আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের শেষ সময়সীমা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পেশাদার সংগঠন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছে। চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর জন্য, যেসব করদাতার হিসাবের ট্যাক্স অডিট প্রয়োজন হয় না, তাদের জন্য ITR দাখিলের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চলতি বছর আয়কর দপ্তরের ই-ফাইলিং পোর্টালে নানা প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সময়মতো রিটার্ন জমা দেওয়া করদাতা ও পেশাজীবীদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্নাটক স্টেট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশন (KSCAA), ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (ICAI) এবং অ্যাডভোকেটস ট্যাক্স বার অ্যাসোসিয়েশন (ATBA) যৌথভাবে এক প্রতিনিধি পাঠিয়ে এই সমস্যা তুলে ধরে সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, ITR ফর্মের দেরিতে প্রকাশ, পোর্টালের নানা ত্রুটি, একাধিক আইনগত দায়িত্ব একই সঙ্গে পালনের চাপ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ATBA-র জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ওম কুমার অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, চলতি বছরে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা, দেরিতে প্রকাশিত ITR ফর্ম ও ইউটিলিটি, পোর্টালের বারবার গ্লিচ, এবং উৎসবের মরসুমে বাড়তি কমপ্লায়েন্সের বোঝা। এসব কারণে সঠিকভাবে রিটার্ন জমা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
KSCAA জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ITR ও অডিট ফর্মগুলো কেবল জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে পেশাজীবীরা খুব অল্প সময় পেয়েছেন কাজ শেষ করার জন্য। পাশাপাশি প্রি-ফিলড জিএসটি টার্নওভার ডেটা দেরিতে এসেছে, AIS ডেটার ভুল তথ্য ও TDS এর অমিল করদাতাদের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করছে। তাছাড়া পোর্টালের ডাউনটাইম, ধীর গতির আপলোড ও হঠাৎ স্কিমা পরিবর্তনের মতো প্রযুক্তিগত ত্রুটিও বড় মাথাব্যথার কারণ।
এদিকে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কমপ্লায়েন্স ক্যালেন্ডার অত্যন্ত চাপপূর্ণ। এই সময়ে জিএসটি ফাইলিং, এমসিএ রিটার্ন, ট্যাক্স অডিট রিপোর্টসহ একাধিক দায়িত্ব একসঙ্গে শেষ করতে হয়। ফলে পেশাজীবী ও করদাতারা কার্যত দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
ATBA প্রস্তাব দিয়েছে, নন-অডিট ITR দাখিলের সময়সীমা ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হোক। অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩০ নভেম্বর এবং অডিটকৃত ITR জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হোক। ICAI-র সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া রিজিওনাল কাউন্সিলও এই দাবিকে সমর্থন করেছে।
এক সাক্ষাৎকারে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিমান্ক সিংলা বলেন, “পেশাজীবীরা প্রচণ্ড কাজের চাপের মধ্যে রয়েছেন। সঠিকতা ও সম্পূর্ণতার সঙ্গে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বর্তমান সময়সীমা একেবারেই বাস্তবসম্মত নয়।”
পেশাজীবীরা আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট একাধিক রায়ে বলেছে—আইনগত প্রক্রিয়াগত সময়সীমা যেন প্রকৃত সমস্যায় পড়া মানুষকে শাস্তি না দেয়, বরং ন্যায়বিচারকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
তাদের মতে, সময়সীমা বাড়ানো মানে সুবিধা দেওয়া নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। কারণ পরিস্থিতি এমন যে, করদাতা ও পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা সমস্যার জন্য ভুল রিটার্ন জমা পড়তে পারে। ভুল রিটার্ন জমা পড়লে তার ফল ভোগ করতে হবে নিরীহ করদাতাদেরই। তাই ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত সময়সীমা বাড়ানো এখন জরুরি।