কলকাতায় ফের বাড়ল সোনার দাম, বিয়ের বাজারে ছুঁল রেকর্ড সীমা

শুক্রবার সকালের প্রথম লেনদেনে সোনার দাম (Gold price) আবারও ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। বিশেষ করে ২৪ ক্যারেট বিশুদ্ধ সোনার বিট আরেকবার প্রতি দশ গ্রামে ১০ টাকা…

gold price

শুক্রবার সকালের প্রথম লেনদেনে সোনার দাম (Gold price) আবারও ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। বিশেষ করে ২৪ ক্যারেট বিশুদ্ধ সোনার বিট আরেকবার প্রতি দশ গ্রামে ১০ টাকা বৃদ্ধির সঙ্গে ৯৯,৬১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি রূপার দামও তার পারিশ্রমিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে—এক কেজি রূপার বর্তমান দর দাঁড়িয়েছে ৯৮,৯০০ টাকা, যা আগের দামের তুলনায় ১০০ টাকা বেশি। গুডরিটার্নস ওয়েবসাইটের সাম্প্রতিক আপডেট অনুযায়ী এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

সোনার বাজারে ঊর্ধ্বগতি

বৈশ্বিক বাজারে ভোক্তা মুল্যস্ফীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি যে কোনও সময় সোনার মূল্যে ওঠানামা সৃষ্টি করে, সেটা নতুন নয়। তবে দেশীয় বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সোনার প্রতি গ্রাম দর হালকা হলেও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ ক্যারেট সোনার প্রতি দশ গ্রামে ১০ টাকা বৃদ্ধির পেছনে মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মন্দা এবং জিওপলিটিক্যাল টেনশনই প্রধান কারণ হিসেবে দাড়িয়েছে।

   

বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনা সবসময়ই নিরাপদ আশ্রয়। আর যখন লাভের নিশ্চয়তা থাকে, তখন জুয়েলারি ডিলার থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতাও সোনা কেনার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠে। মঙ্গলবারের তুলনায় আজকের লেনদেনে উক্ত বৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে যে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছেন।

২২ ক্যারেট সোনার দাম

২৪ ক্যারেটের পাশাপাশি ২২ ক্যারেট সোনার দামেও সমান্তরালভাবে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি দশ গ্রামে ২২ ক্যারেট সোনার দাম বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৯১,৩১০ টাকা, যা আগের লেনদেনে থেকে ১০ টাকা বেশি। বাংলাদেশের বাজারে সাধারণত ২২ ক্যারেট সোনার চাহিদাই বেশি, কারণ সেটি আংটি, চুড়ি, মালা ইত্যাদিতে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই বড়জোর বিবাহ বা অন্যান্য উৎসবে এই দামের সামান্য হলেও কোনও প্রভাব এসেছে কিনা, সেটাও জানা যায়নি এখনও।

মুম্বাই, কলকাতা ও চেন্নাইয়ের দাম

দেশের প্রধান তিনটি বাজার—মুম্বাই, কলকাতা ও চেন্নাই—এও সোনার দাম একই মাত্রায় অবস্থান করছে। ২৪ ক্যারেট সোনার প্রতি দশ গ্রামের দাম এই তিন শহরে শতকরা সমান ৯৯,৬১০ টাকা। এর ফলে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—সব অঞ্চলে ক্রেতাদের জন্য কোনও মূল্যবৈষম্য নেই। তবে পরিবহন ও স্থানীয় করের ভিত্তিতে কিছু পরিমাণ পার্থক্য থাকতে পারে; বর্তমান পরিস্থিতিতে তা উচ্চমাত্রায় প্রতিফলিত হয়নি।

রূপার মূল্যস্ফীতি

সোনােই সীমাবদ্ধ থাকেনি, প্রতিদিনের লেনদেনে রূপার দামেও হালকা উত্থান ঘটেছে। গত লেনদেনে রূপার প্রতি কেজি মূল্যে ১০০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮,৯০০ টাকা। চায়ের দোকানের ছড়াতেও রূপা ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়, তাই ছোটখাটো বিনিয়োগকারীরাও এই পণ্যে নজর রাখেন। বিয়ের পূজো অথবা আর্থিক নিরাপত্তার টাকাখাত হিসেবে রূপা কেনা-বেচার ধারা দীর্ঘদিনের, যেটি এখনও অব্যাহত।

কেন বাড়ছে দাম?

১. আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য: ডলারের বিপরীতে টাকার মান যে কমছে, তা সোনা-রূপার আন্তর্জাতিক দরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রবৃদ্ধipur্ণ করে।
২. জিওপলিটিক্যাল অস্থিরতা: ইউক্রেন-ইসরায়েল সংকট, চীনা-আমেরিকান বাণিজ্যবিহীনতা—এসব ঘটনা অস্থিরতা তৈরী করে, যার ফলে সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখা হয়।
৩. বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: চোরাচালান রোধ এবং আমদানী শুল্ক বৃদ্ধি সোনার অভ্যন্তরীণ সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। কম সরবরাহে দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।
৪. চাহিদা বৃদ্ধি: বিয়ের মৌসুম, পূজো উৎসব ইত্যাদির সময়ে সোনার চাহিদা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, যা সোনার দাম বাড়িয়ে দেয়।

বিনিয়োগকারীদের করণীয়

  • দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ: সোনাকে সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করলে সামান্য ওঠাপড়াও সময়ের সাপেক্ষে ক্ষতি নয়।
  • বাজার পর্যবেক্ষণ: আন্তর্জাতিক বাজারের রিপোর্ট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য বুঝে আচরণ করা উচিত।
  • বৈচিত্র্য: শুধুমাত্র সোনােই নয়, সম্পদবহির্ভূত বিভিন্ন আর্থিক পণ্যেও বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
  • বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতা: আসল সোনা কিনতে শুধুমাত্র সরকারি অনুমোদিত বা স্বীকৃত ডিলারদের কাছেই যেতে হবে।
Advertisements