কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বেতন ও পেনশন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছে অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন (8th Pay Commission), যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এই ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এই আশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কোচবিহারের এক নিম্ন বিভাগের ক্লার্ক, শ্যামল দাস (৪২), যিনি গত দুই দশক ধরে সরকারি অফিসে কাজ করছেন। তাঁর স্বপ্ন, অষ্টম বেতন কমিশনের প্রস্তাবিত বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁর পরিবারের জন্য একটি উন্নত জীবন গড়ে তোলা।
শ্যামল দাসের মতো লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন একটি বড় পরিবর্তনের প্রতীক। ২০১৬ সালে কার্যকর সপ্তম বেতন কমিশনের পর, বর্তমানে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা। সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা বেতন ও পেনশন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে লেভেল ১-এর কর্মচারীদের ন্যূনতম মূল বেতন ৪১,০০০ থেকে ৫১,৪৮০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। শ্যামলের বর্তমান মূল বেতন ১৯,৯০০ টাকা (লেভেল ২), যা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ হলে ৫৬,৯১৪ টাকায় উন্নীত হতে পারে। এই বৃদ্ধি তার মোট বেতনকে (মহার্ঘ ভাতা, গৃহভাড়া ভাতা এবং পরিবহন ভাতা সহ) প্রায় ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি নিয়ে যাবে।
শ্যামল বলেন, “আমার দুই মেয়ে পড়াশোনা করছে। বড় মেয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ জোগানো আমার পক্ষে কঠিন। ছোট মেয়ের জন্যও ভালো স্কুলের ফি আর টিউশনের খরচ বাড়ছে। এছাড়া আমার বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচও রয়েছে। অষ্টম বেতন কমিশনের বেতন বৃদ্ধি আমার পরিবারের জন্য একটা বড় স্বস্তি আনবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি স্বপ্ন দেখি আমার মেয়েরা ভালো শিক্ষা নিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। এই বেতন বৃদ্ধি আমাকে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
অষ্টম বেতন কমিশন শুধু বেতন বৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভাতা সংশোধন, পেনশন সুবিধা বৃদ্ধি এবং কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। বর্তমানে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মূল বেতনের ৫৫%। অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হলে ডিএ শূন্যে নেমে আসবে এবং নতুন বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হবে। গৃহভাড়া ভাতা (এইচআরএ) এবং পরিবহন ভাতাও নতুন বেতনের ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারিত হবে। এছাড়া, সংশোধিত পে ম্যাট্রিক্স বেতন স্ল্যাবগুলিকে আরও স্বচ্ছ ও সুবিন্যস্ত করবে।
শ্যামলের মতো নিম্ন বিভাগের ক্লার্করা প্রায়ই আর্থিক চাপের মুখে থাকেন। তাঁরা অফিসের নথি রক্ষণাবেক্ষণ, ডেটা এন্ট্রি এবং অন্যান্য কেরানি কাজের দায়িত্ব পালন করেন। তবে, তাঁদের বেতন জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। অষ্টম বেতন কমিশন তাঁদের জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতার পথ প্রশস্ত করবে। জাতীয় কাউন্সিল–জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (এনসি-জেসিএম) ইতিমধ্যেই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, ন্যূনতম মজুরি, ভাতা এবং পেনশন সুবিধার উপর একটি সাধারণ স্মারকলিপি তৈরির কাজ শুরু করেছে।
শ্যামলের গল্প শুধু তাঁর একার নয়। এটি প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর প্রতিনিধিত্ব করে। অষ্টম বেতন কমিশন তাঁদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। শ্যামলের মতো কর্মচারীরা আশা করছেন, এই কমিশন তাঁদের পরিশ্রমের প্রকৃত মূল্যায়ন করবে এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। তিনি বলেন, “আমি চাই আমার পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে। এই বেতন বৃদ্ধি আমাকে সেই সুযোগ দেবে।”
অষ্টম বেতন কমিশন শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, সরকারি কর্মচারীদের মনোবল বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি ভারতীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, কারণ বেতন বৃদ্ধির ফলে কর্মচারীদের ব্যয় ক্ষমতা বাড়বে, যা বাজারে চাহিদা বাড়াতে সহায়ক হবে। শ্যামল দাসের মতো সাধারণ ক্লার্কদের স্বপ্ন এখন অষ্টম বেতন কমিশনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যা তাঁদের জীবনে নতুন আলো আনতে প্রস্তুত।