জার্মান বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা মার্সিডিজ-বেঞ্জ তাদের জনপ্রিয় CLA (Mercedes-Benz CLA EV) মডেলের নতুন সংস্করণ উন্মোচন করেছে । যা শুধুমাত্র একটি নতুন ডিজাইনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেনি, বরং প্রযুক্তিগত দিক থেকেও একটি বড় লাফ দিয়েছে। এই প্রথমবার মার্সিডিজ তাদের C-ক্লাসের একটি মডেলকে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক (EV) গাড়ি হিসেবে উপস্থাপন করল। তবে যারা বৈদ্যুতিক গাড়ির পথে পুরোপুরি যেতে প্রস্তুত নন, তাদের জন্যও রয়েছে মাইল্ড-হাইব্রিড সিস্টেমের সাশ্রয়ী বিকল্প। ২০২৬ মার্সিডিজ-বেঞ্জ CLA-এর এই নতুন রূপ ভক্তদের মনে উত্তেজনার ঝড় তুলেছে।
ডিজাইন: কনসেপ্টের ছোঁয়ায় নতুন রূপ
২০২৬ সালের মার্সিডিজ-বেঞ্জ CLA-এর ডিজাইনে পুরনো মডেলের পরিচিত ঢালু ছাদের স্টাইল বজায় রাখা হয়েছে, তবে এবার গাড়িটির আকার বড় করা হয়েছে। নতুন ব্যাটারি প্যাকের জন্য জায়গা করে দিতে এর হুইলবেস এখন ২,৭৯০ মিমি, দৈর্ঘ্য ৪,৭২৩ মিমি, প্রস্থ ১,৮৫৫ মিমি এবং উচ্চতা ১,৪৬৮ মিমি। এই বড় আকারের ফলে গাড়িটিতে পিছনের দিকে কোয়ার্টার উইন্ডো যুক্ত হয়েছে, যা এর চেহারায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গাড়ির সামনের অংশটি মার্সিডিজের পূর্বে প্রকাশিত কনসেপ্ট মডেলের সঙ্গে মিল রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। গ্রিল এলাকায় একাধিক আলোর সমন্বয়ে একটি আকর্ষণীয় চেহারা তৈরি করা হয়েছে। এতে মাল্টি-বিম LED হেডলাইট রয়েছে, যার মধ্যে তিন-পয়েন্টেড তারার আকৃতির DRL (ডে-টাইম রানিং লাইট) ব্যবহার করা হয়েছে। এই আলোগুলো গাড়ির পুরো প্রস্থ জুড়ে একটি লাইট বারের মাধ্যমে সংযুক্ত, যা এটিকে একটি আধুনিক ও প্রিমিয়াম লুক দিয়েছে। পিছনের টেললাইটেও একই ডিজাইনের ধারা অনুসরণ করা হয়েছে, যেখানে ৪০টি আলোকিত লাউভার একটি লাইট বারের মাধ্যমে সংযুক্ত। এই ডিজাইন গাড়িটির চার-দরজার কুপে চরিত্রকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
ইন্টেরিয়র: প্রযুক্তির নতুন উচ্চতা
গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে ড্যাশবোর্ড জুড়ে থাকা তিনটি স্ক্রিন। এর মধ্যে রয়েছে ১০.৩ ইঞ্চির ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার, ১৪.০ ইঞ্চির সেন্টার টাচস্ক্রিন এবং যাত্রীর জন্য আরেকটি স্ক্রিন। ভলিউম নিয়ন্ত্রণের জন্য টাচ-স্লাইডার এবং স্টিয়ারিং হুইলে টাচ-সোয়াইপ বোতামের মতো আধুনিক ফিচারও রাখা হয়েছে। এছাড়া, নতুন MBUX সিস্টেমের সঙ্গে গুগল ম্যাপস নেভিগেশন এবং জেমিনি AI-এর মাধ্যমে সার্চের সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।
