কর ছাড়ের পরও দাম না কমালে ব্যবস্থা নেবে CBIC

কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (CBIC)-এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরী নতুন জিএসটি হারের পর যদি শিল্প মহল পণ্যের…

CBIC chairman

কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (CBIC)-এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকরী নতুন জিএসটি হারের পর যদি শিল্প মহল পণ্যের দাম না কমায়, তবে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। শিল্প সংগঠনগুলির অভিযোগ বা ভোক্তাদের অভিযোগ পাওয়া গেলে, তা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হবে বলেও তিনি স্পষ্ট করে দেন।

গত সপ্তাহে জিএসটি কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেয়। ৩৭৫টি পণ্যের করহার কমানোর পাশাপাশি বিদ্যমান চারটি স্তরের পরিবর্তে মাত্র দুটি স্তর রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সাধারণ ব্যবহার্য বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে এবং বাকি সব পণ্যের ওপর ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি ধার্য হবে। ফলে ১২ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশের দুটি স্তর সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১ জুলাই জিএসটি চালুর পর এটিই সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

   

সিবিআইসি (CBIC) চেয়ারম্যান আগরওয়াল জানান, অতীতে জিএসটি হার কমার পর শিল্প সংস্থাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোক্তাদের স্বার্থে পণ্যের দাম হ্রাস করেছে। বাজারে প্রতিযোগিতার চাপও এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে। তার দাবি, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে শিল্প মহল এবারও কর ছাড়ের সুবিধা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেবে। আর কোথাও অভিযোগ এলে আমরা সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করব।”

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, জিএসটি কার্যকর হওয়ার প্রথম কয়েক বছরে যখন একাধিকবার করহার কমানো হয়েছিল—২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে—তখনও খুব কম সংখ্যক ভোক্তা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে ছাড় পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাই এবারের পরিস্থিতিও ভিন্ন হবে না বলেই মনে করছে কেন্দ্র।

জিএসটি আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কর হ্রাস হলে সেই সুবিধা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ভোক্তা যাতে দাম কমানোর সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিং কর্তৃপক্ষও গঠন করেছিল। ভোক্তারা পণ্যের বিল বা রসিদের কপি দিয়ে অভিযোগ জমা দিতে পারেন, যদি দেখেন কর কমলেও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগরওয়াল জানান, জিএসটি চালুর পর এত বছর ধরে মোট ৭০৪টি মামলা এই কর্তৃপক্ষের কাছে নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা প্রথম ৩-৪ বছরের মধ্যেই দায়ের হয়েছিল। ওই সব মামলায় মোট ৪,৩৬২ কোটি টাকার মুনাফা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিযোগের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। এর অর্থ, জিএসটি ব্যবস্থা ক্রমে স্থিতিশীল হয়েছে এবং শিল্পক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বেড়েছে।

Advertisements

সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিং কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গ্রহণ করবে। এরপর আর নতুন অভিযোগ নথিভুক্ত করা হবে না। সরকারের যুক্তি, প্রাথমিক অস্থিরতা কেটে যাওয়ার পর এই কর্তৃপক্ষের ভূমিকা সীমিত হয়ে গেছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের পর এর প্রয়োজন থাকবে না।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশের নতুন হার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে যেসব পণ্য আগে ১২ শতাংশ বা ২৮ শতাংশ হারে করযুক্ত ছিল, সেগুলির দামে উল্লেখযোগ্য হ্রাস আসতে পারে। খাদ্যপণ্য, রান্নাঘরের সামগ্রী, দৈনন্দিন গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে কিছু ইলেকট্রনিক্স পণ্য পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে দাম কমতে পারে।

তবে সবটাই নির্ভর করছে শিল্পপতিরা কতটা দ্রুত ও কতটা পরিমাণে কর ছাড়ের সুবিধা ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেন তার ওপর। আগরওয়ালও এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাজারে প্রতিযোগিতার চাপে ব্যবসায়ীরা দামের ছাড় দিতে বাধ্য হবেন। কারণ, ভোক্তারা তুলনা করবেন এবং সস্তা পণ্য কিনবেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে দাম কমবে।”

শিল্প সংগঠনগুলির তরফে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, কর ছাড়ের ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে কিছুটা সময় লাগবে দাম কমতে। উৎপাদন খরচ, কাঁচামালের দাম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ের উপর নির্ভর করে পণ্যমূল্যের হ্রাস কার্যকর হবে। তবু শিল্পপতিরা কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

জিএসটি হার হ্রাস ও স্ল্যাব কমানোর এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভোক্তাদের স্বস্তি দেবে। তবে এর প্রকৃত সুফল মিলবে কেবল তখনই, যখন শিল্পমহল স্বচ্ছভাবে সেই সুবিধা ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেবে। আর তাতে ব্যর্থ হলে অভিযোগ তদন্তের জন্য সিবিআইসি (CBIC) ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৈরি রয়েছে। আগামী কয়েক মাসেই স্পষ্ট হবে নতুন ব্যবস্থার ফলে বাজারে আসলেই কতটা পরিবর্তন আসছে।