কর্মজীবী মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ঘোষণা করল এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO)। সোমবার সন্ধ্যায় সংস্থাটি জানায়, সদস্যরা এখন থেকে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) অ্যাকাউন্ট থেকে ‘যোগ্য ব্যালেন্স’-এর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। দেওয়ালির আগে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে বড় আর্থিক উপহার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তে কর্মী ও নিয়োগকর্তা—উভয়ের অবদানই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। দেশের অবসরকালীন সঞ্চয় ব্যবস্থার নীতিতে এটি এক বড় পরিবর্তন। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ (CBT)-এর ২৩৮তম বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মন্ত্রী শোভা করন্দলাজে, শ্রম সচিব বন্দনা গুর্ণানি এবং সিপিএফ কমিশনার রমেশ কৃষ্ণমূর্তি।
পূর্ণ উত্তোলনের সুযোগ:
এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ PF উত্তোলন কেবল অবসর বা দীর্ঘকাল বেকার থাকার মতো বিশেষ পরিস্থিতিতেই সম্ভব ছিল। চাকরি হারানোর পর এক মাসে ৭৫% এবং দুই মাসে বাকি ২৫% তোলা যেত। কিন্তু নতুন নিয়মে সদস্যরা চাইলে একবারেই পুরো যোগ্য ব্যালেন্স তুলতে পারবেন, যা জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে অনেকটা স্বাধীনতা দেবে।
বাড়ি কেনা, নির্মাণ বা ইএমআই পরিশোধের ক্ষেত্রেও আগে ৯০% পর্যন্ত অর্থ তোলার অনুমতি ছিল। এখন সেই সীমা ১০০% পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সহজতর নিয়ম ও উদার উত্তোলন সীমা: EPFO 100% PF Withdrawal
আগের ১৩টি জটিল উত্তোলন ধারাকে একত্রিত করে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে — প্রয়োজনীয়তা (শিক্ষা, অসুস্থতা, বিবাহ), আবাসন, এবং বিশেষ পরিস্থিতি। এখন থেকে সদস্যরা শিক্ষা খাতে সর্বাধিক ১০ বার এবং বিবাহের জন্য ৫ বার অর্থ তুলতে পারবেন, যা আগে ছিল যৌথভাবে ৩ বার। আংশিক উত্তোলনের ন্যূনতম চাকরির মেয়াদ একীভূত করে ১২ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লকআউট, বেকারত্ব) আর নির্দিষ্ট কারণ জানাতে হবে না। এর ফলে দাবি খারিজের হার কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ে জোর:
অর্থ তোলার স্বাধীনতা দেওয়ার পাশাপাশি, সদস্যদের অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ২৫% ব্যালেন্স রাখার শর্ত করা হয়েছে, যাতে তারা ৮.২৫% বার্ষিক সুদ ও চক্রবৃদ্ধি হারে সঞ্চয়ের সুফল পেতে পারেন।
এছাড়া ‘জিরো-ডকুমেন্টেশন’ প্রক্রিয়ায় সব আংশিক উত্তোলন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্পত্তি হবে, প্রশাসনিক দেরি অনেক কমবে।
সময়সীমা বাড়ল:
প্রিম্যাচিউর সেটেলমেন্টের সময়সীমা দুই মাস থেকে কমিয়ে ১২ মাস করা হয়েছে, আর পেনশন উত্তোলনের সময়সীমা ২ মাস থেকে ৩৬ মাসে বাড়ানো হয়েছে।
শেষ কথা:
এই পদক্ষেপগুলি কর্মীদের আর্থিক প্রয়োজনে নমনীয়তা আনবে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। সরকার জানিয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিকে আধুনিক ও কর্মজীবীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাজাতেই এই সংস্কার।