১০ আগস্ট, ২০২৫, রবিবার, সকাল ১১:২৫ (ইষ্ট ইন্ডিয়ান টাইম) – আলু, যাকে আমরা দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারণ শস্য হিসেবে দেখি, আসলে এটি বিশ্বের কৃষি অর্থনীতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, আলু উৎপাদনে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, এবং এই তথ্য জানলে অনেকেই অবাক হতে পারেন। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী আলু উৎপাদন প্রায় ৩৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৬৩ টন ছিল, এবং ভারতের অবদান এর মধ্যে ১৫.৭ শতাংশ। চীন, যিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলু উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে অবস্থান করেন (২৪.৪ শতাংশ), ভারতের পেছনে রয়েছে, যা আমাদের দেশের কৃষি ক্ষমতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
ভারতের আলু উৎপাদনে অসাধারণ অগ্রগতি
ভারতের কৃষি অঞ্চলে আলু একটি জনপ্রিয় ফসল হিসেবে গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে যেমন উত্তর প্রদেশ, পশ্চিম বঙ্গ, বিহার এবং গুজরাট। উত্তর প্রদেশ একা ভারতের আলু উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে, যেখানে হোয়ার এবং आगरा অঞ্চলগুলো প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। পশ্চিম বঙ্গেও হুগলি, বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদের কৃষকরা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন আলু উৎপাদন করে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অঞ্চলের কৃষকরা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, উন্নত জাতের বীজ এবং সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াচ্ছেন। ২০২৫ সালে এফএও-র দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা প্রকল্পের অংশ হিসেবে ভারত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে কৃষি যন্ত্রচালিতকরণ এবং উন্নত কৌশল গ্রহণ করেছে, যা আলু উৎপাদনে আরও উন্নতি আনতে পারে।
সরকারি প্রোগ্রাম যেমন রাষ্ট্রীয় কৃষি উন্নয়ন যোজনা (আরকেভিওয়াই) এবং কেন্দ্রীয় আলু গবেষণা ইনস্টিটিউট (সিপিআরআই) এর মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে, আলু ফসলের ফলন ২৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কৃষকদের আয় বাড়াতে সাহায্য করছে। তবে, এই উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জও বাড়ছে, যা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আলু উৎপাদনের পরিসংখ্যানে বিস্ময়কর তথ্য
এফএও-এর ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীন ছাড়াও উক্রেন (৫.৫৮ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (৫.২২ শতাংশ), রাশিয়া (৫.০৬ শতাংশ), জার্মানি (৩.০৩ শতাংশ) এবং বাংলাদেশ (২.৭২ শতাংশ) আলু উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। তবে ভারতের ১৫.৭ শতাংশ শেয়ার এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করে। আগ্রহের বিষয় হলো, ভারতের প্রতি ব্যক্তি আলু ভোজন (প্রায় ২৫ কিলোগ্রাম বার্ষিক) বিশ্ব গড় (৩৩ কিলোগ্রাম) এর থেকে কিছুটা কম, যা নির্দেশ করে যে ভারতের আলু বাজারে এখনো বাড়তি সম্ভাবনা রয়েছে। এই কম ভোজনের পেছনে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রথা, যেমন জৈন ধর্মাবলম্বীদের মূল শাক সেবন এড়িয়ে চলা, একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
ভারতের আলু উৎপাদনে এই সফলতা সত্ত্বেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে, সরকার ও বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তরফে শুরু করা ‘কৃষি ডিজিটালাইজেশন’ প্রকল্প কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সাহায্য করবে।
আলু শুধুমাত্র খাদ্য নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির একটি মেরুদণ্ড। ভারত যদি এই উৎপাদন ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে এবং রপ্তানি বাড়াতে পারে, তবে এটি দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। তাই, ভারতের আলু উৎপাদনে এই দ্বিতীয় স্থান শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনার একটি উজ্জ্বল প্রতীক।