অষ্টম বেতন কমিশনে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরাও কি বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন?

ভারত সরকারের অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির…

8th Pay Commission,State Government Employees, Salary Hike, Central Government Employees

ভারত সরকারের অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামোর সংশোধন করবে। তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে: রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কি এই কমিশনের সুবিধা পাবেন? এই প্রতিবেদনে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অষ্টম বেতন কমিশন কী?
অষ্টম বেতন কমিশন হল ভারত সরকারের একটি প্যানেল, যা প্রতি দশ বছর পর পর গঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন পর্যালোচনা করে মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধনের সুপারিশ করা। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল, যা ন্যূনতম বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকায় এবং ন্যূনতম পেনশন ৩,৫০০ টাকা থেকে ৯,০০০ টাকায় উন্নীত করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬-এর মধ্যে থাকতে পারে, যা বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ধারণ করবে।

   

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অষ্টম বেতন কমিশনের প্রযোজ্যতা
অষ্টম বেতন কমিশন প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য গঠিত হলেও, এর সুপারিশগুলি প্রায়শই রাজ্য সরকারগুলির জন্য একটি মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। তবে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন সংশোধনের জন্য অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ সরাসরি বাধ্যতামূলক নয়। রাজ্য সরকারগুলি নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা, রাজনৈতিক অগ্রাধিকার এবং কর্মচারী ইউনিয়নের দাবির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।

উদাহরণস্বরূপ, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, এবং তামিলনাড়ুর মতো কিছু রাজ্য তাদের কর্মচারীদের জন্য অনুরূপ বেতন সংশোধন ঘোষণা করেছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৯ সালে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি করেছিল, যদিও তা কেন্দ্রের তুলনায় কিছুটা দেরিতে। তবে, অসম, বিহার এবং উত্তরাখণ্ডের মতো কিছু রাজ্য আর্থিক সংকটের কারণে এই সুপারিশগুলি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে পারেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশনের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যেতে পারে। রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রীয় কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং বেতন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে নিজেদের বেতন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে, এবং কিছু রাজ্যে বাস্তবায়ন ২০২৬ সালের পরেও ঘটতে পারে।

সম্ভাব্য সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ
যদি রাজ্য সরকারগুলি অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করে, তবে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা নিম্নলিখিত সুবিধা পেতে পারেন:
• বেতন বৃদ্ধি: ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ হলে ন্যূনতম বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে।
• ভাতার সংশোধন: মহার্ঘ ভাতা (DA), গৃহভাড়া ভাতা (HRA), এবং পরিবহন ভাতা (TA) সংশোধিত হতে পারে। বর্তমানে DA ৫৫%-এ রয়েছে, যা নতুন বেতন কাঠামোতে শূন্যে রিসেট হবে এবং নতুন হারে গণনা শুরু হবে।
• পেনশন সুবিধা: পেনশনভোগীদের জন্য ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে ২৫,৭৪০ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে।
• অন্যান্য সুবিধা: মডিফাইড অ্যাসিওর্ড ক্যারিয়ার প্রোগ্রেশন (MACP) স্কিমের সংস্কার এবং স্বাস্থ্য বীমা সুবিধার উন্নতি হতে পারে।
তবে, রাজ্য সরকারগুলির জন্য এই সুবিধা বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
• আর্থিক চাপ: বেতন বৃদ্ধি রাজ্যের রাজস্ব ব্যয় বাড়িয়ে দেবে, যা অনেক রাজ্যের জন্য বোঝা হতে পারে।
• রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: কিছু রাজ্য নির্বাচনের আগে বেতন বৃদ্ধি ঘোষণা করতে পারে, তবে বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে।
• বৈষম্য: কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য বাড়তে পারে, যদি রাজ্যগুলি কেন্দ্রের সমান সুবিধা না দেয়।

Advertisements

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। সপ্তম বেতন কমিশন বাস্তবায়নের সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছুটা বিলম্ব করলেও, কর্মচারী ইউনিয়নের চাপ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি গ্রহণ করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের ক্ষেত্রে, রাজ্য সরকার সম্ভবত কেন্দ্রীয় সুপারিশের ভিত্তিতে একটি রাজ্য বেতন কমিটি গঠন করতে পারে। তবে, রাজ্যের ঋণের বোঝা এবং আর্থিক ঘাটতি এই প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে।

এক্স-এ পোস্ট থেকে জানা যায়, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশনের বাস্তবায়ন নিয়ে আশাবাদ রয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কেন্দ্র যদি ২০২৬ সালে বেতন বাড়ায়, তবে পশ্চিমবঙ্গও তা অনুসরণ করবে।” তবে, এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি।

অর্থনৈতিক প্রভাব
অষ্টম বেতন কমিশনের বেতন বৃদ্ধি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াবে, যা ভোগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে। তবে, এটি সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতিবিদ ডি.কে. শ্রীবাস্তব বলেন, “বেতন সংশোধন রাজস্ব ব্যয় বাড়ায়, যা মূলধন ব্যয়ের জন্য উপলব্ধ স্থান কমিয়ে দেয়।”

অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরাসরি প্রযোজ্য হলেও, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এর সুবিধা নির্ভর করবে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। ঐতিহাসিকভাবে, বেশিরভাগ রাজ্য কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করে, তবে বাস্তবায়নের সময় এবং পরিমাণে পার্থক্য থাকে। পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য রাজ্যের কর্মচারীরা ২০২৬ সালের পরে বেতন বৃদ্ধির আশা করতে পারেন, তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ এবং রাজ্য সরকারগুলির প্রতিক্রিয়া জানতে কর্মচারীদের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।