কর্মজীবনের অন্যতম ভরসা প্রভিডেন্ট ফান্ড বা PF। প্রতিমাসে বেতনের একটি অংশ জমা পড়ে এই অ্যাকাউন্টে, আর দীর্ঘদিনের সঞ্চয়ে এটি হয়ে ওঠে কর্মীদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার বড় ভিত্তি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, প্রয়োজনে PF তোলার ক্ষেত্রে বহু কর্মী নানা জটিলতা, কাগজপত্রের ঘাটতি এবং লম্বা অপেক্ষার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। সেই সমস্যাগুলি দূর করতেই EPFO এখন ডিজিটাল পরিষেবার ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষত UMANG অ্যাপের মাধ্যমে PF তোলার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ, স্বচ্ছ ও দ্রুত করা হয়েছে, যাতে কর্মীরা প্রয়োজনের সময়ে কোনো ঝামেলায় না পড়েন।
ইন্দোর প্রভিডেন্ট ফান্ড সংস্থার আঞ্চলিক কমিশনার মোহাম্মদ শোয়েব শেখ জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে এখন PF তোলার আবেদন পুরোপুরি অনলাইনেই করা সম্ভব। তাঁর কথায়, “আগের মতো দীর্ঘ অপেক্ষা বা অফিসে বারবার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন শুধু একটি UAN (Universal Account Number) থাকলেই কর্মীরা UMANG অ্যাপের মাধ্যমে তাদের PF তোলার দাবি জমা দিতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন জমা হলে সাধারণত ১০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়।” এই পরিবর্তনকে তিনি “কর্মীদের বাস্তব উপকারে আসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলির একটি” বলে মন্তব্য করেন।
যদিও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, তবুও যাঁরা অনলাইনে পরিষেবা নিতে অসুবিধা বোধ করেন বা যাঁদের স্মার্টফোন নেই, তাঁদের জন্য স্থানীয় PF অফিসে অফলাইন সাহায্যের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। অফিসের কর্মীরা প্রয়োজনীয় নথি, ফর্ম এবং প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে বুঝিয়ে দেন। অনেক সিনিয়র কর্মী বা গ্রামীণ এলাকার মানুষদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। ফলে ডিজিটাল ও অফলাইন—দুই পথই এখন সমান্তরালে রয়েছে, যাতে প্রতিটি কর্মী প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধা পান।
PF তোলার ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হলো সঠিক ফর্ম নির্বাচন করা। EPFO–র নিয়ম অনুযায়ী PF তোলার উদ্দেশ্য অনুযায়ী আলাদা ফর্ম জমা দিতে হয়। যেমন, ফর্ম ৩১ ব্যবহার করা হয় আংশিক অর্থ তোলার জন্য—যেটি চিকিৎসা, বাড়ি নির্মাণ, উচ্চশিক্ষা, বিয়ের খরচ বা জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করা যেতে পারে। আবার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর সম্পূর্ণ PF তোলার ক্ষেত্রে ফর্ম ১০সি বা ১৯ প্রযোজ্য হয়। সাধারণত চাকরি ছাড়ার দুই মাস পর কর্মী এই সম্পূর্ণ PF দাবি করতে পারেন। ভুল ফর্ম জমা দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে, ফলে প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটে। তাই EPFO কর্মীরা আবেদনকারীদের সঠিক ফর্ম বেছে নিতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করছেন।
ডিজিটাল PF পরিষেবা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে সাইবার প্রতারণার ঝুঁকি। অনেক প্রতারক ভুয়ো ওয়েবসাইট বা মেসেজের মাধ্যমে PF ক্লেমের নাম করে ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড বা OTP চেয়ে নেন। ইন্দোর PF অফিসের সহকারী পরিচালক অমিত জয়স্বাল কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, “PF পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র UMANG অ্যাপ বা সরকারি EPFO ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই OTP বা UAN–এর পাসওয়ার্ড কাউকে শেয়ার করবেন না।” তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে দেশে PF সম্পর্কিত প্রতারণার ঘটনা বেড়েছে, তাই সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
UMANG অ্যাপের মাধ্যমে PF তোলার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। প্রথমে স্মার্টফোনে UMANG অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর ‘All Services’ থেকে EPFO নির্বাচন করতে হবে। সেখান থেকে ‘Employee Centric Services’–এ গিয়ে ‘Raise Claim’ বা প্রয়োজনীয় ফর্ম (ফর্ম 10C, 19, বা 31) বেছে নেওয়া যায়। এরপর UAN নম্বর এবং মোবাইল OTP দিয়ে লগইন করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে ফর্ম জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গে একটি ‘Acknowledgement Number’ পাওয়া যাবে। সেই নম্বরের মাধ্যমে আবেদনকারীরা তাদের দাবি কী অবস্থায় আছে তা নিয়মিতভাবে ট্র্যাক করতে পারবেন। এতে আর অযথা অফিসে যাওয়া বা দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ে না।
EPFO–র নতুন উদ্যোগ কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করছে। চিকিৎসা, জরুরি খরচ, বাড়ি কেনা বা নির্মাণ—যখনই আর্থিক সাহায্যের দরকার হয়, তখন PF একটি বড় সহায়ক। কিন্তু আগে জটিল কাগজপত্র এবং দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে অনেক কর্মী অসুবিধায় পড়তেন। এখন ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে PF তোলা আরও দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ হয়েছে। EPFO আশা করছে, এই নতুন ব্যবস্থার ফলে কর্মীরা ভবিষ্যতের সঞ্চয় আরও বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিচালনা করতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, UMANG অ্যাপ ভারতীয় কর্মীদের PF পরিষেবা ব্যবস্থায় এক ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠেছে। সরকারি দপ্তরের দীর্ঘ কাতার, ফর্ম জমা দিতে বারবার অফিসে যাওয়া, নথি গলদ—এসব ঝামেলা অনেকটাই কমেছে। একইসঙ্গে সাইবার নিরাপত্তার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে, যাতে কর্মীদের কঠিন পরিশ্রমের সঞ্চয় কোনোভাবেই বিপদের মুখে না পড়ে। ভবিষ্যতে EPFO এই ডিজিটাল পরিষেবাকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করছে, যাতে ভারতের কোটি কোটি কর্মীর PF–সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা হয় আরও সহজ, আরও স্বচ্ছ এবং আরও নির্ভরযোগ্য।


