গেইল (ইন্ডিয়া) লিমিটেড শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করল। সংস্থার সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (সিজিডি) নেটওয়ার্কের আওতায় ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জিওগ্রাফিক্যাল এরিয়ায় (জিএ) টাটা স্টিল লিমিটেডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হলো ঐতিহাসিক গ্যাস সেলস এগ্রিমেন্ট (জিএসএ)। এই চুক্তির মাধ্যমে গেইলের সিজিডি কার্যক্রমে প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বড় শিল্প গ্রাহককে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
নতুন অধ্যায়ের সূচনা
গেইলের তরফে জানানো হয়েছে, এই মাইলফলক শুধুমাত্র পূর্ব সিংভূম নয়, বরং গেইলের অন্যান্য সিজিডি নেটওয়ার্ক যেমন বারাণসী, পাটনা, রাঁচি, কটক ও খুর্দা অঞ্চলেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, টাটা স্টিলের জামশেদপুরে অবস্থিত কম্বি-মিল প্ল্যান্টে প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ৩১,০০০ এসসিএমডি (স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার/ডে) প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে, যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩,০০০ এসসিএমডি-তে পৌঁছাবে। এই পদক্ষেপকে শিল্পখাতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গেইলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কৌশলগত চুক্তি ভারতের শিল্পখাতকে পরিচ্ছন্ন ও কার্যকর জ্বালানির দিকে এগিয়ে নেবে এবং দেশের জ্বালানি রূপান্তর যাত্রায় এক বড় সুযোগ তৈরি করবে।
প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে ভারতের বিপুল অগ্রগতি: GAIL Tata Steel gas agreement
প্রকৃতপক্ষে, গত এক দশকে ভারতের গ্যাস ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সালে পাইপড ন্যাচারাল গ্যাস (পিএনজি) সংযোগ ছিল মাত্র ০.২৫৪ কোটি, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪৭ কোটিতে—অর্থাৎ প্রায় ছয়গুণ বৃদ্ধি। একইভাবে, কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) স্টেশন ২০১৪ সালের ৭৩৮ থেকে ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭২০-এ, যা দশগুণেরও বেশি বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (সিজিডি) নেটওয়ার্কও বিস্তৃত হয়েছে ব্যাপক হারে। ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ৫৩টি জিএ অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেখানে ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৭টি জিএ-তে। জনসংখ্যার দিক থেকে সিজিডি কভারেজ ১৩.২৭ শতাংশ থেকে প্রায় ১০০ শতাংশে, আর ভৌগোলিক দিক থেকে ৫.৫৮ শতাংশ থেকে প্রায় ১০০ শতাংশে পৌঁছে গেছে।
অপারেশনাল ন্যাচারাল গ্যাস পাইপলাইনের দৈর্ঘ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালের ১৫,৩৪০ কিমি থেকে তা বেড়ে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৫,১২৪ কিমি-তে। একইসঙ্গে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে—৪ থেকে ৮-এ—এবং তাদের সম্মিলিত ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ এমএমটিপিএ থেকে ৫২.৭ এমএমটিপিএ।
বায়োফুয়েল নীতি ও ইথানল মিশ্রণে সাফল্য:
জ্বালানি রূপান্তরে ভারতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো বায়োফুয়েল নীতি। ২০২২ সালে সংশোধিত জাতীয় বায়োফুয়েল নীতির লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণ নিশ্চিত করা হবে।
২০১৪ সালে যেখানে ইথানল মিশ্রণ ছিল মাত্র ১.৫৩ শতাংশ, ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৫ শতাংশে। ইথানল সংগ্রহও বিপুল হারে বেড়েছে—২০১৪ সালের ৩৮ কোটি লিটার থেকে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৪৪০.৭৪ কোটি লিটার।
শেষ কথা:
গেইল ও টাটা স্টিলের এই ঐতিহাসিক চুক্তি শুধু ঝাড়খণ্ড নয়, বরং গোটা ভারতের শিল্পায়ন ও জ্বালানি নীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। প্রাকৃতিক গ্যাস, সিএনজি, পিএনজি এবং ইথানল মিশ্রণে ভারতের অগ্রগতি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ঝাড়খণ্ডের এই উদ্যোগ প্রমাণ করল, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানও টেকসই জ্বালানি ব্যবহারে এগিয়ে আসতে পারে, যা আগামী দিনের সবুজ ভারতের স্বপ্নপূরণের পথে বড় পদক্ষেপ।