AC Price Hike: এপ্রিল থেকে ব্লু স্টার এসির দাম বাড়বে ৪-৫%

ব্লু স্টার লিমিটেড আগামী এপ্রিল মাসে তাদের এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) দাম ৪-৫ শতাংশ বাড়ানোর (AC Price Hike) পরিকল্পনা করেছে। ধাতুর দামের অস্থিরতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার…

Blue Star AC Prices to Increase by 5% in April Amid Rising Costs

ব্লু স্টার লিমিটেড আগামী এপ্রিল মাসে তাদের এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) দাম ৪-৫ শতাংশ বাড়ানোর (AC Price Hike) পরিকল্পনা করেছে। ধাতুর দামের অস্থিরতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বি. থিয়াগরাজন বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। এটি এই বছরের দ্বিতীয় দফায় দাম বৃদ্ধি, যার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ৩-৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছিল।

   

“বর্তমানে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অস্থির আর্থিক বাজারের মধ্যে তামা ও ইস্পাতের দাম নিয়ে সত্যিকারের সমস্যা রয়েছে,” তিনি এনডিটিভি প্রফিটকে বলেন। “এছাড়াও বিনিময় হারের ওঠানামা রয়েছে এবং ভারতীয় টাকার মান কমছে। তাই আমাদের মার্জিন রক্ষা করতে এবং বাজারে অংশীদারিত্ব বজায় রাখতে দাম বাড়াতে হচ্ছে। আমরা এই খরচ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্তই শোষণ করতে পারি।”

বিক্রির লক্ষ্য ও বাজারে প্রবৃদ্ধি

ব্লু স্টার এই বছর ১৫ লক্ষ ইউনিট এসি বিক্রির আশা করছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি। গ্রীষ্মকালীন চাহিদা বৃদ্ধি, মানুষের হাতে বাড়তি আয় এবং সহজ ফাইন্যান্স স্কিমের প্রাপ্যতা এই প্রবৃদ্ধির পিছনে প্রধান কারণ। থিয়াগরাজন আরও জানান, কোম্পানি তাদের বাজার অংশীদারিত্বের লক্ষ্য সংশোধন করেছে। ২০২৬ আর্থিক বছরে রুম এসি-র বাজার অংশীদারিত্ব ১৪.৩ শতাংশে পৌঁছানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে ১৩.৯ শতাংশ। ২০২৭ আর্থিক বছরের শেষে এটি ১৫ শতাংশে পৌঁছবে। পূর্বে তারা ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে ১৫ শতাংশ অর্জনের পরিকল্পনা করেছিল। তিনি বলেন, “১৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব অর্জনের জন্য উত্তর ভারতে আমাদের আরও শক্তিশালী অবস্থান দরকার। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে ধারাবাহিকভাবে বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছি।”

নতুন মডেল ও স্মার্ট এসি-র জনপ্রিয়তা

বৃহস্পতিবার ব্লু স্টার ১৫০টি রুম এসি মডেল লঞ্চ করেছে, যার মধ্যে ৪০টি স্মার্ট ফিচারযুক্ত। কোম্পানি আশা করছে, এই আর্থিক বছরে স্মার্ট এসি-র বিক্রি ১ লক্ষ ইউনিটে পৌঁছবে, যা গত বছর ছিল মাত্র ২,০০০ ইউনিট। সাধারণ এসি এবং স্মার্ট এসি-র মধ্যে দামের ব্যবধানও প্রায় ১,০০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। থিয়াগরাজন জানান, ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে স্মার্ট এসি-র বিক্রি ৫ লক্ষ ইউনিটে পৌঁছবে, যা মোট বিক্রির প্রায় ৩০ শতাংশ হবে।

