আপনার স্বাস্থ্যবিমা কি কোভিড চিকিৎসা কভার করবে? জেনে নিন আজই

COVID-19 health insurance: দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনাগুলোর শর্তাবলী ভালোভাবে খতিয়ে দেখা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক বিদ্যমান…

COVID-19 health insurance

COVID-19 health insurance: দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনাগুলোর শর্তাবলী ভালোভাবে খতিয়ে দেখা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক বিদ্যমান স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনায় কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজনীয় খরচ পুরোপুরি কভার করা হয় না, যা সংকটকালীন সময়ে রোগী ও তাদের পরিবারের জন্য বড় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisements

আগের কোভিড তরঙ্গগুলো স্বাস্থ্যবিমার নানা সীমাবদ্ধতাকে সামনে এনে দিয়েছে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্যবিমায় হাসপাতালের রুম ভাড়া, আইসোলেশন বা আইসিইউ খরচ, এমনকি পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজারের মতো অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর খরচও কাভার করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা বা টেলি-কনসালটেশন সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা মহামারিকালে একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল।

   

স্বাস্থ্যবিমায় যেসব বিষয় রাখা উচিত
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের কমপক্ষে ১০-১৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা থাকা উচিত। যদি পরিবারে তিনজনের বেশি সদস্য থাকে, তাহলে ২০-২৫ লক্ষ টাকার ফ্লোটার কভার নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে পরিবারের যে কোনো একজন সদস্য গুরুতর অসুস্থ হলেও, পুরো পরিবারকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হয়।

বিমায় ‘ডোমিসিলিয়ারি ট্রিটমেন্ট’ বা বাড়িতে চিকিৎসার সুযোগ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কোভিড রোগী হালকা উপসর্গে ভুগলেও হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নেন, এবং এই খরচ অনেক সময়ই বিমায় কাভার হয় না। তাই বিমা নেয়ার আগে এই সুবিধাটি আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া উচিত।

টেলি-কনসালটেশনের সুবিধাও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন এতে চিকিৎসকদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করা যায়, অন্যদিকে এটি রোগী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য আর্থিক ও সময় সাশ্রয় করে।

রুম ভাড়ায় যেন সীমাবদ্ধতা না থাকে
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালের আলাদা ঘর বা আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে, যার খরচ সাধারণ ওয়ার্ডের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু অনেক বিমা পরিকল্পনায় রুম ভাড়া সীমাবদ্ধ থাকে—যেমন নীতিমালায় উল্লেখ থাকে ‘২% বা ১% অফ সাম ইনসিওরড’। এর ফলে রোগী বাধ্য হন নিজের পকেট থেকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে। তাই এখন বিমা পরিকল্পনায় রুম ভাড়ার ওপর কোনো সীমা না থাকা উচিত।

পুনরুদ্ধার (রিস্টোর) সুবিধা থাকা দরকার
রিস্টোর বেনিফিট একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। এতে যদি কেউ একবার বিমার পুরো কভারেজ ব্যবহার করে ফেলেন, তবুও একই পলিসি পিরিয়ডে আবার পুরো কভারেজ পুনরুদ্ধার হয়ে যায়, যা পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কাজে লাগে। কোভিড-১৯ এর মতো দীর্ঘমেয়াদী ও পুনরাবৃত্তিমূলক অসুখের জন্য এই সুবিধা অত্যন্ত কার্যকর।

পিপিই কিট, মাস্ক, স্যানিটাইজার যেন অন্তর্ভুক্ত হয়
কোভিড মহামারির সময় দেখা গেছে, প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার হয় এবং এসব খরচ প্রায়ই বিমা কাভারে ছিল না। অথচ এগুলো ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাই এখনকার বিমা পরিকল্পনায় এসব খরচ যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করা উচিত।

সুপার টপ-আপ পলিসি: অতিরিক্ত সুরক্ষা
অনেকেরই পুরনো স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনায় সীমিত পরিমাণ কভারেজ থাকে। সেক্ষেত্রে একটি ‘সুপার টপ-আপ পলিসি’ নেয়া যেতে পারে। এটি মূল বিমার অতিরিক্ত একটি সুরক্ষা স্তর হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘস্থায়ী অসুখ, বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা বড় অঙ্কের চিকিৎসা খরচের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর।

সুপার টপ-আপ পলিসি এক ধরনের দ্বিতীয় স্তরের বিমা, যা মূল বিমার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সক্রিয় হয়। এটি তুলনামূলকভাবে কম প্রিমিয়ামে বেশি কভারেজ দিয়ে থাকে, ফলে মধ্যবিত্তের জন্য এটি একটি ব্যয়সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিকল্প।

পুরনো পলিসি রিভিউ করাই এখন জরুরি
বিভিন্ন পুরনো স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনায় এখনও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন—ওপিডি (বাইরের চিকিৎসা) খরচ কভার করে না, নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালেই কভারেজ দেয়, বা বাড়িতে চিকিৎসার খরচ বহন করে না। তাই এখনই সময় নিজের বিদ্যমান স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনা ভালোভাবে পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজন হলে তা হালনাগাদ করা।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিমা শুধু একটি আর্থিক সুরক্ষা নয়, এটি জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। তাই এখনই সচেতন হোন, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনা নিশ্চিত করুন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি বিনিয়োগ—যা প্রয়োজনের সময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে।