নিউজ ডেস্ক, নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপি বারে বারে দাবি করে তাদের নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু মোদি বা বিজেপি নেতৃত্বের কথায় যে আদৌ কোনও সারবত্তা নেই বা স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, তাদের এই দাবি যে পুরোপুরি ভিত্তিহীন তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (Global Hunger Index 2021) ভারত ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরে আরও সাত ধাপ নেমে ১০১ নম্বর স্থান দখল করল। বিশ্বের ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এবার ১০১। এই ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয় যে, মোদি সরকার যতই দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলুক না কেন সেটা একেবারেই মিথ্যা প্রচার বলা যেতে পারে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতকে পিছনে ফেলেছে প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার এমনকী, নেপালও। প্রতিবেশী দেশ চিন রয়েছে তালিকার একেবারে শীর্ষে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক এই তালিকা প্রকাশ হয়েছে। গত কয়েক বছরের এই তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, মোদি সরকারের জমানায় ভারত ক্রমশই পিছু হাঁটছে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিবেশী প্রায় প্রতিটি দেশেই এই তালিকায় ক্রমশ উপরের দিকে উঠে আসছে। রাজনৈতিক মহলের স্পষ্ট কথা, মোদি সরকার যেভাবে প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ খরচ করে সেই অর্থ যদি দেশের মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য ব্যয় করত তাহলে ভারতকে আর এভাবে একেবারে পিছনে স্থান পেতে হত না। ৭ ধাপ নেমে যাওয়ার কারণে ভারতকে ‘ভয়াবহ’ দেশের তালিকায় রাখা হয়েছে এই সূচকে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ‘কনসার্ন ওয়ার্ল্ড- ওয়াইড’ নামে আয়ারল্যান্ডের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং জার্মানির ‘ওয়াল্ট হাঙ্গার হিলফ’ নামে আরও এক সংস্থা যৌথভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক এই তালিকা তৈরি করে। বিভিন্ন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, শিশুস্বাস্থ্য, সম্পদ বন্টনের মত বিষয়ের উপর নির্ভর করে এই তালিকা তৈরি হয়। পাশাপাশি শিশু মৃত্যুর হার, শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ও খতিয়ে দেখা হয়। ২০২০-র তুলনায় ভারত ৭ ধাপ নেমে যাওয়ায় তালিকা প্রস্তুতকারীরা ভারতকে অত্যন্ত ‘ভয়বহ’ দেশের তালিকায় রেখেছে। এই তালিকায় ভারতের পিছনে রয়েছে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ও আফগানিস্তান। যার মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, কঙ্গো, মোজাম্বিক, ইয়েমেন, সোমালিয়া প্রভৃতি।
২০২০ সালে অবশ্য এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল ১০৭টি দেশের উপর। সেবার ভারত ছিল ৯৪ নম্বরে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে এই তালিকায় ভারত প্রতিবছরই পিছনের দিকে হাঁটছে। এই তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট, মোদি সরকার যতই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে বলে দাবি করুক না কেন তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। বরং দেশ ক্রমশই পিছনে হাঁটছে। বিষয়টি স্পষ্ট হবে প্রতিবেশী দেশগুলির দিকে তাকালে। এই তালিকায় মায়ানমার রয়েছে ৭১ নম্বর স্থানে। নেপাল ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ৭৬ নম্বর স্থান দখল করেছে। পাকিস্তান রয়েছে ৯২ নম্বরে। প্রতিবেশী দেশগুলি এই তালিকায় ভারতের থেকে এগিয়ে থাকলেও ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবশ্য এই দেশগুলিকেও ভয়াবহ শ্রেণীতে রেখেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনাজনিত পরিস্থিতির ফলে ভারত-সহ অন্যান্য দেশগুলির নাগরিকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দ্বিগুণ বেড়েছে।