নয়াদিল্লি, ২ নভেম্বর: ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখা হতে চলেছে। প্রতিবেশী দেশ আর্মেনিয়া ভারত থেকে সু-৩০ এমকেআই (Su-30MKI) মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের (₹২৫,০০০ কোটি টাকার) চুক্তি করতে চলেছে।
প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গেছে, এই যুদ্ধবিমানগুলি তৈরি করবে ভারতের হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) — যা ভারতীয় বায়ুসেনার সবচেয়ে শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে একটি।
এই চুক্তিকে বলা হচ্ছে ভারত-আর্মেনিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এর আগেও ভারত আর্মেনিয়াকে অস্ত্র ও রাডার সিস্টেম সরবরাহ করেছিল, তবে যুদ্ধবিমান বিক্রি এবারই প্রথম।
🌍 কৌশলগত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এবং আর্মেনিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করছে, বিশেষ করে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাতের পর থেকে।
ভারতের তৈরি পিনাকা মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার এবং স্বদেশি রাডার সিস্টেম ইতিমধ্যেই আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। এবার সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান যুক্ত হলে আর্মেনিয়ার আকাশসেনা আরও শক্তিশালী হবে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) অনিল কপুর বলেন,
“এই ডিল ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন সক্ষমতার ওপর বিশ্বের আস্থা প্রমাণ করছে। HAL-এর তৈরি সু-৩০ এখন রাশিয়ার বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে — এটা ভারতের আত্মনির্ভরতার সাফল্য।”
ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানির সাফল্য
গত কয়েক বছরে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি রেকর্ড ছুঁয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ₹২১,০০০ কোটি, যা দশ বছর আগের তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি।
HAL, BEL, Bharat Dynamics এবং DRDO-র যৌথ উদ্যোগে তৈরি নানা সিস্টেম ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করেছে।
✈️ কেন গুরুত্বপূর্ণ সু-৩০ এমকেআই
সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান একটি ‘twin-seat, multi-role air dominance fighter’, যা একসঙ্গে আকাশে শত্রু নিধন, স্থল আক্রমণ ও রেকি মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম।
এটি রাশিয়ার সু-৩০ প্ল্যাটফর্মে ভিত্তিক, তবে ভারতের HAL সেটিকে দেশীয় প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক ও রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে আরও উন্নত করেছে।
এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ‘supermaneuverability’ — যা শত্রুর রাডারে ধরা পড়া কঠিন করে তোলে।
🤝 ভারতের ‘Make in India’ মডেলের সাফল্য
এই চুক্তি প্রমাণ করছে যে ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন শুধু দেশীয় প্রয়োজন মেটাচ্ছে না, আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের প্রতিরক্ষা কূটনীতির জন্য এটি একটি বড় কূটনৈতিক বিজয়, যা রাশিয়া এবং পশ্চিমী ব্লকের মধ্যবর্তী ভারসাম্য তৈরি করবে।
আর্মেনিয়ার সঙ্গে এই যুদ্ধবিমান ডিল শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভূ-রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের প্রতিরক্ষা কূটনীতি এখন নতুন উচ্চতায় — যেখানে ‘Make in India’ পণ্যের ওপর বিদেশি সেনাবাহিনীর আস্থা স্পষ্ট।


