মিসড ডেডলাইন? ৩১ মার্চের মধ্যে অগ্রিম ট্যাক্স দিন, অতিরিক্ত সুদ এড়ান

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অগ্রিম আয়কর (Advance Tax) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৫ মার্চ ২০২৫। তবে যারা এই নির্দিষ্ট কর জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা…

Tax

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অগ্রিম আয়কর (Advance Tax) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১৫ মার্চ ২০২৫। তবে যারা এই নির্দিষ্ট কর জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা এখনও শেষ ত্রৈমাসিকের বকেয়া অগ্রিম কর ৩১ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে জমা দিতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে তাদের ধারা ২৩৪সি-এর অধীনে সুদ দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ৩১ মার্চের মধ্যে সুদসহ অগ্রিম কর পরিশোধ করা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এই সময়ের মধ্যে দেওয়া সুদ ৩১ মার্চের পরে প্রযোজ্য সুদের তুলনায় কম হবে। যদি কোনো ব্যক্তি চলতি মাসের শেষে অর্থাৎ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ ত্রৈমাসিকের অগ্রিম কর না দেন, তাহলে ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ধারা ২৩৪বি-এর অধীনে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। আয়কর বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মোট কর দায়িত্ব ১০,০০০ টাকার বেশি, তাদের অগ্রিম কর প্রদান করতে হয়।

   

Also Read | কলকাতায় পেট্রোলের দাম গত তিনমাসে কতটা বাড়ল? জানুন বিস্তারিত  

যারা ১৫ মার্চের আগে অগ্রিম কর জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের বিলম্বিত করের পরিমাণের ওপর ধারা ২৩৪সি-এর অধীনে প্রতি মাসে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এই সুদ গণনা করা হয় বিলম্বের সময়কালের ভিত্তিতে, যতক্ষণ না কর পরিশোধ করা হয়।

অগ্রিম কর কী?
কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (সিবিডিটি) অনুযায়ী, যে করদাতাদের অগ্রিম কর দিতে হয়, তাদের বর্তমান আয়ের ওপর ভিত্তি করে কর দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হয়। যদি আয়কর নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি কর দায়িত্ব হয়, তাহলে সেই করদাতাকে অর্থবছরের মধ্যে কিস্তিতে কর জমা দিতে হবে। আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, “করদাতাকে তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গে কর দিতে হবে। তাই অগ্রিম করের এই প্রক্রিয়াকে ‘যত আয়, তত কর’ (Pay as you Earn Scheme) বলা হয়।”

আয়কর বিভাগের নিয়ম অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তির আনুমানিক কর দায়িত্ব ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি হয়, তাহলে তাকে অগ্রিম কর দিতে হবে। তবে, যারা ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ব্যবসা বা পেশা থেকে কোনো আয় করেন না, তাদের অগ্রিম কর দিতে হয় না।

অগ্রিম করের গুরুত্ব ও সময়সূচী
অগ্রিম কর হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে করদাতারা তাদের আয়ের ওপর কর বছর শেষে এককালীন পরিশোধের পরিবর্তে অর্থবছরের মধ্যে কিস্তিতে পরিশোধ করেন। এটি সরকারের জন্য নিয়মিত রাজস্ব প্রবাহ নিশ্চিত করে এবং করদাতাদের জন্য বছর শেষে বড় অঙ্কের করের বোঝা কমায়। অগ্রিম কর সাধারণত চারটি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়:
• ১৫ জুন: মোট কর দায়িত্বের ১৫ শতাংশ
• ১৫ সেপ্টেম্বর: মোট কর দায়িত্বের ৪৫ শতাংশ
• ১৫ ডিসেম্বর: মোট কর দায়িত্বের ৭৫ শতাংশ
• ১৫ মার্চ: মোট কর দায়িত্বের ১০০ শতাংশ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য শেষ কিস্তির সময়সীমা ছিল ১৫ মার্চ ২০২৫। যারা এই তারিখে কর জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা এখনও ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় পাবেন। তবে এই ক্ষেত্রে সুদের হার প্রযোজ্য হবে।

