Home Loan: লোন রিফাইন্যান্স করার আগে সতর্ক হোন এই ৭টি গোপন খরচ নিয়ে

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বছরে এখন পর্যন্ত তিনবার রেপো রেট কমিয়েছে। প্রথম দুটি মনেটারি পলিসি কমিটির (MPC) বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট…

Union Bank, Canara Bank, IOB Slash Home and Car Loan Interest Rates After RBI Repo Rate Cut

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বছরে এখন পর্যন্ত তিনবার রেপো রেট কমিয়েছে। প্রথম দুটি মনেটারি পলিসি কমিটির (MPC) বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট এবং সাম্প্রতিক বৈঠকে ৫০ বেসিস পয়েন্টের এক বৃহৎ কাট — এই ধারাবাহিক হ্রাসের ফলে বহু গৃহঋণগ্রাহী (Home Loan) বর্তমানে তাঁদের ঋণ রিফাইন্যান্স করার কথা ভাবছেন। লক্ষ্য একটাই — কম সুদের হার ও কম EMI (ইকুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট) এর বোঝা।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গৃহঋণ রিফাইন্যান্স করাটা যতটা সহজ মনে হয়, ততটা নয়। এর পিছনে রয়েছে একাধিক গোপন খরচ ও প্রশাসনিক জটিলতা যা অনেকেই আগে থেকে বিবেচনা করেন না। তাই ঋণ রিফাইন্যান্স করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ।

   

প্রসেসিং ফি: শুরুর ধাক্কা:
নতুন কোনও ঋণদাতার কাছে গিয়ে গৃহঋণ রিফাইন্যান্স করতে গেলে সাধারণত ০.৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত প্রসেসিং ফি দিতে হয়। যেমন, ৪০ লক্ষ টাকার ঋণের ক্ষেত্রে যদি ০.৭৫ শতাংশ প্রসেসিং ফি হয়, তাহলে ৩০,০০০ টাকা দিতে হবে শুধুমাত্র এই ফিতে।

BASIC Home Loan-এর CEO ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা অতুল মঙ্গা বলেন, “অনেক সময় এই ফি মাফ করা হয় অফারের অংশ হিসেবে, কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় সেই টাকা অন্য খাতে, যেমন প্রশাসনিক খরচ বা ইন্টিগ্রেটেড চার্জ হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হয়। তাই চুক্তির ‘ফাইন প্রিন্ট’ ভালো করে পড়ে নেওয়া উচিত।”

টেকনিক্যাল ও লিগ্যাল চার্জ: ছাড়াছাড়ি নয়:
নতুন ঋণদাতা সাধারণত সম্পত্তির নতুন মূল্যায়ন ও আইনি যাচাই করে থাকেন। এই কাজের জন্য নির্ধারিত টেকনিক্যাল ও লিগ্যাল ফি দিতে হয়।
টেকনিক্যাল ফি: সম্পত্তির নতুন মূল্য নির্ধারণের জন্য ৩,০০০ টাকা – ৫,০০০ টাকা।
লিগ্যাল ফি: সম্পত্তির মালিকানা যাচাই ও অন্য কোনও আইনি জটিলতা আছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য ৫,০০০ টাকা – ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন চার্জ: রাজ্যভেদে আলাদা:
একাধিক রাজ্যে — যেমন রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও কর্ণাটকে — রিফাইন্যান্সিং করলে সম্পত্তির স্ট্যাম্পিং ও রেজিস্ট্রেশন নতুন করে করতে হয়। এতে খরচ অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।
স্ট্যাম্প ডিউটি এখানে ৩% থেকে ৭% পর্যন্ত হতে পারে, যা নির্ভর করে রাজ্য ও ব্যক্তির প্রোফাইলের উপর। কিছু রাজ্যে, যেমন হিমাচল প্রদেশ, এই রেট ৮% পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।
রেজিস্ট্রেশন চার্জ আবার ৫০,০০০ টাকা থেকে ১% পর্যন্ত হতে পারে, যা বড় ঋণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যয়।

পূর্বপ্রদত্ত ঋণের জরিমানা: নির্ভর করে ঋণের ধরণে:
RBI নির্দেশ অনুসারে, ভাসমান সুদের হারে নেওয়া গৃহঋণের ক্ষেত্রে আগাম ঋণ ফেরত দিলে কোনও প্রিপেমেন্ট পেনাল্টি নেওয়া যায় না। কিন্তু যাঁরা ফিক্সড রেট-এ ঋণ নিয়েছেন অথবা হাউজিং ফাইন্যান্স কোম্পানির (HFC) থেকে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ২% থেকে ৪% পর্যন্ত প্রিপেমেন্ট পেনাল্টি নেওয়া হতে পারে।

Advertisements

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ খরচ ও সময়ের অপচয়:
রিফাইন্যান্স করার সময় একগুচ্ছ কাগজপত্র জমা দিতে হয় — পরিচয়পত্র, আয় প্রমাণ, বর্তমান ঋণের বিবরণ, সম্পত্তির দলিল ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়াটি শুধু সময়সাপেক্ষই নয়, কিছু ক্ষেত্রে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ খরচও যুক্ত হয়।
এই খরচ হয়তো বড় অঙ্কের নয়, কিন্তু সবমিলিয়ে রিফাইন্যান্সিং প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।

সুদের হারের বিভ্রান্তি: কম দেখালেও সবসময় লাভ হয় না:
ঋণদাতারা অনেক সময় খুব কম সুদের হারের বিজ্ঞাপন দেন। কিন্তু আদতে ওই হারে কতটা লাভ হচ্ছে তা নির্ভর করে বর্তমান ঋণের মেয়াদ, অবশিষ্ট পরিশোধযোগ্য মূলধন এবং নতুন রেটের কাঠামোর উপর।
যদি আপনার ঋণ মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকে, তাহলে রিফাইন্যান্স করে যে বাঁচতামান পাওয়া যাবে, তা গোপন খরচ দিয়ে ঢেকে যেতে পারে।

ক্রেডিট স্কোরে প্রভাব:
নতুন ঋণের জন্য আবেদন করলে প্রতিবার ঋণদাতা আপনার ক্রেডিট স্কোর চেক করেন। এতে আপনার স্কোর কিছুটা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে একসঙ্গে একাধিক আবেদন করলে স্কোরে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে নতুন ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

ঋণ রিফাইন্যান্সিং অনেক ক্ষেত্রেই একটি চতুর সিদ্ধান্ত হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে থাকেন ও নতুন সুদের হার অনেক কম হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সুদের হার নয়, সামগ্রিক খরচ, সময় ও ঝুঁকির বিষয়েও সচেতন থাকা জরুরি।

আপনার EMI কমবে ঠিকই, কিন্তু আপনি যদি ৫০,০০০ টাকা খরচ করে মাত্র ২০,০০০ টাকা সাশ্রয় করেন, তাহলে এই লেনদেন আপনার জন্য লাভজনক নয়। তাই প্রতিটি ব্যয় খুঁটিয়ে দেখে তবেই refinancing-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।