ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা আদানি পাওয়ার (Adani Power) লিমিটেড মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, তারা কয়লা মন্ত্রকের কাছ থেকে মধ্যপ্রদেশের সিংরৌলি জেলায় অবস্থিত ধিরাউলি কয়লা খনি চালু করার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সংস্থাটিকে দীর্ঘমেয়াদি কাঁচামালের নিরাপত্তা দেবে এবং বিদ্যুৎ খাতে আদানির নেতৃত্বকে আরও মজবুত করবে।
ধিরাউলি ব্লকটির মালিকানা রয়েছে আদানি পাওয়ারের সহায়ক সংস্থা মহান এনার্জেন লিমিটেডের হাতে। খনিটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৬.৫ মিলিয়ন টন (এমটিপিএ)। এর মধ্যে ৫ এমটিপিএ ওপেন ক্যাস্ট (উন্মুক্ত খনি) থেকে আসবে এবং বাকি অংশ আসবে আন্ডারগ্রাউন্ড (ভূগর্ভস্থ) খনি কার্যক্রম থেকে। ভূতাত্ত্বিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ধিরাউলি ব্লকে ৬২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটি) মোট ভূতাত্ত্বিক মজুত রয়েছে এবং এর মধ্যে ৫৫৮ এমএমটি নেট রিজার্ভ। অর্থাৎ কয়েক দশক ধরে এই খনি আদানি পাওয়ারকে জ্বালানির যোগান দিতে পারবে, যা সংস্থার জ্বালানি নিরাপত্তা এবং উৎপাদন স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
আধানি পাওয়ার জানিয়েছে, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লাকে ধোয়া এবং প্রক্রিয়াকরণ করার উদ্যোগও নেওয়া হতে পারে খনির এলাকাতেই। এর ফলে অশুদ্ধি ও অকার্যকর উপাদান খনি এলাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়বে না, এবং পরিবেশে ক্ষতিকারক নির্গমন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সংস্থার সিইও এস বি খ্যালিয়া বলেন, “ধিরাউলি ব্লকে খনন কার্যক্রম শুরু হওয়া আধানি পাওয়ারের আত্মনির্ভরতা ও টেকসই বৃদ্ধির যাত্রায় এক যুগান্তকারী মাইলফলক। কাঁচামালের উৎসে সরাসরি অংশগ্রহণ করে আমরা কেবলমাত্র ইনপুট খরচ কমাচ্ছি না, বরং কোটি কোটি ভোক্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করছি। আমাদের অঙ্গীকার রয়ে গেছে দায়িত্বশীলভাবে খনি উন্নয়ন করার, যাতে দীর্ঘমেয়াদে সমস্ত অংশীদারের জন্য মূল্য তৈরি হয়।”
এই খনি আদানি পাওয়ারের প্রথম ক্যাপটিভ (নিজস্ব ব্যবহারযোগ্য) কয়লা খনি, যা সরকারিভাবে খনন শুরু করার অনুমোদন পেয়েছে। ওপেন ক্যাস্ট খনির সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২৬–২৭ অর্থবর্ষে (FY27) অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ খনন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে নয় বছর পরে। সংস্থাটি এই খনি ব্লকের জন্য ৩০ বছরের খনির লিজ পেয়েছে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে।
ধিরাউলি ব্লক থেকে উত্তোলিত কয়লা আদানি পাওয়ারের মার্চেন্ট পাওয়ার (খোলা বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রয়) চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি এটি নিকটবর্তী মহান পাওয়ার প্লান্টেও সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা ১,২০০ মেগাওয়াট, তবে আদানি পাওয়ার এই কেন্দ্রের ৩,২০০ মেগাওয়াট সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ফলে খনি থেকে নিয়মিত কয়লা সরবরাহ পাওয়া গেলে এই প্রকল্প আরও শক্তিশালী ভিত্তি পাবে।
ভারতের শক্তি খাতে আদানি পাওয়ার ইতিমধ্যেই একটি প্রধান নাম। সংস্থার মোট উৎপাদন ক্ষমতা একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এবং দেশজুড়ে শিল্প ও গৃহস্থালী বিদ্যুৎ সরবরাহে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ধিরাউলি খনির কার্যক্রম শুরু হলে শুধু উৎপাদন খরচই কমবে না, বরং জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা অনেকটা হ্রাস পাবে।
খনি থেকে উত্তোলিত কয়লাকে স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত করার পরিকল্পনা আদানির গ্রিন মাইনিং উদ্যোগের অংশ। এর মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ খনি এলাকার বাইরের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে না এবং বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব হবে। আদানি পাওয়ার বারবার দাবি করে আসছে যে, তাদের প্রতিটি প্রকল্পের লক্ষ্য হলো শক্তি উৎপাদন ও পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
ধিরাউলি খনি চালুর এই অনুমোদন আদানি পাওয়ারকে শুধু কাঁচামালের নিরাপত্তাই দেবে না, বরং সংস্থার উৎপাদন খরচ কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শক্তিশালী করবে। ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা, শিল্প সম্প্রসারণ ও টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহে এটি এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।