অষ্টম বেতন কমিশনে পেনশনভোগীরা কি সমান সুবিধা পাবেন?

কেন্দ্রীয় সরকারের অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উৎসাহ এবং উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে…

8th Pay Commission How Pensioners’ Retirement Income Could Surge with New Pay Matrix

কেন্দ্রীয় সরকারের অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে উৎসাহ এবং উদ্বেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত এই কমিশন, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা, প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বেতন, ভাতা এবং পেনশনের সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হল—২০২৬ সালের আগে অবসর নেওয়া পেনশনভোগীরা কি এই কমিশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন, নাকি তাঁরাও সমান সুবিধা পাবেন? এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি এখন চরমে।

অষ্টম বেতন কমিশন: পটভূমি ও প্রত্যাশা
অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশন সংশোধনের জন্য গঠিত একটি সরকারি প্যানেল, যা প্রতি দশ বছর অন্তর গঠিত হয়। ২০১৬ সালে কার্যকর হওয়া সপ্তম বেতন কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। অষ্টম বেতন কমিশনের ঘোষণা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে, এবং এটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কমিশনের লক্ষ্য হল মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কর্মচারীদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন ও পেনশনের সংশোধন করা।

   

সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে, ন্যূনতম মূল বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮,০০০ টাকা হয়েছিল, এবং ন্যূনতম পেনশন ৩,৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৯,০০০ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এই সংশোধনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে ন্যূনতম মূল বেতন ৪১,০০০ থেকে ৫১,৪৮০ টাকা এবং ন্যূনতম পেনশন ২০,৫০০ থেকে ২৫,৭৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এই সম্ভাব্য বৃদ্ধি পেনশনভোগীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক স্বস্তি আনতে পারে।

পেনশন সমতার প্রশ্ন
অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হল ২০২৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের সুবিধার বিষয়টি। ফিনান্স বিল ২০২৫-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসেস (সিসিএস) পেনশন নিয়মে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, যা কিছু বিরোধী দল এবং পেনশনভোগী সংগঠনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস নেতা কে.সি. ভেনুগোপাল এবং অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (এআইটিইউসি)-এর আমিত্রাজিত কৌর-এর মতো ব্যক্তিরা দাবি করেছেন যে এই সংশোধনীগুলো ২০২৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে পারে। তাঁরা এটিকে সরকারের ‘লুকানো এজেন্ডা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তবে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ২০২৫ সালের মার্চ মাসে রাজ্যসভায় এই অভিযোগের জবাবে স্পষ্ট করেছেন যে পেনশন নিয়মে সংশোধনীগুলো কেবল প্রক্রিয়াগত এবং এটি পেনশনভোগীদের সুবিধার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, “২০১৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীরা যেমন সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে সমান সুবিধা পেয়েছিলেন, তেমনই অষ্টম বেতন কমিশনের অধীনেও সেই নীতি অব্যাহত থাকবে।” তিনি আরও জানান যে এই সংশোধনীগুলো পেনশন গণনাকে সহজ করার জন্য করা হয়েছে, এবং এটি পুরনো বা নতুন পেনশনভোগীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করবে না।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও বিতর্ক
অষ্টম বেতন কমিশনের বাস্তবায়ন সরকারের উপর প্রায় ১.৮ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বিপুল ব্যয়ের কারণে কিছু মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে সরকার পুরনো পেনশনভোগীদের সুবিধা সীমিত করার চেষ্টা করছে। তবে, সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে পেনশন সমতার নীতি অটুট থাকবে।

Advertisements

এছাড়া, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ভলান্টারি এজেন্সিস (SCOVA)-এর ৩৪তম বৈঠকে পেনশন কমিউটেশনের মেয়াদ ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১২ বছর করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এই পরিবর্তন পেনশনভোগীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক সুবিধা হতে পারে, কারণ এটি তাঁদের মাসিক পেনশনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলো চূড়ান্ত হতে ২০২৬ সালের শেষ বা ২০২৭ সালের শুরু পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে, সরকারের পক্ষ থেকে পেনশনভোগীদের জন্য কোনো অন্তর্বর্তী ত্রাণ বা বকেয়া পেমেন্টের ব্যবস্থা করা হতে পারে, যেমনটি অতীতের কমিশনগুলোতে দেখা গেছে। পেনশনভোগী সংগঠনগুলো এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলো এই বিষয়ে সরকারের কাছে তাঁদের দাবি জানিয়ে চলেছে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে, যেখানে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ বসবাস করেন, এই কমিশনের ফলাফল তাঁদের জীবনযাত্রার মানের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে, পেনশনভোগীরা আশা করছেন যে অষ্টম বেতন কমিশন তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। সরকারি ঘোষণা এবং অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও, পেনশনভোগীদের মধ্যে কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে। তাঁরা আশা করছেন যে সরকারের চূড়ান্ত সুপারিশগুলো সকল পেনশনভোগীর জন্য ন্যায্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।

অষ্টম বেতন কমিশন পেনশনভোগীদের জন্য একটি নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে, তবে পুরনো পেনশনভোগীদের সুবিধার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের আশ্বাস এবং সরকারের পূর্ববর্তী রেকর্ড বিবেচনা করে, আশা করা যায় যে সকল পেনশনভোগীই এই কমিশনের সুবিধা পাবেন। তবে, পেনশনভোগীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে তাঁরা সরকারি ঘোষণার উপর নির্ভর করেন এবং অযাচিত গুজব এড়িয়ে চলেন। অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং বাস্তবায়নের অপেক্ষায়, পশ্চিমবঙ্গের পেনশনভোগীরা আশাবাদী যে তাঁদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে।