ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য একটি বড় খবর এসেছে। ২০২৫ সালের ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার ইউনিয়ন ক্যাবিনেট অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের (8th Pay Commission ) টার্মস অফ রেফারেন্স (টিওআর) অনুমোদন করেছে। এর ফলে এই কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন রিটায়ার্ড সুপ্রিম কোর্ট জজ রঞ্জনা প্রকাশ দেসাই। এই কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মী এবং ৬৯ লক্ষ পেনশনারের বেতন, ভাতা এবং পেনশনের পুনর্বিবেচনা করা হবে। কমিশনের রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা ১৮ মাস, যা সম্ভবত ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্তটি জানুয়ারি ২০২৫-এ প্রথম ঘোষিত হয়েছিল, এবং এখন এটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। কমিশন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (বেতন সংশোধনের গুণক) এবং অন্যান্য নিয়মাবলী নির্ধারণ করবে, যা কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করবে।
অষ্টম পে কমিশনের মূল ফোকাস হলো বর্তমান বেতন কাঠামোর পর্যালোচনা, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং উন্নয়নমূলক খরচ বিবেচনা করে নতুন বেতন স্কেল নির্ধারণ। সাতম পে কমিশন ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল, যা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর অষ্টম কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকর হলে ডিয়ারনেস আলাওয়েন্স (ডিএ) শূন্যে রিসেট হয়ে যাবে, যা বর্তমানে ৫৮%। এতে বেতনের প্রকৃত বৃদ্ধি কম দেখা যাবে, কিন্তু লং টার্মে এটি কর্মীদের জন্য লাভজনক। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজ এবং অ্যাম্বিট ক্যাপিটালের মতো ব্রোকারেজ ফার্মগুলির রিপোর্টে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮ থেকে ২.৪৬ এর মধ্যে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই গুণকটি বর্তমান বেতনকে গুণ করে নতুন বেতন নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, লেভেল ১ (পেয়ন, অ্যাটেন্ড্যান্টস, মালী ইত্যাদি) কর্মীদের বর্তমান মিনিমাম বেতন ১৮,০০০ টাকা, যা হাউস রেন্ট আলাওয়েন্স (এইচআরএ) এবং ট্রান্সপোর্ট আলাওয়েন্স (টিএ) সহ মোট ২৯,০০০ টাকার কাছাকাছি হয়।
কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজের জুলাই মাসের রিপোর্টে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮ অনুমান করা হয়েছে। এতে লেভেল ১-এর বেসিক বেতন ১৮,০০০ থেকে ৩২,৪০০ টাকায় উন্নীত হবে, যা ৮০% বৃদ্ধি। কিন্তু ডিএ শূন্যে রিসেট হওয়ায় প্রকৃত বৃদ্ধি মাত্র ১৩% হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কমিশন ২০২৬-এর শেষভাগ বা ২০২৭-এর শুরুতে কার্যকর হতে পারে, যা খরচ বাড়িয়ে কনজাম্পশন এবং সেভিংসকে তাৎক্ষণিক বুস্ট দেবে। অন্যদিকে, অ্যাম্বিট ক্যাপিটালের জুলাই রিপোর্টে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের রেঞ্জ ১.৮ থেকে ২.৪৬ দেখানো হয়েছে। তাদের বেস কেস (১.৮২) অনুসারে বেতন ১৪% বাড়বে, মিডিয়ান কেস (২.১৫) অনুসারে ৩৪%, এবং আপার কেস (২.৪৬) অনুসারে ৫৪% বৃদ্ধি হতে পারে। এতে লেভেল ১-এর বেসিক বেতন যথাক্রমে ৩২,৭৬০, ৩৮,৭০০ এবং ৪৪,২৮০ টাকা হবে।
এই অনুমানগুলি লেভেল ১ কর্মীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা সরকারের সবচেয়ে নিম্ন স্তরের কর্মীরা। বর্তমানে এই লেভেলে পেয়ন, অ্যাটেন্ড্যান্ট, চৌকিদার, মালী ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। সাতম পে কমিশনের সময় ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা মিনিমাম বেতন ৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকায় নিয়ে গিয়েছিল। এবারের কমিশন জলবায়ু পরিবর্তন, ইনফ্লেশন এবং ফিসক্যাল চ্যালেঞ্জগুলি বিবেচনা করে ভাতা যেমন ডিএ, এইচআরএ, টিএ পুনর্গঠন করবে। ক্লিয়ারট্যাক্সের রিপোর্ট অনুসারে, ৩০-৩৪% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ১.৮৩ থেকে ২.৪৬-এর উপর নির্ভর করবে। এছাড়া, ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) এর অবদান বাড়বে এবং ন্যূনতম পেনশন ১০,০০০ টাকা নিশ্চিত করা হতে পারে।
কমিশনের গঠনের পরবর্তী ধাপে চেয়ারপারসন জাস্টিস রঞ্জনা দেসাই (প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারপারসন) এবং পার্ট-টাইম মেম্বার পুলক ঘোষ (আইআইএম ব্যাঙ্গালুরুর প্রফেসর) এবং সেক্রেটারি পঙ্কজ জৈন (পেট্রোলিয়াম সেক্রেটারি) স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করবেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কমিশন ১ কোটির বেশি কর্মী-পেনশনারকে প্রভাবিত করবে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মতে, রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সরকার পর্যালোচনা করে ২০২৬ থেকে কার্যকর করবে, যাতে আর্স (বকেয়া) পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকে। ব্যাঙ্কার্স অ্যাডা রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিনিমাম বেতন ৪১,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে, যা পে ম্যাট্রিক্সকে আধুনিকীকরণ করবে।
এই কমিশন শুধু বেতন বাড়াবে না, বরং কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। উদাহরণস্বরূপ, লেভেল ১-এর একজন পেয়নের বর্তমান মাসিক আয় ২৯,০০০ টাকা (বেসিক + ডিএ + এইচআরএ), যা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.১৫ অনুসারে ৩৮,৭০০ টাকায় উন্নীত হলে ৩৪% বৃদ্ধি পাবে। এটি তাদের পরিবারের জন্য বড় স্বস্তি। ওয়ানইন্ডিয়া নিউজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাস্তব বৃদ্ধি ১৩% থেকে ৫৪% হতে পারে, কিন্তু ডিএ রিসেটের কারণে প্রথমে কম মনে হবে। ব্যবসায়িক টুডের রিপোর্টে কোটাকের অনুমান অনুসারে ১.৮ ফ্যাক্টরে মিনিমাম বেতন ৩০,০০০ টাকার কাছাকাছি হবে।
অষ্টম পে কমিশনের প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়বে, কারণ এটি কনজাম্পশন বাড়িয়ে জিডিপি-তে অবদান রাখবে। কর্মীরা এখন কমিশনের সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছেন, যা রাজ্য সরকার এবং পিএসইউ-দের সাথে সমন্বয় করে নেওয়া হবে। ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটি কর্মীদের কল্যাণ এবং ফিসক্যাল দায়িত্বের ভারসাম্য স্থাপন করবে। যারা লেভেল ১-এ কাজ করেন, তাদের জন্য এই বৃদ্ধি জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করবে। আরও আপডেটের জন্য সরকারি ওয়েবসাইট বা নিউজ চ্যানেল ফলো করুন। এই কমিশন ভারতের সরকারি কর্মীদের স্বপ্ন পূরণের পথে একটি মাইলফলক।



