China-India Relations: আজকের বিশ্বে বাণিজ্যিক ও ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। চিন (China) দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস বহন করে আসছে, হঠাৎই আমেরিকার বিরুদ্ধে শুল্ক যুদ্ধে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। চিনের বেইজিং এই সিদ্ধান্তকে “ন্যায্য বাণিজ্য রক্ষার জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকান শুল্ক নীতিকে “অত্যাচার” হিসেবে নিন্দা করেছে। এই ঘটনার পটভূমি, কারণ ও ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
ঘটনার পটভূমি
গত কয়েক মাস ধরে আমেরিকা তার বাণিজ্য নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নেতৃত্বে গত আগস্ট মাসের শুরুতে চিন ও ভারত উভয় দেশের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই শুল্ক বৃদ্ধি মূলত দুই উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে: একটি হলো আমেরিকার স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্যটি হলো চিন ও ভারতের সাথে বাণিজ্যিক প্রভাব কমানো। তবে এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। চিন, যে দেশটি আগে থেকেই আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, এবার ভারতকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করতে চায়।
চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ন্যায্য বাণিজ্যের জন্য লড়াই করব। আমেরিকার এই একপক্ষীয় পদক্ষেপ গ্লোবাল ইকোনমিক স্টেবিলিটিকে ক্ষতি করছে।” এই বিবৃতি চিন-ভারত সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এমন একটি সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক সবসময় সুখকর ছিল না। ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে ডোকলাম ও গালওয়ান উপত্যকার সংঘাত দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করেছে। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিক স্বার্থ এই ঐতিহাসিক বিরোধকে পেছনে ঠেলে দিয়ে একটি অস্বাভাবিক সহযোগিতার দ্বার খুলে দিয়েছে। ভারত ও চিনের মধ্যে ২০২৪ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৫% বৃদ্ধি পায়, যা ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই অর্থনৈতিক সংযোগটি আজকের সহযোগিতার মূল ভিত্তি হতে পারে।
আমেরিকার প্রতিক্রিয়া ও বিশ্বের চিন্তা
আমেরিকা এই সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। ট্রাম্পের প্রশাসনের একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, “চিন ও ভারত যদি একত্রিত হয়, তবে আমরা আমাদের বাণিজ্য নীতি আরও কঠোর করব।” এই বাক্যটি নতুন শুল্ক যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও রাশিয়া এই ঘটনাকে একটি “জটিল ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ” হিসেবে দেখছে। রাশিয়া, যে দেশটি ভারত ও চিনের তেল আমদানির একটি বড় উৎস, এই সহযোগিতাকে সমর্থন জানিয়েছে, কারণ এটি আমেরিকার শক্তি প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি
ভারত এই প্রস্তাবকে সতর্কভাবে বিবেচনা করছে। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা চিনের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা খোলা রাখছি, তবে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।” এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে ভারত চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে চায়, কিন্তু সীমান্ত নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই সহযোগিতা কতদূর গড়াবে তা এখনও অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে চিনের এই পদক্ষেপ মূলত আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে প্রेरিত। তবে ভারতের জন্য এটি একটি দ্বিধাগ্রস্ত পরিস্থিতি। একদিকে শুল্ক থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, অন্যদিকে চিনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বিশ্বাস গড়ে তোলা কঠিন হবে। গবেষকরা জোর দিয়েছেন যে ভারতের জন্য এই সময়ে সাবধানতা ও কৌশলগত পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।
চিন ও ভারতের এই অস্বাভাবিক সহযোগিতা বিশ্ব বাণিজ্যের এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। তবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস ও আন্তর্জাতিক চাপের ওপর। আমেরিকার শুল্ক নীতি যদি আরও কঠোর হয়, তবে এই সহযোগিতা আরও গভীর হতে পারে। তবে ভারতের জন্য এটি একটি সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের সমন্বয়। এই জটিল সমীকরণের মাঝে ভারত কীভাবে তার অবস্থান নির্ধারণ করে তা আগামী দিনে পরিষ্কার হবে।