বেতন বাড়বে কবে, অষ্টম কমিশন নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

নয়াদিল্লি, ৮ জুন ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয়…

8th Pay Commission Implementation Date: Latest Updates and Govt Speculations

নয়াদিল্লি, ৮ জুন ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগী এই কমিশনের সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছেন, যা তাদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। তবে, এর কার্যকর হওয়ার তারিখ এবং সুপারিশগুলো নিয়ে জল্পনা অব্যাহত রয়েছে। আসুন, সর্বশেষ তথ্য এবং জল্পনার ভিত্তিতে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করি।

অষ্টম বেতন কমিশনের প্রত্যাশিত কার্যকরের তারিখ
সাধারণত, ভারত সরকার প্রতি দশ বছর অন্তর বেতন কমিশন গঠন করে, যা সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশন কাঠামো পর্যালোচনা করে। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল, এবং এর মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। এই ধারাবাহিকতায়, অষ্টম বেতন কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, সরকার এই কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া এক বছর আগে শুরু করেছে, যাতে সুপারিশগুলো যথাসময়ে পর্যালোচনা এবং কার্যকর করা যায়।

   

তবে, কিছু সূত্র এবং বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় সচিব মনোজ গোবিলের বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত এবং অনুমোদিত হতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য কোনো আর্থিক বরাদ্দ না থাকায়, এটি সম্ভবত ২০২৬-২৭ অর্থবছরে কার্যকর হতে পারে।

ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং বেতন বৃদ্ধি
অষ্টম বেতন কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, যা বর্তমান মূল বেতনের গুণক হিসেবে নতুন বেতন নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যার ফলে ন্যূনতম মূল বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮,০০০ টাকা হয়েছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে জল্পনা চলছে। যদি ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর গৃহীত হয়, তবে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৫১,৪৮০ টাকা হতে পারে। একইভাবে, পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫,৭৪০ টাকায় পৌঁছাতে পারে।

কর্মচারী সংগঠনগুলো ২.৮৬ বা তার বেশি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের দাবি জানিয়েছে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (এনসি-জেসিএম)-এর সেক্রেটারি শিব গোপাল মিশ্র জানিয়েছেন, তারা নিম্ন স্তরের কর্মচারীদের জন্য বেতন কাঠামো একীভূত করার এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা
অষ্টম বেতন কমিশন শুধু বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়, মহার্ঘ ভাতা (ডিএ), গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ), এবং পরিবহন ভাতা (টিএ) সহ বিভিন্ন ভাতার সংশোধনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে, মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের ৫৫% এ পৌঁছেছে, এবং কর্মচারী সংগঠনগুলো এটিকে মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়েছে। এনসি-জেসিএম সম্প্রতি ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি)-এর সঙ্গে একটি বৈঠকে এই দাবি তুলে ধরেছে।

Advertisements

এছাড়া, মডিফাইড অ্যাসিওর্ড ক্যারিয়ার প্রোগ্রেশন (এমএসিপি) স্কিমের সংস্কারের প্রস্তাবও রয়েছে, যা কর্মচারীদের কর্মজীবনে কমপক্ষে পাঁচটি প্রমোশন নিশ্চিত করতে পারে। পেনশনভোগীদের জন্যও উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রত্যাশিত, যার মধ্যে পেনশন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য অবসর-পরবর্তী সুবিধা অন্তর্ভুক্ত।

বিলম্বের জল্পনা
যদিও সরকার ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কমিশন কার্যকরের কথা বলেছে, কিছু বাধা বিলম্ব ঘটাতে পারে। প্রথমত, কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়োগ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, কমিশনের কার্যপরিধি (টার্মস অফ রেফারেন্স) চূড়ান্ত করা বাকি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে প্রায় ২২ মাস সময় লেগেছিল।

একটি ইকোনমিক টাইমস প্রতিবেদনে রোহিতাশ্ব সিনহা, কিং স্টাব অ্যান্ড কাসিভা-এর পার্টনার, বলেছেন, “২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, ২০২৬ সালের মধ্যে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” এছাড়া, ২০২৫-২৬ বাজেটে কোনো আর্থিক বরাদ্দ না থাকায়, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

পেনশন নিয়ে বিতর্ক
অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে আরেকটি বিতর্ক হলো ২০২৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। ফিনান্স বিল ২০২৫-এ কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসেস (সিসিএস) পেনশন নিয়মে পরিবর্তনের প্রস্তাবের পর এই জল্পনা শুরু হয়। কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে, এই পরিবর্তন ২০২৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। তবে, অর্থমন্ত্রী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পরিবর্তনগুলো পেনশন গণনা সহজ করার জন্য, এবং কোনো পেনশনভোগী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না।

অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, বিলম্বের সম্ভাবনা এবং আর্থিক বরাদ্দের অভাব এই প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, ভাতা সংশোধন, এবং পেনশন সুবিধা নিয়ে কর্মচারীদের প্রত্যাশা উঁচু। সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং কমিশনের সুপারিশগুলো এই বিষয়ে স্পষ্টতা আনবে। ততক্ষণ পর্যন্ত, কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা অষ্টম বেতন কমিশনের সর্বশেষ আপডেটের অপেক্ষায় রয়েছেন।