ধারা ২৩৪সি ও ২৩৪বি-এর অধীনে সুদ
ধারা ২৩৪সি-এর অধীনে, যদি কোনো করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রিম করের কিস্তি জমা না দেন, তাহলে বিলম্বিত পরিমাণের ওপর প্রতি মাসে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও মোট কর দায়িত্ব ৫০,০০০ টাকা হয় এবং তিনি ১৫ মার্চের মধ্যে শেষ কিস্তি জমা না দিয়ে ২৫ মার্চে জমা দেন, তাহলে তাকে ১ শতাংশ হারে এক মাসের সুদ দিতে হবে। এই সুদ গণনা করা হবে বকেয়া পরিমাণের ওপর।

অন্যদিকে, যদি ৩১ মার্চের মধ্যেও শেষ কিস্তি জমা না হয়, তাহলে ১ এপ্রিল থেকে ধারা ২৩৪বি-এর অধীনে অতিরিক্ত সুদ প্রযোজ্য হবে। এই ধারা অনুযায়ী, যদি অগ্রিম কর হিসেবে মোট কর দায়িত্বের ৯০ শতাংশ পরিশোধ না করা হয়, তাহলে বাকি পরিমাণের ওপর প্রতি মাসে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এই সুদ গণনা শুরু হবে ১ এপ্রিল থেকে এবং চলবে যতক্ষণ না পুরো কর পরিশোধ করা হয় বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়।

কেন ৩১ মার্চের মধ্যে পরিশোধ করা উচিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩১ মার্চের মধ্যে অগ্রিম কর পরিশোধ করলে ধারা ২৩৪সি-এর অধীনে সীমিত সুদ দিতে হবে, যা শুধুমাত্র বিলম্বের সময়ের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু ৩১ মার্চের পরে পরিশোধ করলে ধারা ২৩৪বি-এর অধীনে অতিরিক্ত সুদ যুক্ত হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে করদাতার জন্য আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও বকেয়া কর ২০,০০০ টাকা হয় এবং তিনি ৩১ মার্চের মধ্যে জমা দেন, তাহলে শুধু এক মাসের সুদ হিসেবে ২০০ টাকা দিতে হবে। কিন্তু ১ এপ্রিলের পরে জমা দিলে প্রতি মাসে ২০০ টাকা হারে সুদ বাড়তে থাকবে।

কারা অগ্রিম কর দিতে বাধ্য?
আয়কর বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, নিম্নলিখিত ব্যক্তি বা সংস্থাকে অগ্রিম কর দিতে হবে:
• বেতনভোগী কর্মচারী, ফ্রিল্যান্সার ও ব্যবসায়ী: যদি তাদের মোট কর দায়িত্ব ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি হয়।
• কোম্পানি ও ব্যবসায়িক সংস্থা: যাদের কর দায়িত্ব নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে।
তবে, ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা, যাদের ব্যবসা বা পেশাগত আয় নেই, তারা এই কর থেকে অব্যাহতি পান।

কীভাবে অগ্রিম কর জমা দেবেন?
অগ্রিম কর জমা দেওয়ার জন্য আয়কর বিভাগের ওয়েবসাইটে (incometaxindia.gov.in) গিয়ে ‘ই-পে ট্যাক্স’ অপশন ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য প্যান নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং ওটিপি ব্যবহার করে লগইন করতে হয়। তারপর মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬ এবং ‘অগ্রিম কর (১০০)’ নির্বাচন করে পেমেন্ট সম্পন্ন করা যায়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের অগ্রিম করের শেষ কিস্তির সময়সীমা ১৫ মার্চ শেষ হয়েছে। তবে যারা এটি মিস করেছেন, তাদের জন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত সুদের বোঝা বাড়বে। তাই করদাতাদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বকেয়া কর পরিশোধ করে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা।