বাড়ির EMI নিয়ে দুশ্চিন্তা? রইল ৬টি কার্যকরী পরামর্শ

নতুন বাড়িতে ওঠার অনুভূতি সবসময়ই অত্যন্ত স্পেশাল। বছরের পর বছর ধরে সঞ্চয়, সম্ভবত একটি গৃহঋণ নেওয়া—সব মিলিয়ে বহু পরিশ্রমের ফল এই নতুন বাসস্থান। এই আনন্দের…

7 Expert Tips to Get Home Loan Approval Faster in India

নতুন বাড়িতে ওঠার অনুভূতি সবসময়ই অত্যন্ত স্পেশাল। বছরের পর বছর ধরে সঞ্চয়, সম্ভবত একটি গৃহঋণ নেওয়া—সব মিলিয়ে বহু পরিশ্রমের ফল এই নতুন বাসস্থান। এই আনন্দের মুহূর্তে আত্মতৃপ্তি স্বাভাবিক, কিন্তু এই সঙ্গেই মনে রাখা দরকার—এই বাড়ির পেছনে যে ঋণ রয়েছে, তার দায়িত্বও কম নয়।

গৃহঋণ একটি দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতা। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের জন্য এই ঋণ নেওয়া হয়, যার মানে দীর্ঘদিন নিয়মিত কিস্তি মেটাতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যদি ঋণটি পরিচালনা করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতের আর্থিক চাপ অনেকটাই কমে আসবে। দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু সহজ ও কার্যকরী উপায়, যা আপনাকে আপনার গৃহঋণ সফলভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।

   

১. আপনার অর্থ কোথায়, তা বুঝে নিন
গৃহঋণ শুরু হওয়ার পর আপনার অর্থ কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে, তা বোঝা খুবই জরুরি। আপনার টাকা যদি EPF, PPF, Fixed Deposit, ULIP-এর মতো যন্ত্রে পড়ে থাকে, তাহলে দেখে নিন সেগুলির রিটার্ন কেমন হচ্ছে।

অনেক সময় এমন কিছু ইনভেস্টমেন্ট থাকে যেগুলির রিটার্ন খুবই কম বা অপ্রয়োজনীয় ফি কেটে নিচ্ছে। সেই অর্থ ব্যবহার করে গৃহঋণের আংশিক পূর্ব-মেয়াদপূর্তির (prepayment) কথা ভাবুন। এতে সুদের বোঝা কমে যায়, ফলে সামগ্রিকভাবে আপনি লাভবান হবেন।

২. সাধ্য থাকলে EMI একটু বাড়িয়ে দিন
আপনি যদি মাসে একটু বেশি EMI দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, তাহলে সেটি ভেবে দেখতে পারেন। কারণ EMI বাড়ালে আপনি দ্রুত লোন শোধ করতে পারবেন, আর তাতেই সুদের খরচ কমে আসবে।

অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনাকে লাভবান করবে এবং ভবিষ্যতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য যেমন—বৃদ্ধি ভাতা, সন্তানের পড়াশোনার খরচ—তাতে এই অতিরিক্ত টাকা ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. সুদহার কমেছে কি না নজরে রাখুন
RBI মাঝে মাঝেই রেপো রেট কমায় বা বাড়ায়। যেমন ধরুন, সম্প্রতি রেপো রেট ৫.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে বেশ কিছু ব্যাংক তাদের হোম লোনের সুদের হার কমিয়েছে।

আপনার ব্যাংক এই হ্রাসের প্রতিফলন করছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখুন। যদি আপনি এখনও বেশি হারে লোন দিচ্ছেন, তবে সুদের হার কমাতে ব্যাংক বদলের (loan balance transfer) ভাবনা চিন্তা করতে পারেন।
তবে মনে রাখবেন, ছোটখাটো হারের পার্থক্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। যখন স্পষ্টভাবে কম সুদে, কম খরচে অন্য ব্যাঙ্ক অফার দিচ্ছে, তখনই পরিবর্তন করাটা লাভজনক হবে। ব্যাংক কত ঘন ঘন সুদের হার রিসেট করে, সেটাও জানা জরুরি।

৪. EMI কখনও মিস করবেন না
মাসের কিস্তি মিস করা শুধু মানসিক চাপই তৈরি করে না, বরং আপনার ক্রেডিট স্কোরেও প্রভাব ফেলে। যার ফলে ভবিষ্যতে গাড়ির লোন, পার্সোনাল লোন বা ক্রেডিট কার্ড পেতে সমস্যা হতে পারে।

Advertisements

এই সমস্যা এড়াতে EMI টাকাটা মাসের শুরুতেই আলাদা করে রাখুন। চাইলে একটি আলাদা অ্যাকাউন্টে সেই টাকা রেখে দিন, বা EMI অটোমেটিক কেটে নেওয়ার ব্যবস্থাও করে রাখতে পারেন।

৫. বোনাস বা অতিরিক্ত টাকাকে কাজে লাগান
আপনি যদি কোনও উৎসব বোনাস, ট্যাক্স রিফান্ড বা পরিপক্ক হওয়া FD-এর টাকা পান, তবে তার একটা অংশ দিয়ে গৃহঋণের প্রিপেমেন্ট করুন। এতে লোনের মূল টাকা কমে যাবে, ফলে EMI কমে যেতে পারে বা সময় কমে যাবে।

বেশিরভাগ ব্যাংক এখন প্রিপেমেন্টে অতিরিক্ত চার্জ রাখে না, তবুও আগেভাগে খোঁজ নিয়ে নেওয়াই ভালো।

৬. লোন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন
আজকের দিনে অনলাইনে অনেক সহজ EMI ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। এতে আপনি জানতে পারবেন আপনার আয় ও খরচ অনুযায়ী কতটা EMI দিতে পারবেন। লোন নেওয়ার আগে ও পরে এই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করলে আপনার বাজেট পরিকল্পনা অনেক সহজ হবে।

এই টুলের মাধ্যমে আপনি ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক প্রস্তুতিও নিতে পারবেন।

নতুন বাড়ি কেনা নিঃসন্দেহে জীবনের এক বড় সাফল্য। কিন্তু গৃহঋণ একটি দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব, যেটা ভুলে গেলে চলবে না। একটু পরিকল্পনা, একটু সচেতনতা ও নিয়মিত আর্থিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে আপনি সহজেই এই দায়িত্ব সামলে নিতে পারবেন।

সঠিকভাবে গৃহঋণ পরিচালনা করলে তা ভবিষ্যতের সুখের জায়গা হতে পারে—চাপের নয়। নতুন বাড়ির আনন্দ উপভোগ করুন, এবং আপনার অর্থিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখুন।