EOW-এর চার্জশিটে নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য, PMC ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে বড় ফাঁস

মুম্বাই পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা (EOW)-এর চার্জশিট এবং গ্রান্ট থর্নটনের ফরেনসিক অডিট রিপোর্টে পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ (PMC) ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি মামলায় গভীর এবং পরিকল্পিত প্রতারণার…

eow-chargesheet-reveals-shocking-details-in-pmc-bank-scam

মুম্বাই পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা (EOW)-এর চার্জশিট এবং গ্রান্ট থর্নটনের ফরেনসিক অডিট রিপোর্টে পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ (PMC) ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি মামলায় গভীর এবং পরিকল্পিত প্রতারণার তথ্য উঠে এসেছে। নথিপত্র অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করে একাধিক অ্যাকাউন্টকে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) হিসেবে ঘোষণা করেনি এবং ব্যাঙ্কের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করতে বড় আকারে হিসাবপত্রে কারচুপি করেছে।

প্রখ্যাত কোম্পানির অ্যাকাউন্ট NPA ঘোষণা হয়নি:

   

EOW-এর চার্জশিটে প্রকাশ পেয়েছে যে, বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টের সুদের পেমেন্ট দুই ত্রৈমাসিকেরও বেশি সময় ধরে বকেয়া ছিল এবং ৩১ মার্চ, ২০১৯ পর্যন্ত এগুলো নিয়মিত করা হয়নি। তা সত্ত্বেও, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI)-এর অডিটে কেলেঙ্কারি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাঙ্ক এই অ্যাকাউন্টগুলোকে NPA হিসেবে ঘোষণা করেনি।

কয়েকটি উদাহরণ:

অবচল শিপ রেকার্স লিমিটেড অ্যাকাউন্ট ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮-এ NPA হয়, কিন্তু ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ পর্যন্ত এটি প্রকাশ করা হয়নি।

ফ্রেন্ডস ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন অ্যাকাউন্ট ৩০ নভেম্বর, ২০০২-এ NPA হয়, তবুও ২০১৯ পর্যন্ত এটি গোপন রাখা হয়।

কানওয়াল কর্পোরেশন অ্যাকাউন্ট ২৪ এপ্রিল, ২০০৩-এ NPA হয়, কিন্তু ২০১৯ পর্যন্ত এটি প্রকাশ করা হয়নি।

এই ধরনের কয়েক ডজন অ্যাকাউন্ট বছরের পর বছর অনিয়মিত ছিল, এবং ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রকৃত অবস্থা দমন করেছে।

গ্রান্ট থর্নটন রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য:

গ্রান্ট থর্নটনের ফরেনসিক অডিট রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে, হাউজিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (HDIL) এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোর জন্য প্রদত্ত ৪১টি ঋণ অ্যাকাউন্ট ৯০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বকেয়া ছিল, কিন্তু এগুলোকে NPA হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়নি।

৩,২৭১.৮৪ কোটি টাকার বকেয়া সুদ সত্ত্বেও, এই পরিমাণগুলো মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত হিসাবে মিথ্যাভাবে দেখানো হয়েছে। RBI-এর নিয়ম অনুযায়ী, এই পরিমাণগুলো ফেরত করা উচিত ছিল। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, PMC ব্যাঙ্কের আয় কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, যার ফলে পাঁচ বছর ধরে মুনাফা এবং অন্যান্য আর্থিক মেট্রিক্সের ভুল উপস্থাপনা করা হয়েছে।

আর্থিক বছর অনুযায়ী অতিরিক্ত সুদ বুকিং:

২০১২-১৩: ৬১.৮৩ কোটি টাকা
২০১৪-১৫: ৩৭৪.৭৫ কোটি টাকা
২০১৭-১৮: ৭৮০.৫১ কোটি টাকা
এই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো পরিসংখ্যান ব্যাঙ্কের প্রকৃত আর্থিক স্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণরূপে আড়াল করেছে।

PMC ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি কী?

PMC ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি ২০১৯ সালে প্রকাশ্যে আসে। ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রক নিয়মগুলোকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করে এবং তার অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে। কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর, RBI ব্যাঙ্কের উপর কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করে, যার মধ্যে ছিল উত্তোলনের সীমাবদ্ধতা। এর ফলে অনেক সাধারণ আমানতকারী গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাদের জীবনের সঞ্চয় ব্যাঙ্কে আটকে যায়। পরবর্তীতে, তদন্তকারী সংস্থাগুলো এই মামলায় বেশ কয়েকজন মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।

কীভাবে কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছিল?

PMC ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা HDIL এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে ব্যাঙ্কের তহবিলের অপব্যবহার করে। এই সংস্থাগুলোকে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ব্যাঙ্কের মোট ঋণের প্রায় ৭৩ শতাংশ। এই ঋণগুলো বকেয়া হওয়া সত্ত্বেও, ব্যাঙ্ক কর্মকর্তারা এগুলোকে NPA হিসেবে ঘোষণা করেনি এবং হিসাবপত্রে কারচুপি করে ব্যাঙ্ককে লাভজনক দেখানোর চেষ্টা করে। এই প্রতারণার ফলে ব্যাঙ্কের আমানতকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হন।

আমানতকারীদের দুর্দশা:

PMC ব্যাঙ্কে আমানতকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ, যারা তাদের জীবনের সঞ্চয় এই ব্যাঙ্কে রেখেছিলেন। RBI-এর বিধিনিষেধের ফলে তাদের অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। অনেকে তাদের চিকিৎসা, শিক্ষা বা জরুরি প্রয়োজনের জন্য অর্থ পাননি, যা তাদের জীবনে গভীর সংকট সৃষ্টি করে। এই কেলেঙ্কারি শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, হাজার হাজার আমানতকারীর উপর মানসিক এবং সামাজিক প্রভাব ফেলেছে।

তদন্ত ও ন্যায়বিচারের পথে:

EOW-এর চার্জশিট এবং গ্রান্ট থর্নটনের ফরেনসিক অডিট রিপোর্ট এখন PMC ব্যাঙ্ক মামলায় ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। এই নথিগুলোতে প্রতারণার গভীরতা এবং ব্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃত অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের গ্রেফতার করেছে এবং এইচডিআইএল-এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

RBI-এর ভূমিকা:

RBI-এর অডিট এই কেলেঙ্কারি প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ব্যাঙ্কের হিসাবপত্রে অসঙ্গতি ধরা পড়ার পর, RBI অবিলম্বে PMC ব্যাঙ্কের কার্যক্রমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এছাড়াও, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যাঙ্কটিকে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে, আমানতকারীদের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:

PMC ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি ভারতের সমবায় ব্যাঙ্কিং খাতে নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি এবং তদারকির দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে। এই ঘটনার পর, RBI এবং সরকার সমবায় ব্যাঙ্কগুলোর উপর আরও কঠোর নজরদারি এবং নিয়ম-কানুন প্রয়োগের পরিকল্পনা করছে। এই কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে আরও কঠোর নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন।

PMC ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি ভারতের আর্থিক খাতে একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। EOW-এর চার্জশিট এবং গ্রান্ট থর্নটনের রিপোর্ট এই প্রতারণার গভীরতা এবং পরিকল্পিত প্রকৃতি প্রকাশ করেছে। আমানতকারীদের ন্যায়বিচার এবং তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য এই তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলা কেবল দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে না, বরং ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতারণা রোধে আর্থিক খাতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।