বিনিয়োগ পরিকল্পনা

২০২৬ আর্থিক বছরের জন্য ব্লু স্টার ৩১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছে। থিয়াগরাজন বলেন, “আমরা শ্রী সিটি প্ল্যান্টে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ২০০ কোটি টাকা, গবেষণা ও উন্নয়নে ৬০ কোটি টাকা এবং গ্রীষ্মকালে বিজ্ঞাপনের জন্য ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করব।” এই বিনিয়োগ কোম্পানির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে বর্তমান ১৪ লক্ষ ইউনিট থেকে ২০২৭ আর্থিক বছরে ১৮ লক্ষ ইউনিটে নিয়ে যাবে।

শিল্পে সরবরাহের ঘাটতি

ব্লু স্টারের এমডি পুনরায় জানান, শিল্পে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যদিও সরকার তামার টিউব এবং কম্প্রেসার আমদানির উপর থেকে বাধ্যতামূলক বিআইএস সার্টিফিকেশন মুক্ত করে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, “চীনা উৎপাদকরা সম্ভাব্য শুল্ক এড়াতে তাদের বেশিরভাগ চালান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। ফলে কম্প্রেসারের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কমে গেছে।” তবে, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ২০২৮ সালের মধ্যে সরকারের প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ স্কিমের মাধ্যমে ভারত কম্প্রেসার উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। তামার টিউবের ক্ষেত্রে, স্থানীয় ক্ষমতা তৈরি হয়েছে এবং আগামী ১২ মাসের মধ্যে চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে তিনি জানান।

বাজারের সম্ভাবনা

থিয়াগরাজনের মতে, “২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত ভোক্তা যুক্ত হবে। রুম এসি-র বাজার এখন একটি টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরে এটি তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাবে।” এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্লু স্টার তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। গ্রীষ্মকালীন চাহিদা, বাড়তি আয় এবং ফাইন্যান্স স্কিমের সহজলভ্যতা এই বৃদ্ধির পিছনে মূল চালিকাশক্তি।

উত্তর ভারতে প্রসার

ব্লু স্টারের বাজার অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য উত্তর ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। থিয়াগরাজন জানান, “আমরা উত্তর ভারতে আমাদের বিতরণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করছি। এই অঞ্চলে বিক্রি বাড়াতে আমরা নতুন ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি।” উত্তর ভারতের গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা এসি-র চাহিদা বাড়ায়, এবং ব্লু স্টার এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।

স্মার্ট এসি-র ভবিষ্যৎ

স্মার্ট এসি-র জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। ব্লু স্টারের নতুন লঞ্চ করা ৪০টি স্মার্ট মডেলে ওয়াই-ফাই সংযোগ, ভয়েস কমান্ড এবং শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি রয়েছে। দামের ব্যবধান কমানোর ফলে এই মডেলগুলি আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছবে। থিয়াগরাজন বলেন, “২০২৫-২৬ সালে স্মার্ট এসি আমাদের বিক্রির একটি বড় অংশ হয়ে উঠবে। প্রযুক্তি-সচেতন গ্রাহকরা এই মডেলগুলির দিকে ঝুঁকছেন।”

শিল্পের চ্যালেঞ্জ

কম্প্রেসারের সরবরাহ ঘাটতি এই শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চীন থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় ভারতীয় উৎপাদকদের উপর চাপ বাড়ছে। তবে, সরকারের পিএলআই স্কিম এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করছে। থিয়াগরাজন বলেন, “আগামী তিন বছরে আমরা কম্প্রেসার উৎপাদনে স্বনির্ভর হব। তামার টিউবের ক্ষেত্রে আমরা ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছি।”

ব্লু স্টারের দাম বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ভারতের এসি বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রতিফলন। কমোডিটি দামের চাপ সত্ত্বেও, কোম্পানি তাদের বাজার অংশীদারিত্ব এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নতির সঙ্গে এসি-র চাহিদা আরও বাড়বে। ব্লু স্টার এই সুযোগ কাজে লাগাতে প্রস্তুত, এবং তাদের স্মার্ট এসি এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনা ভবিষ্যতের বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করবে।

Advertisements