২০২৫ সালের জুন মাসে ভারতের শিক্ষক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে — এটি হলো আগামী ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের (8th Pay Commission) প্রস্তাবিত পরিবর্তন। সারা দেশের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন, কর্মক্ষেত্রের স্থিতিশীলতা এবং পেশাগত চাপ হ্রাসের জন্য আন্দোলন করছেন। বর্তমানে শিক্ষকদের মধ্যে সামাজিক ও আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তারা এই কমিশনের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রা উন্নত করার প্রত্যাশা পোষণ করছেন।
শিক্ষকদের প্রধান দাবির একটি হলো বেতন সংরচনা। বর্তমান বেতন স্তর অনেক ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে বেতন বৃদ্ধির হার মন্দগতিতে চলেছে, যা শিক্ষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। তারা দাবি করছেন যে, ৮ম বেতন কমিশনের মাধ্যমে কমপক্ষে ৩০-৪০% বেতন বৃদ্ধি করা হোক, যাতে শিক্ষকরা নিরাপদভাবে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারেন। এছাড়া, গ্রামীণ এলাকার শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতা এবং দূরবর্তী অঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য হার্ডশিপ ভাতার প্রস্তাব রয়েছে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেস হ্রাস। শিক্ষকরা প্রায়শই অতিরিক্ত কাজের ভার, ক্লাস পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে থাকেন। এই চাপের কারণে অনেক শিক্ষক মানসিক চাপে ভোগেন এবং তাদের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শিক্ষক নেতারা দাবি করছেন যে, সরকার ক্লাসের সংখ্যা ও কাজের দায়িত্ব কমিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ তৈরি করুক। এর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং কাউন্সেলিং সেবার ব্যবস্থা করারও প্রস্তাব রয়েছে।
তৃতীয় দাবি হলো পেশাগত উন্নতির সুযোগ। শিক্ষকরা চান, নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সেমিনার এবং শিক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে আপডেট থাকার সুযোগ দেওয়া হোক। বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে ডিজিটালাইজেশন বাড়ছে, তাই শিক্ষকদের জন্য টেকনোলজি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। এই উন্নতির মাধ্যমে শিক্ষকরা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারবেন, যা শিক্ষা মান উন্নত করবে।
অনেক শিক্ষকের মতে, বেতন কমিশনের পরামর্শে শিক্ষকদের পেনশন সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ন্যূনতম পেনশনের সমস্যায় ভোগেন। তাই, পেনশনের হার বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা বাড়ানোর দাবি রয়েছে। এটি শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, এই দাবিগুলো শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধার জন্য নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বমানে প্রতিযোগিতা করতে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন ও সুবিধা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। তবে, কতটা সফল হবে এই দাবি, তা নির্ভর করছে সরকারের ইচ্ছাশক্তি ও নীতি গ্রহণের ওপর।
শিক্ষক সমাজের এই আন্দোলনটি সময়ের দাবি। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি সত্যিই উন্নত হতে চায়, তবে শিক্ষকদের স্থিতিশীলতা ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা জরুরি। ৮ম বেতন কমিশনের সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের জীবনকে স্ট্রেসমুক্ত করে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে নিতে পারে, যদি সরকার তাদের কণ্ঠকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।