অবসরে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করছেন? EPF-এ বিনিয়োগই হতে পারে সেরা উপায়

ভারতের বেসরকারি ও সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অবসর সঞ্চয়ের মাধ্যমগুলির মধ্যে অন্যতম কর্মচারী ভবিষ্যনিধি (Employees’ Provident Fund বা EPF)। কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংস্থা (EPFO) এই…

8th Pay Commission Hike: How It Can Fund Your Daughter’s Education Dreams

ভারতের বেসরকারি ও সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অবসর সঞ্চয়ের মাধ্যমগুলির মধ্যে অন্যতম কর্মচারী ভবিষ্যনিধি (Employees’ Provident Fund বা EPF)। কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংস্থা (EPFO) এই প্রকল্পটি পরিচালনা করে। নিয়ম অনুযায়ী, একজন কর্মচারীর মূল বেতনের ১২ শতাংশ সরাসরি কেটে নেওয়া হয় এবং তার সঙ্গে যোগ হয় নিয়োগকর্তার ১২ শতাংশ অবদান। তবে নিয়োগকর্তার এই অবদানের একটি অংশ কর্মচারী পেনশন স্কিমে (EPS) চলে যায় এবং বাকিটা জমা হয় কর্মচারীর EPF অ্যাকাউন্টে।

এই নিয়মিত অবদান বাধ্যতামূলক হওয়ায় কর্মীদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র সরকার EPF টাকায় সুদও দেয়। বর্তমানে সুদের হার বার্ষিক ৮.২৫%, যা সঞ্চয়কে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

   

EPF-এর ক্ষেত্রে কর্মচারী ও নিয়োগকর্তা— উভয়েই সমানভাবে অবদান রাখেন। কর্মচারী তার মূল বেতনের ১২ শতাংশ জমা দেন। নিয়োগকর্তার অবদানও ১২ শতাংশ হলেও, তার মধ্যে ৮.৩৩ শতাংশ যায় EPS-এ (যা ভবিষ্যতে পেনশন দেয়) এবং ৩.৬৭ শতাংশ জমা হয় EPF-এ।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একজন কর্মীর মাসিক বেতন ৬৪,০০০ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৩১,৯০০ টাকা, গৃহভাড়া ভাতা (HRA) ১৫,৯৫০ টাকা এবং অন্যান্য ভাতা ১৬,১৫০ টাকা।

কর্মচারীর অবদান (১২% মূল বেতন) = ₹৩,৮২৮ প্রতি মাসে।
নিয়োগকর্তার অবদান (৩.৬৭% মূল বেতন) = ১,১৭২ টাকা প্রতি মাসে।
অর্থাৎ প্রতি মাসে প্রায় ৫,০০০ টাকা কর্মীর EPF অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

প্রতি বছর সাধারণত কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি হয়। যদি ধরে নেওয়া হয়, প্রতি বছর গড়ে ১০% হারে বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে, তাহলে EPF-এ জমা হওয়া টাকার পরিমাণও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হবে বার্ষিক ৮.২৫% হারে সুদ।

এইভাবে যদি একজন কর্মী ২৫ বছর বয়সে চাকরি শুরু করেন এবং নিয়মিত অবদান রাখতে থাকেন, তবে ৩৩ বছর পরে (অর্থাৎ ৫৮ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার সময়) তার অ্যাকাউন্টে জমা হবে বিশাল অঙ্কের টাকা।

গণনা অনুযায়ী, অবসরের সময় তিনি পাবেন প্রায় ৩.৫ কোটি টাকার করপাস। এর মধ্যে মোট নিজে ও নিয়োগকর্তা মিলে অবদান করেছেন প্রায় ১.৩৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা এসেছে শুধু সুদের মাধ্যমে।

EPF-এর পাশাপাশি রয়েছে EPS (Employees’ Pension Scheme)। নিয়োগকর্তার অবদানের মধ্যে ৮.৩৩% EPS-এ যায়। এর মাধ্যমে অবসরের পর মাসিক পেনশন পাওয়া যায়। বর্তমানে EPS-এর ন্যূনতম পেনশন ১,০০০ টাকা নির্ধারিত। তবে পেনশনের পরিমাণ নির্ভর করে কর্মীর শেষ কয়েক বছরের গড় বেতন ও কত বছর চাকরি করেছেন তার উপর।

Advertisements

যদিও এই ন্যূনতম পেনশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাSet featured imageয় ১,০০০ টাকা মাসিক পেনশন যথেষ্ট নয়। তাই সরকারের কাছে পেনশনের হার বাড়ানোর দাবি জোরালো হচ্ছে।

কেন EPF এত গুরুত্বপূর্ণ?
1. নিরাপদ সঞ্চয়: সরকার পরিচালিত হওয়ায় ঝুঁকি নেই।
2. নিয়মিত সুদ: বর্তমানে ৮.২৫% বার্ষিক সুদ, যা সঞ্চয়ের গতি বাড়ায়।
3. কর ছাড়ের সুবিধা: EPF-এ জমা টাকার উপর আয়কর আইনের ৮০C ধারা অনুযায়ী কর ছাড় পাওয়া যায়।
4. দীর্ঘমেয়াদি করপাস: অবসরের সময় বিশাল অঙ্কের টাকা জমা হয়, যা ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করে।
5. বীমার সুবিধা: EPF-এর সঙ্গে যুক্ত EDLI (Employees’ Deposit Linked Insurance) স্কিমে মৃত্যুর ক্ষেত্রে পরিবার বীমার টাকা পায়।

বর্তমান সময়ে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, স্বাস্থ্য খরচ এবং আয়ু বৃদ্ধির কারণে অবসর-পরবর্তী জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ব্যাংকের নির্দিষ্ট আমানত (FD) বা অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় EPF একটি সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল আয়ের মাধ্যম।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র EPF-এর উপর নির্ভর না করে, কর্মীদের উচিত সমান্তরালভাবে অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যম যেমন মিউচুয়াল ফান্ড, পিপিএফ, ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS) ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করা। এতে অবসরের পর আয়ের উৎস আরও বহুমুখী হবে।

EPF শুধু একটি সঞ্চয় প্রকল্প নয়, বরং এটি প্রতিটি কর্মীর ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার ভিত্তি। বাধ্যতামূলকভাবে বেতনের একটি অংশ জমা হওয়ায় কর্মচারীরা নিয়মিত সঞ্চয়ে অভ্যস্ত হন। দীর্ঘ ৩০-৩৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে টাকা জমা হলে এবং তার সঙ্গে সরকার প্রদত্ত সুদ যোগ হলে অবসরের সময় একটি বিশাল করপাস গড়ে ওঠে।

একজন মধ্যবিত্ত কর্মচারীর জীবনযাত্রায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমনটি দেখা যাচ্ছে, মাসে মাত্র ৫,০০০ টাকা অবদান দিয়েও অবসরের সময় ৩.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় সম্ভব। এর সঙ্গে পেনশন ও বীমার সুবিধা তো রয়েছেই।
সুতরাং, কর্মচারী ভবিষ্যনিধি (EPF) শুধু বর্তমান নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্যও এক বড় সুরক্ষার ছাতা।