মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) আবারও দাবি করলেন যে নয়াদিল্লি তাকে “নো ট্যারিফ” বা শূন্য শুল্কের বাণিজ্য চুক্তি প্রস্তাব করেছে। তবে এই মন্তব্য ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি দ্য স্কট জেনিংস রেডিও শো–তে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি ট্যারিফ সম্পর্কে “যেকোনো মানুষের চেয়ে ভালো বোঝেন।” এ সময় তিনি ভারতকে “বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপকারী দেশ” বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প সরাসরি বলেন, “চীন আমাদেরকে ট্যারিফ দিয়ে শেষ করে দিচ্ছে, ভারতও তাই করছে, ব্রাজিলও করছে। ভারত হলো বিশ্বের সবচেয়ে ট্যারিফযুক্ত দেশ। এখন তারা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে যে ভারতে আর কোনো শুল্ক থাকবে না। কোনো ট্যারিফ নয়। যদি আমার ট্যারিফ ব্যবস্থা না থাকত, তারা কোনোদিন এই প্রস্তাব দিত না। তাই ট্যারিফ প্রয়োজন।”
ট্রাম্প এর আগে থেকেই বহুবার দাবি করে আসছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক একতরফা। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ভারত “মার্কিন বাজারে বিপুল পরিমাণ পণ্য বিক্রি করছে,” অথচ মার্কিন ব্যবসাগুলি ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে গেলে অযথা উচ্চ শুল্ক ও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি আরও যোগ করেন, “খুব কম মানুষ বোঝেন যে আমরা ভারতের সঙ্গে প্রায় কোনো ব্যবসা করি না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর ব্যবসা করে। কয়েক দশক ধরে এটা সম্পূর্ণ একতরফা সম্পর্ক।”
ট্রাম্প ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ককেও সমস্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, “তারা এখন শূন্য শুল্কে বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু এটা অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের বহু বছর আগেই এটা করা উচিত ছিল।”
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ট্রাম্পের এই অবস্থান ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে। সম্প্রতি এক মার্কিন আপিল আদালত তার আরোপিত শুল্ক ব্যবস্থা “অবৈধ” বলে রায় দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নষ্ট করছেন। সুলিভান বলেন, “আমরা প্রযুক্তি, প্রতিভা ও কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছি। কিন্তু পাকিস্তান যদি ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে ব্যবসা করে, তাহলে তিনি ভারতের সম্পর্ককে ফেলে দিচ্ছেন। জার্মানি বা জাপানও ভাববে, আগামীকাল আমরাও একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারি।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, তার কথায় কিছুটা সত্যতা থাকলেও তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আবার কেউ মনে করছেন, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিকে ব্যক্তিগত সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত অংশীদারিত্ব ফোরামের (USISPF) প্রেসিডেন্ট ও সিইও মুখেশ আঘি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট কিছু মন্তব্য করেন, আর তা কখনও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত, আবার কখনও নয়। যখন কোনো টুইট আসে বা ট্রুথ সোশালে কিছু লেখা হয়, তাতে আংশিক সত্য থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। ভারতীয় জনগণ যথেষ্ট পরিপক্ক, তারা দেশের জন্য যা সঠিক তাই করবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ট্রাম্পের প্রকাশ্য অভিযোগ ও শুল্ক আরোপ ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ককে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।
ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে মত হচ্ছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে সরাসরি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি প্রায়শই নির্বাচনী রাজনীতি বা অভ্যন্তরীণ সমর্থন জোগাড়ের কৌশল হিসেবে বিদেশনীতি সংক্রান্ত মন্তব্য করে থাকেন।
ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি শুল্ককে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং মনে করছেন যে এই চাপের মাধ্যমেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে বাস্তবে ভারত কতটা শূন্য শুল্ক বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
যদিও এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্ককে তীব্র করেছে, তবুও একথা পরিষ্কার যে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কেবল বাণিজ্য নয়, বৃহত্তর কৌশলগত স্বার্থের ওপরও নির্ভরশীল। তাই ট্রাম্পের বক্তব্যকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলেও, দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক একদিনের মন্তব্যে ভেঙে পড়বে না বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
For more updates, follow Kolkata24x7 on Facebook, Twitter, Instagram, Youtube; join our community on Whatsapp