ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি এবং অদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি অদানি (Gautam Adani)পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড (এপিএসইজেড)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর জায়গায় পুত্র করণ আদানিকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
গৌতম আদানি এখন থেকে কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও, কোম্পানিটি নিসান মোটরসের প্রাক্তন গ্লোবাল চিফ অপারেটিং অফিসার অশ্বিনী গুপ্তাকে নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ করেছে। এই ঘোষণা ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি একটি নিয়ন্ত্রক ফাইলিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা অদানি গ্রুপের কাঠামোগত পরিবর্তন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।
অদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বন্দর অপারেটর এবং লজিস্টিক কোম্পানি। গৌতম আদানির নেতৃত্বে এই কোম্পানি দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, তাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ানো এবং করণ আদানির নিয়োগ কোম্পানির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিকে একটি পরিকল্পিত রূপান্তরের ইঙ্গিত দেয়।
করণ আদানি ২০১৬ সাল থেকে এপিএসইজেড-এর সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তিনি মুন্দ্রা বন্দর থেকে শুরু করে ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং ইসরায়েলে নতুন বন্দর ও টার্মিনাল স্থাপনের মাধ্যমে কোম্পানির পোর্টফোলিও সম্প্রসারণ করেছেন।
করণ আদানির নেতৃত্বে অদানি পোর্টস ভারতের দ্রুতবর্ধনশীল সমন্বিত পরিবহন ইউটিলিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কোম্পানিটি বর্তমানে ভারতের ১৪টি বন্দর পরিচালনা করে এবং দেশের বাইরে ইসরায়েলের হাইফা, শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং তানজানিয়ার দার এস সালামে বন্দর পরিচালনা করছে।
এছাড়াও, ভিয়েতনামের দা নাং-এ একটি নতুন গ্রিনফিল্ড বন্দর প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্পগুলি ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
গৌতম আদানি নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন, যা ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তাঁর বর্তমান মেয়াদের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তিনি অদানি গ্রুপের সামগ্রিক কৌশল এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
তাঁর নেতৃত্বে অদানি গ্রুপ বন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সবুজ শক্তি, সিমেন্ট এবং রিয়েল এস্টেটের মতো বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত হয়েছে। তবে, গৌতম আদানি এবং তাঁর গ্রুপের বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের আর্থিক জালিয়াতি এবং শেয়ার মার্কেট কারচুপির অভিযোগের মতো বিতর্কও উঠেছে, যদিও অদানি গ্রুপ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নতুন সিইও অশ্বিনী গুপ্তার নিয়োগ অদানি পোর্টসের বৈশ্বিক প্রভাব বাড়ানোর কৌশলের অংশ। গুপ্তার বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব দক্ষতা কোম্পানির আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ এবং উদ্ভাবনের লক্ষ্যে সহায়ক হবে। করণ আদানি এই নিয়োগকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা অদানি গ্রুপের বিশ্বব্যাপী বন্দর খাতে নেতৃত্বের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
এই পরিবর্তন অদানি গ্রুপের পারিবারিক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দেয়। গৌতম আদানি জানিয়েছেন যে তাঁর পুত্র করণ এবং জীত আদানি, সেইসঙ্গে তাঁর ভাইপো প্রণব এবং সাগর আদানি, পরিবারের ঐক্য বজায় রেখে গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনা করতে চান। তবে, তিনি এও স্পষ্ট করেছেন যে বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে কাউকে নিয়োগের পরিকল্পনা নেই।
পুরনো বলেই নতুন ইতিহাস! গম্ভীরের ত্রিশূল কৌশলে ঘুরে দাঁড়াল ভারত
এই পদক্ষেপ অদানি পোর্টসের শেয়ার মূল্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঘোষণার পর কোম্পানির শেয়ার মূল্য ১.৩৯% বেড়ে ১,০৯৩.৫০ টাকায় পৌঁছেছে। অদানি পোর্টস ভারতের অবকাঠামো খাতে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এই নতুন নেতৃত্বের অধীনে আরও প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।