ভারত-মধ্যপ্রাচ্যের সোনার দামে তুলনা, কোথায় বেশি সস্তা?

Gold price today India vs Dubai: ভারতে গত কয়েকদিন ধরে সোনার দাম অবিরাম কমছে। ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৯০,০০০ টাকার নিচে নেমে গেছে। এদিকে, ২২…

Gold Prices in Dubai, Saudi, Qatar & Kuwait Still Cheaper Than India Despite April Crash — Compare 24K, 22K & 18K Rates

Gold price today India vs Dubai: ভারতে গত কয়েকদিন ধরে সোনার দাম অবিরাম কমছে। ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৯০,০০০ টাকার নিচে নেমে গেছে। এদিকে, ২২ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে যথাক্রমে ৮২,৩০০ টাকা এবং ৬৭,৫০০ টাকার নিচে নেমেছে। তবে, ভারতে এই অবিশ্বাস্য হ্রাস সত্ত্বেও, দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, আবুধাবি এবং কুয়েতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান সোনার বাজারগুলিতে বিক্রি হওয়া সোনার দামের তুলনায় ভারতের দাম এখনও বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম তীব্রভাবে সংশোধিত হওয়ার কারণে এবং ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতির প্রভাবে সোনার দামের উপর চাপ বাড়ছে।

এখানে ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের সোনার বাজারগুলির দামের একটি তুলনা দেওয়া হল:

ভারতে সোনার দাম: টানা চতুর্থ দিনের পতন

৮ এপ্রিল ভারতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৬৫০ টাকা কমে ৮৯,৭৩০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে দাঁড়িয়েছে। ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৬০০ টাকা কমে ৮২,২৫০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ৪৯০ টাকা কমে ৬৭,৩০০ টাকায় নেমেছে। গত ১০ দিনের কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৭ এপ্রিল ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ২৮০ টাকা কমেছে, তবে ৬ এপ্রিল দাম অপরিবর্তিত ছিল। গত সপ্তাহে, সোনার দাম ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় একদিনের পতন দেখেছে—৪ এপ্রিল ১,৭৪০ টাকা এবং ৫ এপ্রিল ৯৮০ টাকা কমেছে। এর আগে, ৩ এপ্রিল ৫৪০ টাকা, ১ এপ্রিল ৯৩০ টাকা এবং ৩১ মার্চ ৭১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২ এপ্রিল এবং ৩০ মার্চ দাম স্থিতিশীল ছিল।

গত পাঁচ দিনের পতনের ফলে, এপ্রিলে এখন পর্যন্ত ভারতে সোনার দাম ৩.৪% কমেছে। এটি মার্চ ২০২৫-এ ৬.১১% বৃদ্ধির তুলনায় উল্লেখযোগ্য পতন। তবুও, মধ্যপ্রাচ্যের সোনার বাজারের তুলনায় ভারতে সোনা এখনও ব্যয়বহুল।

কুয়েতে সোনার দাম

ভারতীয় টাকায়, কুয়েতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৮৪,৬২০ টাকা, ২২ ক্যারেট ৭৭,৫৮০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৬৩,৬০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। ভারতের তুলনায় কুয়েতে ২৪ ক্যারেট সোনা ৫,১১০ টাকা, ২২ ক্যারেট ৪,৬৭০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৩,৭০০ টাকা সস্তা। এপ্রিলে কুয়েতে সোনার দামও ৩% কমেছে।

কাতারে সোনার দাম

কাতারে ২৪ ক্যারেট সোনা ভারতের তুলনায় ৩,৮২০ টাকা সস্তা, অর্থাৎ ৮০,২৩০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। ২২ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট সোনার দাম যথাক্রমে ৮০,২৩০ টাকা এবং ৬৫,৬৫০ টাকা, যা ভারতের তুলনায় ২,০২০ টাকা এবং ১,৬৫০ টাকা কম। কাতারে এই মাসে সোনার দাম প্রায় ৪% কমেছে।

