ভারতের কৃষি খাতে সাম্প্রতিক জিএসটি (GST Reform) সংস্কারের ঘোষণা কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এই সংস্কারের ফলে কৃষি সংক্রান্ত পণ্য ও সরঞ্জামের উপর করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাবে এবং বাজারে কৃষিপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সংস্কারকে “জিএসটি ২.০” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে কৃষক, সাধারণ মানুষ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এমএসএমই) জন্য একটি উৎসবের উপহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জিএসটি কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন কর কাঠামো কার্যকর হবে, যা কৃষি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
জিএসটি কাউন্সিল, (GST Reform)কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের নেতৃত্বে, করের হারকে সরলীকরণের জন্য দুটি প্রধান স্তরে (৫% এবং ১৮%) সীমাবদ্ধ করেছে, পূর্ববর্তী ১২% এবং ২৮% স্তর বিলুপ্ত করে। এছাড়া, বিলাসবহুল এবং ক্ষতিকর পণ্যের জন্য ৪০% এর একটি নতুন করের হার চালু করা হয়েছে। কৃষি খাতের জন্য এই সংস্কারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ট্রাক্টর, থ্রেশার, হার্ভেস্টার, ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম, স্প্রিংকলার এবং কম্পোস্টিং (GST Reform)সরঞ্জামের মতো কৃষি যন্ত্রপাতির উপর জিএসটি হার ১২% বা ১৮% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে। এছাড়া, জৈব কীটনাশক এবং সারের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড এবং অ্যামোনিয়ার উপরও জিএসটি হার ৫%-এ নামিয়ে আনা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ (GST Reform) কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়তা করবে।দুগ্ধ খাতেও এই সংস্কার বড় প্রভাব ফেলবে। আল্ট্রা-হাই টেম্পারেচার (ইউএইচটি) দুধ এবং পনিরের মতো পণ্যগুলি এখন জিএসটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, যেখানে পূর্বে এগুলির উপর ৫% কর আরোপিত ছিল। মাখন, ঘি, দুগ্ধজাত পানীয় এবং আইসক্রিমের মতো পণ্যের উপর জিএসটি হার ১২% বা ১৮% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে।
এই কর হ্রাস দুগ্ধ খাতে চাহিদা বাড়াবে এবং ভারতের প্রায় ৮ কোটি দুগ্ধ খামারির পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। কৃষি মন্ত্রণালয় (GST Reform) জানিয়েছে যে, এই সংস্কার ১৯ লক্ষ কোটি টাকার দুগ্ধ শিল্পকে উৎসাহিত করবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।কৃষক সংগঠন এবং কৃষি সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকরা এই সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ভারতীয় কিষাণ সংঘের (GST Reform) মহাসচিব মোহিনী মোহন মিশ্র বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত কৃষকদের জন্য একটি স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ, তবে কৃষি ইনপুটের উপর জিএসটি সম্পূর্ণ মুক্ত করার আরও সুযোগ রয়েছে।” সিএনএইচ ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নরিন্দর মিত্তাল বলেন, “এই সংস্কার কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে ত্বরান্বিত করবে এবং কৃষকদের জন্য পরিচালন ব্যয় কমাবে।”
এই পদক্ষেপ(GST Reform) কৃষকদের আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারে উৎসাহিত করবে এবং ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর মতো পরিবেশগত সমস্যা কমাতে সহায়তা করবে।জিএসটি সংস্কার শুধুমাত্র কৃষকদের জন্যই নয়, সাধারণ গ্রাহকদের জন্যও সুবিধা নিয়ে এসেছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী যেমন হিমায়িত পরোটা, খাখরা এবং পনিরের উপর জিএসটি মুক্ত করা হয়েছে, যা গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াবে।
এই সংস্কার বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য আরও ভালো দাম নিশ্চিত করবে। এছাড়া, কৃষি পণ্যের আন্তঃরাজ্য পরিবহন সহজতর করার জন্য ই-ওয়ে বিল ব্যবস্থার প্রবর্তন বাজারে স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বাড়িয়েছে।এই সংস্কার ভারতের কৃষি খাতে স্থায়িত্ব এবং আধুনিকীকরণের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
ড্রিপ ইরিগেশন এবং জৈব কীটনাশকের মতো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উপর কর হ্রাস কৃষকদের টেকসই চাষ পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহিত করবে(GST Reform)। এছাড়া, কৃষি সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগ এবং কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য আরও শক্তিশালী হবে। জিএসটি সংস্কার কৃষকদের আর্থিক বোঝা কমিয়ে এবং বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে ভারতীয় কৃষি খাতকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।