শুক্রবার সকালে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে মূল্যবান ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন (BTC) ১,১৭,০০০ ডলারের নিচে নেমে যায়। তবে ইথেরিয়াম (ETH), সোলানা (SOL), রিপল (XRP), ডজকয়েন (DOGE) ও লাইটকয়েন (LTC) সহ জনপ্রিয় অল্টকয়েনগুলির মধ্যে মিশ্র ধারা দেখা গেছে। বাজারের ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইনডেক্স ৫২ (নিউট্রাল) অবস্থায় রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা স্থিতিশীল থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাজারের সামগ্রিক চিত্র:
কয়েনমার্কেটক্যাপ-এর তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ দাঁড়িয়েছে ৪.০৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ০.৫১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বিটকয়েন (BTC): দাম দাঁড়িয়েছে ১,১৬,৮০১.২৫ ডলার (ভারতে প্রায় ১.০৩ কোটি টাকা), যা ২৪ ঘণ্টায় ০.২০% কমেছে।
ইথেরিয়াম (ETH): ৪,৫৩৮.১৬ ডলার (ভারতে ৪.০৩ লাখ টাকা), ২৪ ঘণ্টায় ০.৮৪% পতন।
ডজকয়েন (DOGE): ০.২৭৫৯ ডলার (ভারতে ২৪.৪৯ টাকা), ২৪ ঘণ্টায় ০.৪৫% হ্রাস।
লাইটকয়েন (LTC): ১১৭.৩৫ ডলার (ভারতে ১০,২৩৯ টাকা), ২৪ ঘণ্টায় ০.৪৫% বৃদ্ধি।
রিপল (XRP): ৩.০৩ ডলার (ভারতে ২৪৫.৬৪ টাকা), ২৪ ঘণ্টায় ০.৩৩% পতন।
সোলানা (SOL): ২৪৩.৯১ ডলার (ভারতে ২১,৬৬৫ টাকা), ২৪ ঘণ্টায় ০.৩২% বৃদ্ধি।
আজকের সেরা ক্রিপ্টো গেইনার (১৯ সেপ্টেম্বর):
১. Aster (ASTER): ০.৬২১৮ ডলার (+৫৩.৪২%)
২. Immutable (IMX): ০.৮৮৬১ ডলার (+১৬.২৭%)
৩. NEAR Protocol (NEAR): ৩.২৩ ডলার (+১১.৩১%)
৪. Avalanche (AVAX): ৩৪.৩৯ ডলার (+৫.১৫%)
৫. Polkadot (DOT): ৪.৬৫ ডলার (+৪.৩৪%)
আজকের সেরা ক্রিপ্টো লুজার (১৯ সেপ্টেম্বর):
১. MYX Finance (MYX): ১৩.৭৮ ডলার (-১৪.৭৭%)
২. MemeCore (M): ২.৫৪ ডলার (-১৩.৩৫%)
৩. Pump.fun (PUMP): ০.০০৭৪১২ ডলার (-১১.৩৮%)
৪. SPX6900 (SPX): ১.৩৭ ডলার (-৪.৭৭%)
৫. Bitcoin Cash (BCH): ৬১০.২৩ ডলার (-৩.৯৬%)
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
মুদ্রেক্স-এর সিইও এডুল প্যাটেল বলেছেন, “বিটকয়েন ১,১৭,২০০ ডলার স্তরে স্থিতিশীল আছে, যদিও ১,১৮,০০০ ডলার-এর উপরে ব্রেকআউটের চেষ্টা করেছিল। নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিটকয়েনে প্রবাহ বাড়ছে। ইথেরিয়ামও শক্তিশালী হচ্ছে, কারণ মাত্র ৭২ ঘণ্টায় প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ETH হোয়েলরা কিনেছে।”
কয়েনসুইচ মার্কেটস ডেস্ক জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রবল উত্থানের পর বাজার এখন কিছুটা শান্ত হচ্ছে। বিটকয়েন এই মাসে প্রায় ৮% বেড়েছে। তবে ১,১৭,০০০ ডলার স্তরে বাধা তৈরি হয়েছে। পরবর্তী রেজিস্ট্যান্স হতে পারে ১,২০,০০০ ডলার, আর সাপোর্ট রয়েছে ১,১০,০০০–১,১২,০০০ ডলার অঞ্চলে।
পাই৪২-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ শেখর বলেন, “আগস্টে হোয়েল ইনফ্লোতেই প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ঢুকেছে। এর ফলে বিটকয়েনের নতুন সর্বকালের উচ্চতা শিগগিরই দেখা যেতে পারে।”
ইউনোকয়েনের সিইও সাথবিক বিশ্বনাথ বলেন, “BTC ১,১৫,০০০–১,১৭,০০০ ডলার অঞ্চলে কনসোলিডেট করছে। তবে যদি ১,১৭,৮০০ ডলার ভেঙে যায়, তাহলে স্বল্পমেয়াদে দাম ১,১৮,৫০০ ডলার পর্যন্ত যেতে পারে।”
কয়েনডিসিএক্স রিসার্চ টিম জানিয়েছে, “ফেড রেট কাটের পর বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। যদিও ১,১৭,০০০ ডলার-এর নিচে নামায় কিছু মুনাফা বুকিং হয়েছে। তবে ইথেরিয়াম, সোলানা ও রিপল শক্তিশালী সাপোর্টে রয়েছে।”
৯ পয়েন্ট ক্যাপিটালের পার্থ শ্রীবাস্তব বলেন, “তারল্য অবস্থা উন্নত হচ্ছে, ইনস্টিটিউশনাল ইনফ্লো বাড়ছে এবং ভোলাটিলিটি কমছে। ফলে বিটকয়েন আগামী মাসগুলোতে ছয় অঙ্কের ডলার মূল্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।”
ক্রিপ্টো বাজার এখনো নিরপেক্ষ মানসিকতায় রয়েছে। বিটকয়েন ১,১৭,০০০–১,১৮,০০০ ডলার অঞ্চলে টানাপোড়েন করছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও হোয়েল কার্যকলাপ বাজারকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। অল্টকয়েনের মধ্যে সোলানা ও লাইটকয়েন ইতিবাচক সংকেত দেখাচ্ছে। আসন্ন সপ্তাহে ক্রিপ্টো বাজার আবারও চাঙ্গা হতে পারে।