পরিবেশবিদ ও পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত উমাশঙ্কর পাণ্ডে জল সংরক্ষণের তীব্র প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত আন্তর্জাতিক ধান সম্মেলন (Bharat International Rice Conference)-এ উপস্থিত থেকে তিনি বলেন, কৃষি ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ জলের বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হতে পারে।
পাণ্ডে জানান, “চাল উৎপাদনে প্রায় ২,০০০ লিটার জল লাগে, একটি লেবুর জন্য প্রয়োজন ১০০ লিটার, এক কিলোগ্রাম গমে লাগে ১,০০০ লিটার, এক কিলোগ্রাম পনির তৈরিতে ৫,৫০০ লিটার এবং এক কিলোগ্রাম মাছ উৎপাদনে প্রায় ২৫,০০০ লিটার জল ব্যবহৃত হয়।”
“তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে পানির জন্য” — ভয়াবহ সতর্কবার্তা:
মিষ্টি জলের ক্রমবর্ধমান সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যদি কখনও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়, তবে তা হবে পানির জন্য।” তিনি সতর্ক করেন যে, মানব সভ্যতার টিকে থাকার জন্য এখনই জল ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সার্বজনীন উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
‘জল বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘জল জাদুঘর’-এর প্রস্তাব:
পাণ্ডে দেশে একটি ‘জল বিশ্ববিদ্যালয় (Jal Vishwavidyalaya)’ এবং একটি ‘জল জাদুঘর (Water Museum)’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখেন। তাঁর মতে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে জল সংরক্ষণ, গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমকে নতুন দিশা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “আমাদের সকলকে একসঙ্গে এগিয়ে এসে জাতীয় স্তরে জল সংরক্ষণ অভিযান শুরু করতে হবে।”
প্রাচীন জল ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির পুনরুজ্জীবনের আহ্বান:
উমাশঙ্কর পাণ্ডে মনে করেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার জল দূষণের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রকৃতির সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে চাষ করতেন। আগে প্রতিটি আনন্দ বা শোকের মুহূর্তে পুকুর খননের প্রথা ছিল, যা ভূগর্ভস্থ জলস্তরকে সুস্থ রাখত।”
যুব সমাজের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সচেতনতা:
পাণ্ডে জোর দিয়ে বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মকে জল সংরক্ষণ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হবে। “শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে জল সংরক্ষণের মূল্যবোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন,” তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আহ্বান জানান, দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মিষ্টি জলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত থাকে।


