”। রাহুল গান্ধী বলেছেন, বিজেপি সরকার বয়স্কদের নির্ভরশীল করে তুলেছে। অন্যদিকে, বিজেপি বলছে ওপিএস অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব এবং ইউপিএসই কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য।
Also Read | অষ্টম বেতন কমিশন কি পেনশনভোগীদের সমস্যার সমাধান দেবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওপিএস পুনর্বহাল করলে রাজ্যের বাজেটে চাপ পড়বে, কারণ এটি আনফান্ডেড। আরবিআই-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এতে ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়বে। কিন্তু কর্মচারীরা বলছেন, পেনশন তাঁদের অধিকার এবং এনপিএস বা ইউপিএস-এ মার্কেটের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা রিস্ক নিতে চান না। ২০২৫ সালের ৮ আগস্ট লোকসভায় প্রশ্নোত্তরে সরকার বলেছে, ওপিএস-এর কোনো প্রস্তাব নেই এবং ইউপিএস এনপিএস-এর অধীনে অপশন হিসেবে চালু হয়েছে। কিন্তু কর্মচারী ফোরামগুলো বলছে, তারা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করবে।
সারাংশে এই আন্দোলন শুধু পেনশনের বিষয় নয়, বরং কর্মচারীদের মর্যাদা এবং নিরাপত্তার লড়াই। যদি সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ২০২৫-এর শেষ নির্বাচনগুলোতে এটি বড় ইস্যু হয়ে উঠবে। ওপিএস পুনর্বহালের দাবি কর্মচারীদের মধ্যে একতা সৃষ্টি করেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক নীতির উপর প্রশ্ন তুলেছে।