UIDAI-স্টারলিংকের চুক্তি! ভারতে গ্রাহক যাচাই এখন আধার ই-কেওয়াইসি ভিত্তিক

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানিয়েছে, ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেডকে অনবোর্ড করেছে। এর ফলে এলন…

UIDAI, Aadhaar e-KYC for Starlink

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বুধবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানিয়েছে, ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন প্রাইভেট লিমিটেডকে অনবোর্ড করেছে। এর ফলে এলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত এই বৈশ্বিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থা ভারতে গ্রাহক যাচাইয়ের জন্য আধার-ভিত্তিক ই-কেওয়াইসি (e-KYC) সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে।

মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এ সংযুক্তি “ডিজিটাল আইডেন্টিটি প্ল্যাটফর্ম ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তির এক শক্তিশালী সমন্বয়” হিসেবে ভারতের প্রযুক্তিগত বিকাশে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। কেওয়াইসি মানদণ্ড মেনে গ্রাহককে কাগজপত্র ছাড়া এবং নিরাপদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিবন্ধিত করার সুযোগ তৈরি হলো, যা স্টারলিংকের সারা দেশে উচ্চগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা বিস্তারে গতি আনবে।

   

ভারতের ডিজিটাল জনপরিকাঠামোর মূলভিত্তি হিসেবে আধার ইতিমধ্যেই নাগরিকদের নানাবিধ সুবিধা ও পরিষেবার সাথে যুক্ত হয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে মোবাইল সিম কার্ড নেওয়া পর্যন্ত বহু ক্ষেত্রে আধার-ভিত্তিক যাচাইকরণ ব্যবহৃত হয়। এবার সেই ধারায় স্টারলিংকের মতো একটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থা যুক্ত হওয়ায়, প্রমাণিত হলো আধার সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা ও প্রসারক্ষমতা।

UIDAI জানিয়েছে, আধার-ভিত্তিক অথেন্টিকেশন ব্যবহার করা হবে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছামূলক। অর্থাৎ গ্রাহক চাইলে আধার তথ্য দিয়ে পরিচয় যাচাই করতে পারবেন, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। বিদ্যমান নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে কোনো নতুন শর্ত আরোপ করা হবে না।

স্টারলিংককে মন্ত্রণালয় Sub-Authentication User Agency এবং Sub-eKYC User Agency হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মাধ্যমে সংস্থা আধার নম্বরধারীদের ডিজিটাল যাচাই করতে পারবে এবং অনলাইনে দ্রুত গ্রাহক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবে।

এই প্রক্রিয়ায়, ব্যবহারকারীর পরিচয়, ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে যাচাই করা হবে। আধার ফেস অথেন্টিকেশন সমাধানও এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। UIDAI-এর দাবি, বর্তমানে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আধারধারী এই ফেস অথেন্টিকেশন সুবিধা ব্যবহার করছেন কারণ এটি তুলনামূলকভাবে সহজ ও নিরাপদ।

স্টারলিংক ইতিমধ্যেই ভারতের মতো জনবহুল ও ভৌগোলিকভাবে জটিল দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করার পরিকল্পনা করেছে। শহরের বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, সীমান্তবর্তী এলাকা কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছানো কঠিন, সেখানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটভিত্তিক প্রযুক্তি উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারে।

এবার আধার ই-কেওয়াইসি যুক্ত হওয়ায় গ্রাহক দ্রুততার সঙ্গে এবং সহজ প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হতে পারবেন। বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীরা কাগজপত্র ছাড়াই ডিজিটাল অথেন্টিকেশনের মাধ্যমে সংযোগ নিতে পারবেন।

Advertisements

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মতে, একটি বৈশ্বিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থার দ্বারা আধার অথেন্টিকেশন গ্রহণ করা ভারতের ডিজিটাল অবকাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতার বড় প্রমাণ। আধার শুধুমাত্র একটি পরিচয়পত্র নয়, বরং এটি এখন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সরকারি সেবা এবং প্রযুক্তিনির্ভর পরিষেবার মূলভিত্তি।

সরকার বারবার বলেছে, আধার সিস্টেম “ease of living” এবং “ease of doing business”-এ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কোটি কোটি মানুষ ব্যাংকিং, ভর্তুকি, সামাজিক নিরাপত্তা বা মোবাইল সংযোগের ক্ষেত্রে এর সুফল ভোগ করছেন। এবার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবায় এর প্রয়োগ ডিজিটাল ইন্ডিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।

UIDAI পরিষ্কার জানিয়েছে, আধার অথেন্টিকেশন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী। গ্রাহক চাইলে অন্য কোনো বৈধ পরিচয়পত্র দিয়েও স্টারলিংক সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। আধার ব্যবহারে জোর নেই, তবে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার গতি ও নিরাপত্তার কারণে অনেক গ্রাহকই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আধার অথেন্টিকেশন বেছে নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই সংযুক্তি শুধু প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে। ভারত বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল পরিচয়ভিত্তিক অবকাঠামোর দেশ। অন্যদিকে, স্টারলিংক বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানকারী। এই দুই শক্তি একত্রিত হলে ভারতের ডিজিটাল বাজারে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছালে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ছোট ব্যবসা ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। ছোট উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ—সকলেই উপকৃত হবেন।

স্টারলিংকের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ভারতের আধার অবকাঠামো ব্যবহার করতে চলেছে, এটি নিঃসন্দেহে ভারতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির এক বড় স্বীকৃতি। ডিজিটাল আইডেন্টিটি প্ল্যাটফর্মের সাথে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির এই “শক্তিশালী সমন্বয়” কেবল ইন্টারনেট পরিষেবা সহজ করবে না, বরং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যপূরণে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে দেশকে। ভারতের নাগরিকদের জন্য এটি হবে দ্রুত, নিরাপদ এবং কাগজপত্রবিহীন ডিজিটাল ভবিষ্যতের এক নতুন অধ্যায়।