এক সময় ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা। তখনকার দিনে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে গয়না কেনা বা সোনা জমিয়ে রাখা ছিল তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মূল্যবান ধাতুর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এসে ১০ গ্রাম সোনার দাম প্রায় ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। অর্থাৎ, মাত্র ছয় বছরে সোনার দর বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশেরও বেশি।
এই বিস্ময়কর মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে—বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের দামে ওঠানামা, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির সোনা কেনার হার বৃদ্ধি এবং লগ্নিকারীদের বিশ্বাস সোনার প্রতি আরও দৃঢ় হওয়া।
কেন বাড়ছে সোনার দাম?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনাকে বিশ্বজুড়ে ‘সেফ হ্যাভেন অ্যাসেট’ (নিরাপদ বিনিয়োগ) হিসেবে ধরা হয়। অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাঙ্কের সুদের হারে পরিবর্তন, বা শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলেই লগ্নিকারীরা ঝুঁকছেন সোনার দিকে। আবার ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময় থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, এবং সাম্প্রতিক আর্থিক মন্দার জেরে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি করে সোনা কিনতে শুরু করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলিও সোনাকে ভরসাযোগ্য সম্পদ হিসেবে ধরে চলেছে। বিশ্বব্যাপী বহু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গত কয়েক বছরে প্রচুর পরিমাণে সোনা কিনেছে, যার ফলে বাজারে সোনার চাহিদা আরও বেড়েছে এবং তার প্রভাব পড়েছে দামে।
আগামী পাঁচ বছরে কী হতে পারে?
বর্তমানে ভারতের বাজারে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৯৯ হাজার টাকার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, এই ঊর্ধ্বগতি এখানেই থামবে না। যদি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে সোনার দাম আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলেই আশঙ্কা।
বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির হার যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ডলারের দাম ভারতে বাড়তে থাকে, তবে সোনার দামেও বাড়তি চাপ পড়বে। তাছাড়াও, যদি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রুপি দুর্বল হওয়া আটকাতে না পারে, তাহলে আমদানিকৃত সোনার দাম স্বাভাবিকভাবেই চড়বে।
বিনিয়োগের দিক থেকে সোনা কেমন?
সোনাকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে বেশ নিরাপদ ধরা হয়। বিশেষ করে যাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁদের কাছে সোনা একটি নির্ভরযোগ্য অপশন। সোনায় ফিজিক্যাল ফর্মে (গয়না, কয়েন, বার) বা ডিজিটাল ফর্মে (Sovereign Gold Bond, Gold ETF, Digital Gold) বিনিয়োগ করা যায়। গত ৫–১০ বছরের ইতিহাস বলছে, যারা নিয়মিতভাবে সোনায় লগ্নি করেছেন, তারা তুলনামূলক ভালো রিটার্ন পেয়েছেন।
সতর্কবার্তাও রয়েছে
তবে প্রতিটি বিনিয়োগেরই কিছু ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সোনার দাম সবসময় একরকম থাকবে না। মাঝে মধ্যে দাম পড়তেও পারে। তাই বিনিয়োগের আগে বাজার পরিস্থিতি, বিশ্ব আর্থিক অবস্থা এবং নিজের আর্থিক লক্ষ্য বিচার করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।