একটি বিশেষ আকর্ষণ হল ‘মুড রিং’, যা ড্রাইভারের মানসিক অবস্থা চিনতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি গাড়ির অভিজ্ঞতাকে আরও ব্যক্তিগত এবং স্মার্ট করে তুলেছে। ভিতরের ডিজাইনে বিলাসিতা এবং প্রযুক্তির এক অসাধারণ মিশ্রণ দেখা যায়, যা এই গাড়িকে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে।
রেঞ্জ ও পাওয়ারট্রেন: শক্তি ও দক্ষতার সমন্বয়
২০২৬ মার্সিডিজ-বেঞ্জ CLA-এর বৈদ্যুতিক সংস্করণে প্রথমবারের জন্য ৮০০-ভোল্ট আর্কিটেকচার ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ৮৫ কিলোওয়াট-আওয়ারের নিকেল-ম্যাঙ্গানিজ-কোবাল্ট ব্যাটারি প্যাকের সঙ্গে ৩২০ কিলোওয়াট পর্যন্ত দ্রুত চার্জিংয়ের সুবিধা দেয়। CLA250+ ভ্যারিয়েন্টে রয়েছে ২৬৮ হর্সপাওয়ারের রিয়ার মোটর, যা একবার চার্জে ৭৯২ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ দেয়। অন্যদিকে, CLA 350 4MATIC ভ্যারিয়েন্টে অল-হুইল-ড্রাইভ সিস্টেমের সঙ্গে ৩৪৯ হর্সপাওয়ার শক্তি এবং ৭৭১ কিলোমিটার রেঞ্জ পাওয়া যায়।
এছাড়া, এই বছরের শেষের দিকে একটি পেট্রোল-হাইব্রিড সংস্করণও আসবে। এতে ১.৫ লিটারের (M 252) পেট্রোল ইঞ্জিনের সঙ্গে ৪৮-ভোল্টের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি থাকবে, যার ক্ষমতা ১.৩ কিলোওয়াট-আওয়ার। বৈদ্যুতিক মোটর এবং ইনভার্টার একটি নতুন আট-স্পিড ডুয়াল-ক্লাচ ট্রান্সমিশনে একত্রিত করা হয়েছে। এই মোটরটি আটটি গিয়ারেই শক্তি পুনরুদ্ধার (রিজেনারেশন) করতে সক্ষম, যা এর দক্ষতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
বাংলার বাজারে প্রভাব
ভারতের বাজারে, বিশেষ করে বাংলায়, মার্সিডিজ-বেঞ্জের গাড়ির একটি বিশেষ ক্রেতা শ্রেণি রয়েছে। নতুন CLA EV-এর আগমন বিলাসবহুল গাড়ির প্রতি আগ্রহীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এর দীর্ঘ রেঞ্জ এবং দ্রুত চার্জিং সুবিধা কলকাতার মতো শহরে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারকে আরও সহজ করে তুলবে। তবে দাম এখনও প্রকাশিত হয়নি, যদিও বর্তমান CLA 250-এর মূল্য ৪৫,৫৫০ ডলার থেকে শুরু। নতুন মডেলে প্রযুক্তি ও বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়তে পারে।
গাড়িপ্রেমিদের প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গাড়ির উন্মোচন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। একজন ভক্ত লিখেছেন, “মার্সিডিজের এই EV আমাদের ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছে। রেঞ্জ দেখে মনে হচ্ছে পেট্রোলের দিন শেষ!” আরেকজন বলেন, “ডিজাইন আর টেকনোলজির এই সমন্বয় অসাধারণ।” বাংলার গাড়িপ্রেমীরাও এই নতুন মডেলের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।
২০২৬ সালে বাজারে আসার পর এই গাড়ি বৈদ্যুতিক যানবাহনের জগতে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে। মার্সিডিজ-বেঞ্জের এই উদ্ভাবন ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।