বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক সচেতনতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অনেকেই এখন আগেভাগেই ঋণ শোধ করে আর্থিক মুক্তির পথ বেছে নিচ্ছেন। ইএমআই কমে, সুদের খরচ বাঁচে এবং ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি হয়। তবে একটি প্রশ্ন প্রায়শই উঠে আসে—ঋণ আগেভাগে শোধ করলে কি ক্রেডিট স্কোরে (Credit Score ) প্রভাব পড়ে? সরল উত্তর: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপকার হয়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক মাথায় রাখা জরুরি।
ভারতের ক্রেডিট স্কোর কিভাবে কাজ করে?
ভারতে চারটি অনুমোদিত ক্রেডিট ব্যুরো রয়েছে—TransUnion CIBIL, Experian, Equifax ও CRIF High Mark। এরা সাধারণত 300 থেকে 900-এর মধ্যে স্কোর নির্ধারণ করে থাকে। 750-এর ওপরে স্কোর থাকলে তা ভালো বলে ধরা হয় এবং সহজে ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড মঞ্জুর হয়।
ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়:
পেমেন্ট হিস্টোরি (৩৫–৪০%)
ক্রেডিট ব্যবহারের হার (২০–২৫%)
ক্রেডিট মিক্স ও মেয়াদ (২০–২৫%)
নতুন ক্রেডিট ইনকোয়ারি (১০%)
অন্যান্য: অ্যাকাউন্ট বয়স, মোট ঋণ ইত্যাদি
ঋণ প্রিপেমেন্টের সময় এসবের বেশ কয়েকটি উপাদানে প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে ক্রেডিট ব্যবহারের হার, অ্যাকাউন্ট বয়স, ও ক্রেডিট মিক্স।
আগেভাগে ঋণ শোধ করলে যেভাবে স্কোর বাড়ে:
মোট ঋণ কমলে ঝুঁকি কমে:
আংশিক বা পূর্ণ ঋণ শোধ করলে আপনার ওপরে থাকা মোট ঋণের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে ক্রেডিট ব্যবহারের হার (Credit Utilisation Ratio) কমে, যা একটি পজিটিভ সিগন্যাল দেয় ক্রেডিট ব্যুরোগুলিকে—আপনি ঝুঁকিপূর্ণ নন।
নিয়মিত পেমেন্টের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে:
যদি আপনি নিয়মিত ইএমআই দিয়ে এসে ঋণ শোধ করেন, তবে ক্রেডিট রিপোর্টে তা ‘Closed’ হিসেবে উল্লেখ থাকবে। এটি প্রমাণ করে আপনি দায়বদ্ধভাবে ঋণ শোধ করেছেন। এটি ভবিষ্যতের জন্য আপনার স্কোরে ভালো প্রভাব ফেলে।
‘Closed’ মানে খারাপ কিছু নয়:
অনেকেই ভাবেন ঋণ বন্ধ হলে স্কোর কমে যায়। বাস্তবে, এটি যদি ‘Settled’ না হয়ে ‘Closed’ হিসেবে রিপোর্টে ওঠে, তাহলে তা ইতিবাচক বিষয়। তবে যদি এটি আপনার একমাত্র ঋণ হিসেবেই থাকে, তাহলে সাময়িকভাবে স্কোর কিছুটা কমতে পারে, কারণ অ্যাকাউন্ট বয়স ও ডাইভার্সিটির প্রভাব পড়ে।
সতর্কতা: কিছু ক্ষেত্রে প্রিপেমেন্ট বিপরীত ফল দিতে পারে:
নতুন ঋণগ্রহীতাদের জন্য সাবধানতা:
আপনার ক্রেডিট ইতিহাস যদি খুব ছোট হয় এবং প্রিপেমেন্টের মাধ্যমে একমাত্র ঋণটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আপনার ক্রেডিট প্রোফাইল সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এটি স্কোরে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে আপনি যদি খুব শীঘ্রই নতুন ঋণের জন্য আবেদন করেন।
প্রিপেমেন্ট চার্জ:
RBI কিছু ঋণে (যেমন: ফ্লোটিং রেট ব্যক্তিগত ঋণ) প্রিপেমেন্ট চার্জ নিষিদ্ধ করেছে। তবে সব ঋণে তা প্রযোজ্য নয়। ফিক্সড রেট ঋণ বা বিজনেস ঋণে চার্জ লাগতে পারে। চুক্তিপত্র পড়া জরুরি।
অতিরিক্ত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার কী?
আপনি যদি খুব কম সুদের একটি ঋণ নিচ্ছেন, তাহলে প্রিপেমেন্টের বদলে সেই অর্থ কোথাও বিনিয়োগ করলে (যেমন: উচ্চ সুদের FD, মিউচুয়াল ফান্ড, বা ইমার্জেন্সি ফান্ডে) বেশি রিটার্ন পেতে পারেন। অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহারে সিদ্ধান্ত নিন।
প্রিপেমেন্ট করলে কি সঙ্গে সঙ্গে স্কোর বাড়ে?
তা নয়। ক্রেডিট ব্যুরোগুলি সাধারণত মাসে একবার তথ্য আপডেট করে। তাই প্রিপেমেন্টের ভালো প্রভাব দেখতে ৩০ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে। একটির পরিবর্তে আপনার সামগ্রিক ঋণ ব্যবহারের ধরন স্কোরে বেশি প্রভাব ফেলে।
প্রিপেমেন্টের পর কী করবেন?
- ব্যাংক থেকে NOC (No Objection Certificate) সংগ্রহ করুন।
- ৩০-৬০ দিন পর ক্রেডিট রিপোর্ট চেক করে দেখুন ঋণটি ‘Closed’ হিসেবে উঠেছে কি না।
- যদি ভুল থেকে থাকে, ডিসপিউট করে সংশোধন করান।
- ঋণ আগেভাগে শোধ করা আর্থিকভাবে একটি চতুর সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটি দায়মুক্তির পথ প্রশস্ত করে, স্কোরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং
- ভবিষ্যতের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। তবে তাৎক্ষণিক ফলের আশা না করে ধৈর্য ধরুন ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।
- ভারতের ক্রেডিট ইকোসিস্টেম এখন আরও বেশি গ্রাহকবান্ধব হচ্ছে। নতুন গ্রাহকদের জন্য প্রিপেমেন্টের প্রভাব যেমন বুঝতে হবে, তেমনি পুরনো
- গ্রাহকদের জন্যও এটি ক্রেডিট ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
- স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিন, সময়মতো ঋণ শোধ করুন, আর্থিক ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করুন।