সৌদি আরবে সোনার দাম

সৌদি আরবে ২৪ ক্যারেট সোনা ভারতের তুলনায় ৪,১৯০ টাকা কম, অর্থাৎ ৮৫,৫৪০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। ২২ ক্যারেট ৩,১৫০ টাকা কমে ৭৯,১০০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ২,৫৭০ টাকা কমে ৬৪,৭৩০ টাকা। এপ্রিলে এখানে সোনার দাম ৩.৪% কমেছে।

আবুধাবি ও দুবাইয়ে সোনার দাম

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি জনপ্রিয় শহর আবুধাবি এবং দুবাইয়ে সোনার দাম একই রকম। ২৪ ক্যারেট সোনা ভারতের তুলনায় ৪,৩৭০ টাকা কম, অর্থাৎ ৮৫,৩৬০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। ২২ ক্যারেট ৩,২৩০ টাকা কমে ৭৯,০২০ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ২,৬৫০ টাকা কমে ৬৪,৬৫০ টাকা। দুবাই এবং আবুধাবিতে সোনার দামও ৩% কমেছে।

Advertisements

কেন ভারতে সোনা এখনও ব্যয়বহুল?

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে সোনার দাম কম হওয়ার প্রধান কারণ হলো কম আমদানি শুল্ক, নিম্ন মেকিং চার্জ এবং ভ্যাট বা জিএসটি-র মতো করের অনুপস্থিতি। ভারতে সোনার উপর ১২.৫% আমদানি শুল্ক এবং ৩% জিএসটি আরোপিত হয়, যা দাম বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, ভারতে সোনার চাহিদা অত্যন্ত বেশি, বিশেষ করে উৎসবের মরসুমে, যা দামকে উচ্চ রাখে। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারগুলি, যেমন দুবাই, সোনার বাণিজ্যে কর-মুক্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যা ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে।

বর্তমানে সোনার দামের উপর কী প্রভাব ফেলছে?

কোটাক সিকিউরিটিজের এভিপি-কমোডিটি কায়নাত চৈনওয়ালা জানিয়েছেন, সোমবার কমেক্স জুন গোল্ড ফিউচার ২% কমে ২,৯৭৩.৬০ ডলার প্রতি আউন্সে বন্ধ হয়েছে, যা টানা তৃতীয় দিনের পতন এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। মার্কিন ডলারের শক্তি এবং বিনিয়োগকারীদের মার্জিন কল মেটাতে এবং লাভ নিশ্চিত করতে সোনার পজিশন বিক্রির কারণে এই পতন ঘটেছে। ট্রাম্পের চীনের উপর ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি এবং আমেরিকার পণ্যের উপর চীনের ৩৪% প্রতিশোধমূলক শুল্ক তুলে না নেওয়ার শর্তে বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।

চৈনওয়ালা আরও বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ঝুঁকি-বিরোধী মনোভাব বাড়ছে। আমেরিকার ব্যাপক শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার সোনার দাম ১.৫% বেড়ে ৩,০২০ ডলার প্রতি আউন্সের উপরে উঠেছে। বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি এবং ট্রাম্পের ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে সতর্কতার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়েছে।

তবে, স্পট গোল্ড মঙ্গলবার ৩,০০০ ডলার প্রতি আউন্সে ফিরে এসেছে, যা চার সপ্তাহের সর্বনিম্ন থেকে পুনরুদ্ধার। এই সপ্তাহে সোনার দামের গতিপথ অস্থির থাকবে। বিনিয়োগকারীরা এখন আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য এবং এফওএমসি সভার মিনিটসের অপেক্ষায় রয়েছেন। ফেড চেয়ার পাওয়েল ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি এবং ধীর প্রবৃদ্ধির আশঙ্কায় হার কমানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

ভারতে সোনার দাম কমলেও, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে এটি এখনও সস্তা। কম শুল্ক এবং করের সুবিধা এই বৈষম্যের প্রধান কারণ। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের অস্থিরতা এবং ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ভারত সহ সব দেশে প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে বাজারের প্রবণতা এবং নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর নজর রাখা জরুরি।