প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা (PM Ujjwala Yojana) উপভোক্তাদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক রান্নার গ্যাস ভর্তুকি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কর্মসূচির জন্য ১২,০০০ টাকা কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে, যা সরকারিভাবে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, PMUY উপভোক্তারা প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৯টি ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারে ৩০০ টাকা করে ভর্তুকি পাবেন। যাঁরা ৫ কেজির সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই পরিমাণ প্রোপোরশনালভাবে নির্ধারিত হবে।
উজ্জ্বলা যোজনার পটভূমি:
২০১৬ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা চালু করা হয়েছিল গরিব পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের রান্নার জন্য নিরাপদ ও পরিষ্কার জ্বালানি—এলপিজি সংযোগ—দেওয়ার লক্ষ্যে। যোজনাটি শুরু হওয়ার পর থেকে লক্ষ লক্ষ পরিবার উপকৃত হয়েছে। ২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১০.৩৩ কোটি উজ্জ্বলা সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের অধীনে উপভোক্তারা একবারেই একটি ডিপোজিট-ফ্রি এলপিজি সংযোগ পান, যার মধ্যে সিলিন্ডার, প্রেসার রেগুলেটর, সুরক্ষা হোস, গ্যাস কনজিউমার বুকলেট এবং সংযোগ ইনস্টলেশন খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। উজ্জ্বলা ২.০-এর আওতায় প্রথম রিফিল এবং একটি গ্যাস স্টোভও বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।
কেন দরকার ছিল এই ভর্তুকির?
আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি-র দামের অনিয়ন্ত্রিত ওঠানামার কারণে গরিব পরিবারগুলির উপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পায়। সেই প্রেক্ষাপটে সরকার ২০২২ সালের মে মাসে প্রতি সিলিন্ডারে ২০০ টাকা ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছিল, যাতে গ্যাসের ব্যবহার বজায় থাকে এবং পরিবারের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এই ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকা করা হয়, এবং সর্বোচ্চ ১২টি রিফিল পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হয়। বর্তমানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নতুন ঘোষণায় সর্বোচ্চ ৯টি রিফিলে ৩০০ টাকা ভর্তুকি চালু থাকছে।
এলপিজি ব্যবহারে বৃদ্ধি:
উজ্জ্বলা যোজনার এক বড় সাফল্য হল, এর ফলে গ্যাস ব্যবহারে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১৯-২০ সালে প্রতি উপভোক্তার গড় বার্ষিক রিফিল ছিল মাত্র ৩টি। ২০২২-২৩ সালে এটি বেড়ে হয় ৩.৬৮টি, আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪.৪৭টি। এই ধারা ইঙ্গিত দেয় যে, সুবিধাভোগী পরিবারগুলি গ্যাস ব্যবহারে আগ্রহী এবং তাদের রান্নার অভ্যাসেও পরিবর্তন আসছে।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ:
এই উদ্যোগ কেবল অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, একটি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যবান্ধব সমাজ গঠনের দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগুনে কাঠ, কয়লা বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বহু গ্রামের মহিলাদের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা, চোখে জ্বালা ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হতো। উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে সেই সমস্যা অনেকাংশে কমেছে।
পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা:
সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে গ্যাস সংযোগ শুধু দিয়ে থেমে না থেকে তা নিয়মিত ব্যবহার নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই ভর্তুকি কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই PCC (Per Capita Consumption) আরও বাড়িয়ে ৫-৬ রিফিল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায় সরকার, যাতে পরিবারগুলি বছরের অধিকাংশ সময়ই গ্যাসে রান্না করতে পারে।
এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতিকে পুনরায় জোরদার করল। ১২,০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ এবং রিফিলে ৩০০ টাকা ভর্তুকি এই কর্মসূচিকে আরও শক্ত ভিত দেবে এবং গরিব পরিবারের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার সাশ্রয়ী করে তুলবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু সামাজিক কল্যাণ নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও একটি বড় বার্তা—সরকার গরিবের পাশে রয়েছে।