অনিল আম্বানির ভূমিকা নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া

ED Steps Up Investigation, Attaches 3,000 Crore Anil Ambani Group Assets

ভারতের শীর্ষ শিল্পপতিদের মধ্যে একসময় যিনি নিজের নাম লিখিয়েছিলেন সেই অনিল আম্বানি (Anil Ambani) আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (বিওআই) সম্প্রতি রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস (আরকম) ও তার প্রাক্তন পরিচালক অনিল আম্বানিকে “ফ্রড” বা প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত বলে চিহ্নিত করেছে। এর জবাবে রবিবার জারি করা এক বিবৃতিতে অনিল আম্বানি সব অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” আখ্যা দেন এবং আইনি পথে লড়াই করার ইঙ্গিত দেন।

Advertisements

এসবিআই জানিয়েছে, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২,৯২৯.০৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংক অব ইন্ডিয়া দাবি করেছে, তাদের ৭২৪.৭৮ কোটি টাকার ঋণ হিসাব প্রতারণার শিকার হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে অনুমোদিত ঋণের টাকা ভিন্ন খাতে ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ঋণনিয়ম ভঙ্গ করে কোম্পানি সেই টাকা স্থায়ী আমানত (Fixed Deposit)-এ বিনিয়োগ করে।

   

এসব অভিযোগ সামনে আসার একদিন আগে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের অফিস ও অনিল আম্বানির বাসভবনে তল্লাশি চালায়। এই অভিযানের পর অভিযোগকে আরও গুরুতর রূপ দিয়েছে।

এক বিবৃতিতে অনিল আম্বানির মুখপাত্র জানিয়েছেন, “অনিল আম্বানি শুধুমাত্র আরকম বোর্ডের একজন অ-কার্যনির্বাহী পরিচালক (Non-Executive Director) ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন, অর্থাৎ ছয় বছরেরও বেশি সময় আগে। কোম্পানির দৈনন্দিন কাজকর্ম বা সিদ্ধান্তগ্রহণের সঙ্গে তার কোনো ভূমিকা ছিল না। তবুও তাকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, আম্বানি সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন এবং আইন অনুযায়ী যা করণীয়, তা করবেন।

রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস একসময় ভারতের অন্যতম বড় টেলিকম কোম্পানি ছিল। রিলায়েন্স গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত এই সংস্থা একসময় জিও, এয়ারটেল বা ভোডাফোনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিল। কিন্তু মোবাইল ডেটা বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, ঋণের ভার এবং নীতি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সংস্থাটি ধীরে ধীরে ধসে পড়ে। ২০১৭ সালে তারা দেউলিয়া ঘোষণার পথে হাঁটে এবং পরবর্তীতে ঋণদাতাদের হাতে পরিচালনার দায়িত্ব চলে যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, এত বড় অঙ্কের ঋণ প্রতারণার অভিযোগ দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগজনক। বিশেষত এসবিআইয়ের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক যখন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ করছে, তখন সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অন্যদিকে, অনিল আম্বানি নিজেকে ‘অ-কার্যনির্বাহী পরিচালক’ হিসেবে দায়মুক্ত ঘোষণা করার চেষ্টা করলেও ব্যাংকগুলির মতে, বোর্ডের সদস্য হিসেবে তার দায়িত্ব এড়ানো সম্ভব নয়।

Advertisements

অনিল আম্বানির আইনজীবী দল শিগগিরই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে সূত্রের খবর। অভিযোগগুলি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আরও ফৌজদারি মামলা দায়ের হতে পারে। আবার যদি আদালতে তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে তার কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না, তবে তিনি আইনি স্বস্তি পেতে পারেন।

কর্পোরেট মহলের একাংশ মনে করছে, এই ঘটনা অনিল আম্বানির ব্যবসায়িক ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ইতিমধ্যেই তিনি বহু আর্থিক চাপে আছেন। আদালতে তার দেউলিয়াত্ব সংক্রান্ত একাধিক মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় নতুন করে প্রতারণার অভিযোগ তার ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনাকে বড় ধাক্কা দিতে পারে।

মনে রাখা দরকার, অনিল আম্বানি দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক পরিবারগুলির একজন সদস্য। তার বড় ভাই মুকেশ আম্বানি বর্তমানে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। কিন্তু কর্পোরেট বিভাজনের পর টেলিকম, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতের দায়িত্ব অনিল আম্বানি নেন। সময়ের সঙ্গে ব্যবসায়িক কৌশলগত ভুল ও প্রতিযোগিতার কারণে তিনি একাধিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন। এখন সেই ধারাবাহিকতার ফলস্বরূপ নতুন নতুন আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ছেন।

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—অনিল আম্বানি এই অভিযোগ থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন? আইনি লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হলে তার আর্থিক অবস্থার ওপর আরও চাপ তৈরি হবে। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলি যদি প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, তবে তাকে বড় ধরনের আর্থিক জরিমানা ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

এই বিতর্ক কেবল একজন শিল্পপতির ব্যক্তিগত লড়াই নয়, বরং ভারতের ব্যাংকিং খাত ও কর্পোরেট শাসনব্যবস্থার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। অনিল আম্বানি অভিযোগ অস্বীকার করলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার ব্যবসায়িক যাত্রায় অনিশ্চয়তার মেঘ আরও ঘনীভূত হবে।