শাপে বর! মৌসুমী বৃষ্টিতে খরিফ শস্যে রেকর্ড ভারতের

চলতি মৌসুমী বর্ষায় ভারতের ধানের বপন প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে (Kharif Yield)। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধানের বপন স্বাভাবিক বপন এলাকার ১০৯ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের…

Kharif Yield record

চলতি মৌসুমী বর্ষায় ভারতের ধানের বপন প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে (Kharif Yield)। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধানের বপন স্বাভাবিক বপন এলাকার ১০৯ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে খরিফ ফসলের বপন বেড়েছে ।

খরিফ ফসলের বপন গত বছরের তুলনায় ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে ধানের বপন ৭.৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া মোটা শস্য, আখ এবং ডাল জাতীয় ফসলেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। স্বাভাবিক বপন এলাকা ১০৯.৭ মিলিয়ন হেক্টরের মধ্যে ১০৭.৪ মিলিয়ন হেক্টর ইতিমধ্যে বপন করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ১০৩.৯ মিলিয়ন হেক্টর ছিল। এই অগ্রগতি ভারতের কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি শুভ সংকেত।

   

ভারতের কৃষি মৌসুমী বৃষ্টির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এ বছর মৌসুমী বৃষ্টি গত ২৭ মে কেরলে পৌঁছেছে, যা সাধারণত ১ জুনের তুলনায় পাঁচ দিন আগে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদী গড়ের (এলপিএ) ১০৬ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই বছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৬.৪ শতাংশ বেশি হয়েছে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাট, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে ভালো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে, ছত্তিশগড় এবং বিহারে বৃষ্টিপাত এলপিএ-র তুলনায় কম হয়েছে, যা কিছু এলাকায় বপনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। গত সপ্তাহে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি ছিল, যদিও এর ফলে কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

খরিফ ফসলের অগ্রগতিকৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ধান ছাড়াও অন্যান্য খরিফ ফসলের বপনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। ধানের বপন ৩৯৮.৫৯ লক্ষ হেক্টরে পৌঁছেছে, যা গত বছরের ৩৬২.৯২ লক্ষ হেক্টরের তুলনায় ৩৫.৬৭ লক্ষ হেক্টর বেশি। মোটা শস্যের বপন ১৮২.৩৪ লক্ষ হেক্টরে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯.১২ লক্ষ হেক্টর বেশি।

এর মধ্যে ভুট্টার বপন ৯.৮২ লক্ষ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাল জাতীয় ফসলের বপন ১০৯.৫২ লক্ষ হেক্টরে পৌঁছেছে, যা গত বছরের ১০৮.৩৯ লক্ষ হেক্টরের তুলনায় ১.১৪ লক্ষ হেক্টর বেশি। আখের বপনও ৫৭.৩১ লক্ষ হেক্টরে পৌঁছেছে। তবে তৈলবীজ এবং তুলার বপন যথাক্রমে ৬.৭৪ লক্ষ এবং ৩.২৪ লক্ষ হেক্টর কমেছে।

Advertisements

ভালো মৌসুমী বৃষ্টি এবং বর্ধিত বপন এলাকা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগস্টের শেষ এবং সেপ্টেম্বরে অব্যাহত বৃষ্টিপাত খরিফ ফসলের বৃদ্ধি এবং ফলনকে আরও সমর্থন করবে। এই বছর ধানের উৎপাদন রেকর্ড ১১৯.৯৩ মিলিয়ন টনে পৌঁছতে পারে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রথম অগ্রিম অনুমানে বলা হয়েছে।

যা গত বছরের তুলনায় ৫.৮৯ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু এলাকায় বন্যার প্রভাব খাদ্য সরবরাহের উপর স্বল্পমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাট, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশে বেশি বৃষ্টিপাত ধান এবং অন্যান্য খরিফ ফসলের বপনকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে, ছত্তিশগড় এবং বিহারে বৃষ্টির ঘাটতি কিছু এলাকায় বপনকে প্রভাবিত করেছে। বিহার ধানের ৬ শতাংশ এবং ডালের ১.৬ শতাংশ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি জাতীয় উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকার খরিফ ফসলের বপনকে সমর্থন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫-২৬ বিপণন মরসুমের জন্য ১৪টি খরিফ ফসলের ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (এমএসপি) বাড়ানো হয়েছে, যা কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা (পিএমএফবিওয়াই) ২০১৬ সাল থেকে ৪,৯৭২ লক্ষ হেক্টর এলাকা কভার করেছে, যা কৃষকদের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করছে।

মুসলিম ছাত্রদের হিন্দু উৎসবে বাধা! বাম রাজ্যে চাঞ্চল্য

চলতি মৌসুমে ধানের বপন স্বাভাবিক এলাকার ১০৯ শতাংশে পৌঁছানো ভারতের কৃষি খাতের জন্য একটি বড় সাফল্য। ভালো মৌসুমী বৃষ্টি এবং সরকারি উদ্যোগের সমর্থনে খরিফ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং কিছু রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতির কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এই অগ্রগতি খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।