ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ব্যয় বিভাগ (Department of Expenditure – DEA) সম্প্রতি ৮ম বেতন কমিশনে (8th Pay Commission) ৩৫টি পদ ডেপুটেশনের মাধ্যমে পূরণের প্রস্তাব দিয়েছে। মানিকন্ট্রোলের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ, এই কমিশনের কার্যকাল শেষ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁদের পূর্বের দপ্তরে ফিরে যাবেন বা পূর্বের পদে পুনর্বহাল হবেন।
এই কমিশনের মূল দায়িত্ব হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের বেতন, পেনশন ও অন্যান্য ভাতা পুনঃনির্ধারণ করা। ফলে এই সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রভাব ফেলবে ৫০ লক্ষেরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষেরও বেশি পেনশনভোগীর উপর।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৮ম পে কমিশনের ঘোষণা করা হয়। যদিও সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের কার্যপরিধি, চেয়ারম্যান বা সদস্যদের নাম ঘোষণা করেনি, তবে ইতোমধ্যেই প্রশাসনিক স্তরে নানা পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, কমিশনের সুপারিশগুলি ২০২৬ অথবা ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হতে পারে।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর: নতুন বেতন কাঠামোর ভিত্তি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮ম পে কমিশন ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের হার ১.৯২ থেকে ২.৮৬-এর মধ্যে নির্ধারণ করতে পারে। এই ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করেই মূলত নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও বর্তমান মূল বেতন ₹১৮,০০০ হয় এবং ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ধরা হয় ২.৫৭ (যা ৭ম পে কমিশনে ছিল), তাহলে নতুন বেতন হবে ₹১৮,০০০ × ২.৫৭ = ₹৪৬,২৬০। সেক্ষেত্রে, যদি নতুন ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বেড়ে ২.৮৬ হয়, তবে ওই কর্মচারীর বেতন দাঁড়াবে ₹৫১,৪৮০-এর আশেপাশে। অর্থাৎ একধাক্কায় প্রায় ₹৫,০০০ বাড়তে পারে বেতন।
তবে এটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি এখনো আলোচনা পর্বে রয়েছে।
কীভাবে কাজ করবে কমিশন?
বেতন কমিশনের কাজ মূলত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে মূল্যায়ন করে তাদের উপযুক্ত বেতন কাঠামো ও ভাতা নির্ধারণ করা। এজন্য কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, রাজ্য সরকার, কর্মচারী ইউনিয়ন প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা কর্মপরিবেশ, দ্রব্য মূল্য সূচক, কর্মীদের জীবনযাত্রার মান, বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি সুপারিশমালা তৈরি করেন।
এই সুপারিশগুলি সরকার পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিলে তা প্রায় সমস্ত কেন্দ্রীয় দপ্তরে কার্যকর হয়।
ডেপুটেশন প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য
৩৫টি পদ ডেপুটেশনের মাধ্যমে পূরণ করার প্রস্তাবের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, এই কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও আর্থিক বিশ্লেষকদের প্রয়োজন হবে। ডেপুটেশনে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা মূলত বিভিন্ন দপ্তর থেকে সাময়িকভাবে কমিশনে যোগ দেবেন। কমিশনের কাজ শেষ হলে তারা নিজ নিজ দপ্তরে ফিরে যাবেন।
এই ধরণের ব্যবস্থা সাধারণত কমিশনের কাজের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্যই নেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের প্রত্যাশা
৭ম পে কমিশনের সুপারিশ ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর আবারও নতুন কমিশনের মাধ্যমে বেতন কাঠামো পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে তাই নতুন কমিশন ঘিরে প্রবল আগ্রহ ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
অনেক কর্মচারীর দাবি, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে পূর্ববর্তী কমিশনের বেতন কাঠামো পর্যাপ্ত নয়। নতুন কমিশনে যেন বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী সুপারিশ করা হয়।
৮ম পে কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন, পেনশন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে বলেই আশা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বিভাগ কর্তৃক কমিশনে ডেপুটেশনের মাধ্যমে যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এটি স্পষ্ট যে সরকার এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
কবে নাগাদ কমিশনের সদস্যরা নিযুক্ত হবেন এবং পুরো কাজ কতদিনে শেষ হবে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা না গেলেও কর্মচারী মহলে আশাবাদের হাওয়া বইছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক কাঠামোতে এই কমিশনের প্রভাব কতটা গভীর হয়, তা সময়ই বলবে।