আহমেদাবাদের নিকটবর্তী জাসপুরে নির্মীয়মাণ উমিয়া ধাম মন্দিরে আদানি সিমেন্ট ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিএসপি ইনফ্রা (PSP Infra) এক ঐতিহাসিক কীর্তি স্থাপন করেছে। সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় মন্দিরের র্যাফ্ট ফাউন্ডেশন কাস্টিং সম্পন্ন করে তারা নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগত নিখুঁততা, টেকসই উদ্ভাবন এবং বিশাল লজিস্টিক সক্ষমতার এক অনন্য সমন্বয় ঘটেছে।
রেকর্ড-ব্রেকিং কাস্টিং প্রক্রিয়া:
টানা ৫৪ ঘণ্টা ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানো হয় ফাউন্ডেশন কাস্টিং। এই সময়ে ব্যবহৃত হয় ২৪,১০০ ঘন মিটার (M³) ECOMaxX M45 গ্রেডের লো-কার্বন কংক্রিট। কাস্টিংয়ে অংশ নেয় ২৬টি রেডি-মিক্স কংক্রিট (RMX) প্লান্ট, ২৮৫টিরও বেশি ট্রানজিট মিক্সার এবং ৩,৬০০ টন উচ্চ-কার্যক্ষম সিমেন্ট। পুরো কার্যক্রমে ৬০০-রও বেশি দক্ষ কর্মী ও প্রকৌশলী নিরলসভাবে কাজ করেন। তিন দিন পালা করে কাজ করা এই দল নিশ্চিত করে, এক মুহূর্তের জন্যও ঢালাই বন্ধ না হয়। ফলে কোনও কোল্ড জয়েন্ট তৈরি হয়নি, যা প্রকল্পটির অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য।
টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার: Adani Cement project
কাস্টিংয়ে ব্যবহৃত বিশেষ ECOMaxX কংক্রিটে ছিল ৬৬ শতাংশ Supplementary Cementitious Material (SCM), যা প্রকল্পের মোট কার্বন নিঃসরণ প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি, আদানি সিমেন্টের বিশেষ Coolcrete ফর্মুলেশন কংক্রিটের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রির নিচে রাখতে সাহায্য করেছে। এর ফলে তাপীয় চাপ কমেছে এবং কাঠামোর স্থায়িত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেতৃত্বের বক্তব্য:
আদানি গ্রুপের সিমেন্ট ব্যবসার সিইও বিনোদ বেহেটি বলেন, “উমিয়া ধাম কেবল একটি প্রকল্প নয়, এটি আধ্যাত্মিকতা ও আধুনিক প্রযুক্তির সেতুবন্ধন। প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প আগামী প্রজন্মের কাছে বিশ্বাস, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়নের প্রতীক হয়ে থাকবে।” তিনি আরও যোগ করেন, চেয়ারম্যানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই ধরনের প্রকল্প কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার প্রদর্শনী নয়, বরং সমাজ uplift করার এক মহৎ প্রচেষ্টা।
অন্যদিকে, বিশ্ব উমিয়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি আর.পি. পটেল বলেন, “মা উমিয়া মন্দিরের এই বিশ্বরেকর্ড ভিত্তিপ্রস্তর শুধু ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার গৌরবও। আদানি সিমেন্ট আমাদের স্বাভাবিক সহযোগী ছিল, কারণ তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এই মাপের প্রকল্পের জন্য অপরিহার্য।”
প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য:
এই র্যাফ্ট ফাউন্ডেশনটির দৈর্ঘ্য ৪৫০ ফুট, প্রস্থ ৪০০ ফুট এবং গভীরতা ৮ ফুট। এর উপর দাঁড়াবে ৫০৪ ফুট উচ্চতার জগত জননী মা উমিয়া মন্দির। মন্দির প্রাঙ্গণে তৈরি হবে ১,৫৫১ ধর্মস্তম্ভ, যা এটিকে একটি বিশাল সামাজিক-সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে। এই অভূতপূর্ব কাস্টিং প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেছেন প্রায় ১,০০০ মানুষ সরাসরি এবং আরও ১০,০০০-এর বেশি মানুষ অনলাইনে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
বিশ্ব ওয়ান টাওয়ার থেকে শুরু করে চেনাব রেল সেতুর মতো প্রকল্পে নিজেদের দক্ষতার ছাপ রাখার পর আদানি সিমেন্ট এবার আধ্যাত্মিক পরিকাঠামোতেও নতুন মানদণ্ড স্থাপন করল। এই প্রকল্প কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং কৃতিত্ব নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্বাসের অটুট প্রতীক হিসেবেও ইতিহাসে স্থান করে নিল।