বর্তমান সময়ে চাকরিজীবীদের জন্য অর্থ সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে আর্থিক সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে লং-টার্ম সম্পদ তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অনেক সময় আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের কথা শুনলেও, এমন কিছু কম ঝুঁকির বিকল্পও আছে যা ফিক্সড ডিপোজিটের (FD) চেয়ে ভালো রিটার্ন দিতে পারে এবং মানসিক শান্তিও বজায় রাখে।
কম ঝুঁকির এই বিনিয়োগগুলি শুধুমাত্র ভালো রিটার্নই দেয় না, বরং সেগুলো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং নিরাপদ। সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগ যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, তত বেশি লাভ পাওয়া যায় কম্পাউন্ডিংয়ের জাদুর কারণে। সময়ের সাথে সাথে এই ছোট ছোট বিনিয়োগ বড় ফান্ডে পরিণত হয়।
নিচে কিছু জনপ্রিয় কম ঝুঁকির বিনিয়োগের কথা আলোচনা করা হলো, যা চাকরিজীবীরা সহজেই বেছে নিতে পারেন।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF):
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প। এর মেয়াদ ১৫ বছর এবং এই সময়ের মধ্যে করা অবদান, প্রাপ্ত সুদ এবং ম্যাচুরিটি এমাউন্ট সম্পূর্ণ করমুক্ত। বর্তমানে এই স্কিমে বার্ষিক ৭.১ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে, যা প্রতি ত্রৈমাসিকে সরকার পর্যালোচনা করে।
পিপিএফের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিরাপত্তা এবং কর সাশ্রয়। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি দারুণ বিকল্প।
প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF):
কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা EPF একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবসরকালীন সঞ্চয় প্রকল্প। চাকরিজীবীদের মাসিক বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ PF-এ জমা হয় এবং এর সমান পরিমাণ অর্থ নিয়োগকর্তাও PF-এ জমা দেন। বর্তমানে EPF-এ বার্ষিক ৮.২৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে।
EPF এর সুদ সম্পূর্ণ করমুক্ত, এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি বিশাল অবদান রাখতে পারে অবসরকালীন তহবিলে।
সোনা:
ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনা একটি ঐতিহ্যবাহী এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনিয়োগের মাধ্যম। এটি মুদ্রার মান হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে একটি হেজ হিসেবে কাজ করে। সাধারণত সোনায় বার্ষিক গড় রিটার্ন প্রায় ১০ শতাংশ হয়ে থাকে।
সোনা সরাসরি ফিজিক্যালি কিনতে পারেন, অথবা গোল্ড ETF এবং সোনার বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য এবং স্থিতিশীলতা আনে।
আরবিট্রেজ মিউচুয়াল ফান্ড:
আরবিট্রেজ ফান্ডগুলো ইকুইটি এবং ডেরিভেটিভ মার্কেটে দামের পার্থক্য থেকে মুনাফা করে। এগুলো সবচেয়ে কম ঝুঁকির মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে পড়ে। যাঁরা স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদে অর্থ পার্ক করতে চান, তাঁদের জন্য এটি চমৎকার একটি বিকল্প।
গত এক বছরে অনেক আরবিট্রেজ ফান্ড প্রায় ৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ফলে চাকরিজীবীরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং ভালো রিটার্নের জন্য এই ফান্ড বেছে নিতে পারেন।
আরবিআই সেভিংস বন্ড:
ভারত সরকার আরবিআই সেভিংস বন্ড চালু করেছে, যা ভারতীয় নাগরিক, হিন্দু অবিভাজ্য পরিবার (HUF), চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উন্মুক্ত। এই বন্ড ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা এবং স্টক হোল্ডিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের মাধ্যমে কেনা যায়।
এই বন্ডের মেয়াদ ৬ বছর এবং বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হয়, যা অর্ধবার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ হয়। এখানে বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই, যা বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক।
কর্পোরেট বন্ড:
কর্পোরেট বন্ড হলো কোম্পানিগুলির দ্বারা ইস্যু করা ঋণপত্র, যা মূলত মূলধন সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো সরকারি সিকিউরিটির চেয়ে বেশি রিটার্ন অফার করে, তবে এখানে কিছুটা ক্রেডিট রিস্কও থাকে।
যাঁরা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি রিটার্ন চান এবং ঝুঁকির সীমিত পরিমাণ নিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য কর্পোরেট বন্ড একটি ভালো বিকল্প। সাধারণত এই ধরনের বন্ডের রিটার্ন ৮-৯ শতাংশের মধ্যে থাকে।
কেন শুরু করা উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব?
বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সময় এবং কম্পাউন্ডিং। চাকরিজীবীরা তাঁদের আয়ের একটি ছোট অংশ নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ করতে শুরু করলে, তা ভবিষ্যতে একটি বিশাল তহবিলে পরিণত হতে পারে। পাশাপাশি, আর্থিক চাপ কমে এবং অবসরকালীন জীবনে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
সঠিক সময়ে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং মানসিক শান্তির চাবিকাঠি। তাই আজই আপনার বিনিয়োগ পরিকল্পনা শুরু করুন এবং কম ঝুঁকির এই বিকল্পগুলোর মধ্যে থেকে আপনার উপযোগী অপশন বেছে নিন।
শেষ কথা, ঝুঁকি এবং রিটার্নের ভারসাম্য বজায় রেখে সঠিক বিনিয়োগে এগিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে বড় বুদ্ধিমত্তার কাজ। ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য নিজের আর্থিক পরিকল্পনায় একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করুন।